ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় ॥ হাজারো বাংলাদেশী আটক

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ জুলাই ২০১৭

মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় ॥ হাজারো বাংলাদেশী আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত এক হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী আটক করা হয়েছে। আটক কর্মীদের বিভিন্ন ‘ডিটেনশন সেন্টারে’ রাখা হচ্ছে। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কর্মীদের অবস্থার খোঁজখবর রাখছে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মস্থান মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ জানিয়েছেন, ৫শ’র মতো অবৈধ কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। তবে এ সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়নি। আমরা দূতাবাসের মাধ্যমে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দু-একদিনের মধ্যে আলোচনায় বসা হবে। মালয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে পরিচালিত অভিযানে এক হাজারের বেশি বিদেশী নাগরিককে আটক করা হয়। এদের অর্ধেকই বাংলাদেশী। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন দফতরের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলীর বরাত দিয়ে মালয়েশিয়া স্টার জানিয়েছে, দেশটির ১৫৫ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোট এক হাজার ৩৫ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে ৫১৫ বাংলাদেশী, ১৩৫ ইন্দোনেশীয়, ১০২ ফিলিপিনো, ৫০ থাই ও দুজন ভিয়েতনামী নাগরিক রয়েছেন। এদের কাছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের দেয়া ‘এনফোর্সমেন্ট কার্ড’ (ই-কার্ড) বা সাময়িক অবস্থানের অনুমতিপত্র পাওয়া যায়নি। আটকদের মধ্যে ১০১ নারী ও তিনটি শিশুও রয়েছে বলে মালয়েশীয় ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য। মালয়েশিয়ার আইন অমান্য করে অবৈধ কর্মীদের কাজে রাখায় ১৬ চাকরিদাতাকেও আটক করেছে দেশটির পুলিশ। এদিকে, আটকরা ই-কার্ডের জন্য আবেদন না করার বিভিন্ন ধরনের কারণ দেখিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তারা আবেদনের সময়সীমা জানতেন না। আবার কেউ বলেছেন, ওই সময়সীমা বাড়ানো হবে বলে চাকরিদাতারা তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বৈধ কাগজপত্রহীন কর্মীদের বৈধভাবে পুনঃনিয়োগের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত চার মাস ধরে ই-কার্ডের আবেদন নেয়া হয়। ই-কার্ডের সর্বশেষ দিন ছিল ৩০ জুন। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন দফতরের তথ্য অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৬ হাজার ৯৫৭ কোম্পানির মোট এক লাখ ৫৫ হাজার ৬৮০ কর্মী ই-কার্ডের আবেদন করেন। ই-কার্ডের জন্য যারা আবেদন করেছিল তারা ১৫ দেশের নাগরিক। দেশটিতে বাংলাদেশী এক লাখ ৫৫ হাজার ৬৮০ অবৈধ কর্মী ই-কার্ডের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার ৭৪৬ জনকে ই-কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। তবে দেশটির কর্তৃপক্ষ মনে করছে এ সংখ্যা তাদের প্রত্যাশার মাত্র ২৩ শতাংশ। বাংলাদেশের পরের অবস্থান হচ্ছেÑ ইন্দোনেশিয়া ২৬ হাজার ৭৬৪ ও মিয়ানমারের ১১ হাজার ৮২৫ নাগরিক ই-কার্ড পেয়েছেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, কত সংখ্যক কর্মী গ্রেফতার হয়েছে তা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ আমাদের অফিসিয়ালি জানায়নি। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনের কারণে আমরাও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিতে পারছি না। তবে মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ কিন্ত বন্ধ করেনি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধকরণ কর্মসূচী বহাল রয়েছে। তবে যারা ছাত্র, ট্যুরিস্ট ও বিভিন্নভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছে তাদের সংখ্যা জানার জন্য ই-কার্ডের ঘোষণা দেয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এ সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। যারা এর আওতায় আসতে পারেনি তারাই আটক হচ্ছে বলে শুনেছি। যারা ই-কার্ডের আওতায় এসেছে তাদের ‘রিহায়ারিং’ কর্মসূচীর মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ পাচ্ছেন। আমরা গত ৪ মাসে ৮শ’ কোম্পানি পরিদর্শন করে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখেছি তারা বাংলাদেশী কর্মীদের কাজে রাখতে চান। যাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের আবার কোম্পানির মালিকরা রিহায়ারিংয়ের মধ্যে চাকরিতে নিচ্ছেন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আমরা ই-কার্ড নেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালিয়েছি। কিন্তু অনেকেই করি করছি এই করে বাদ পড়ে গেছেন। কেউ কেউ আবার দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ই-কার্ড নিতে পারেননি। আমরা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি-যাতে আবারও এ সুযোগ পাওয়া যায়। যাদের কাছে বৈধ পাসপোর্ট বা কাজের অনুমতি নেই, ওই ই-কার্ড হাতে থাকলে তারা ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় থেকে কাজ করতে পারবেন। ওই সময়ের মধ্যে তাদের নিজ নিজ দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট ও ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে নতুন করে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। তা না হলে নির্ধারিত সময়ের পর তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, মালয়েশিয়ায় গত ৪ থেকে ৫ বছরে বাংলাদেশের ৮ লাখ কর্মীকে বৈধতা দিয়েছে। এবার দেশটির কর্তৃপক্ষ আরও কিছু কর্মীকে বৈধতা দেয়ার জন্য ই-কার্ড ব্যবস্থা চালু করে। এ কার্ডধারীরা এক বছর বিনা বাধায় দেশটিতে কাজ করার সুযোগ পাবেন। তারপর তারা বৈধ কর্মী হিসেবে গন্য হবে। যারা ছাত্র ভিসা ও ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে কাজ করছেনÑ তাদের তো সমস্যা হবেই। মুশকিল হচ্ছে মালয়েশিয়ায় বৈধ-অবৈধ কর্মীর চাহিদা ও যোগান দুটোই বিদ্ধমান। মালয়েশিয়ার এমন কঠোর অবস্থানকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি। কারণ মাঝে মাঝে কঠোর না হলে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর দালাল চক্র আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হবেন। আমি চাই না, গরিব মানুষের সর্বনাশ করে কেউ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হোক। মালয়েশিয়ায় যেটা এখন চলছে সেটা চললে বৈধ কর্মীদের জন্য সুবিধা হবে। আর ওই দেশে কয়েক হাজার বাংলাদেশী দালাল যারা আদম কেনাবেচা করে, তারা কিছু শিক্ষা পাবে। তারা মানুষ কেনাবেচা করেই কোটিপতি বনে গেছেন। এই ব্যবস্থায় মালয়েশিয়ায় কারখানার মালিকগুলোও জবাবদিহির আওতায় চলে আসবেন। কেউ চাইলেই কম বেতন দিয়ে কাজ করাতে পারবেন না। আর বাংলাদেশী দালালরাও কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার সুযোগ পাবেন না।
×