ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত ৫ পলাতক জঙ্গী শীঘ্রই ধরা পড়বে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২ জুলাই ২০১৭

হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত ৫ পলাতক জঙ্গী শীঘ্রই ধরা পড়বে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলায় জড়িত ভয়ঙ্কর জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির মোস্ট ওয়ান্টেড পলাতক দুর্ধর্ষ ও আত্মঘাতী পাঁচ জঙ্গী শীঘ্রই ধরা পড়বে। এই পাঁচ জঙ্গীকে গ্রেফতার করাই এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টার্গেট। তাদের জন্যই আটকে আছে রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজানে হামলা তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের চার্জশীট। এই পাঁচ জঙ্গীকে গ্রেফতারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। পলাতক নব্য জেএমবির প্রধান আইয়ুব বাচ্চুকে খুঁজতে গিয়েই সন্ধান পাওয়া যায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার জঙ্গী আস্তানাটির, যেখান থেকে আটক করা হয়েছে সংগঠনটির প্রধান আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী তিথি, সংগঠনের সেকেন্ড ইন কমান্ড আরমান আলীর স্ত্রী সুমাইয়া এবং ভেড়ামারার দৌলতপুর গ্রামের রাজিকুল ওরফে রাশেদ ওরফে তালহার স্ত্রী টলী বেগম। গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর সর্বশেষ কুষ্টিয়ায় জঙ্গী আস্তানায় অভিযান পরিচালনা পর্যন্ত গত এক বছরে অন্তত ২১ জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে অন্তত ৭৬ জঙ্গী নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই আত্মঘাতী ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। গুলশান জঙ্গী হামলার পর একের পর এক অভিযানে নব্য জেএমবিসহ জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম শনিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, গুলশান হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় জড়িত পলাতক পাঁচ জঙ্গীকে শীঘ্রই গ্রেফতার হবে বলে আশা রাখি। হলি আর্টিজান হামলার সঙ্গে পলাতক জঙ্গীদের কানেকশন ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানা গেছে। এখন তাদের সম্ভাব্য আস্তানা ও অবস্থানের তথ্য নিশ্চিত হতে পারলেই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। আরও কম সময়ের মধ্যে পলাতক জঙ্গীরা ধরা পড়তে পারে বলে আশা করেন তিনি। তিনি বলেন, নব্য জেএমবি নেতা আইয়ুব বাচ্চুকে ধরতে কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের একটি টিম নাটোর যাওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে কুষ্টিয়ার তথ্য পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রীসহ আরও কয়েকজনকে পাওয়া গেছে। এটা লাকিলি পাওয়া গেছে। কাজেই যে কোন সময় পলাতক সোহেল মাহফুজ, বাশারুল ওরফে চকলেট, রাশেদ, হাদিসুর রহমান সাগর ও ছোট মিজানও গ্রেফতার হতে পারে। তদন্ত সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলা মামলায় তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে আরও পাঁচ জঙ্গীকে খুঁজছে তারা। এদের মধ্যে অন্তত তিনজনকে গ্রেফতার করতে পারলেও তদন্ত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। গুলশান হামলার পরিকল্পনা ও এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পলাতক ওই পাঁচ জঙ্গীর বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। মামলার তদন্ত শেষ করতে হলে ওই পাঁচ জঙ্গীর অন্তত তিনজনকে গ্রেফতার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। যে পাঁচ জঙ্গী এখন মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে বিবেচিত তারা হলোÑ সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ ও বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, হাদিসুর রহমান সাগর ও ছোট মিজান। তবে হাতকাটা মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ ও বাশারুজ্জামান চকলেটকে পাওয়া গেলে গুলশানের হামলার চার্জশীট প্রদানের বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হতো। হলি আর্টিজানে হামলায় সরাসরি অংশ নেয়া জঙ্গীরা সবাই মারা গেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল অন্তত আরও দেড় ডজন জঙ্গী। যারা নেপথ্যে থেকে বিভিন্নভাবে ভূমিকা পালন করেছে। এদের মধ্যে ৮ জন র‌্যাব ও পুলিশের জঙ্গীবিরোধী বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়, হামলায় জড়িত থাকায় গ্রেফতার রয়েছে আরও ৪, যাদের মধ্যে ৩ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। বাকি ৫ জনকে গ্রেফতার করা গেলেই এই হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণকারীদের নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। গ্রেফতার এগিয়ে থাকা এসব জঙ্গীর মধ্যে যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে তারাও গুরুত্বপূর্ণ আসামি বলে মনে করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার ঘটনায় গত এক বছরে তদন্তে যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে জঙ্গী হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে নাম পাওয়া গেছে ২২ জনের। এর মধ্যে ঘটনার রাতেই ‘থান্ডারবোল্ট’ অভিযানে পাঁচ জন নিহত হয়। গত এক বছরের বিভিন্ন সময়ে জঙ্গী বিরোধী অভিযানে নিহত হয় আরও ৮ জন যাদের মধ্যে সংগঠনটির নেতৃত্বদানকারী তামিম চৌধুরী, মেজর জাহিদ, নূরুল ইসলাম মারজান, সরোয়ার জাহান মানিক, আবু রায়হান তারেক, ফরিদুল ইসলাম আকাশ, তানভীর কাদরী ও আবদুল্লাহ। গুলশান হামলা পরিচালনার সময়ই কিছু ভিকটিমের মোবাইল নিয়ে ছবি তুলে তামিম চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম মারজানের কাছে পাঠায় জঙ্গীরা। তামিম ও মারজান দুজনই তখন শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় ছিল। এরপর সেই ছবিগুলো তামিম ও মারজান কার কাছে, কোথায় পাঠিয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য তদন্ত চলছে। জঙ্গীরা হামলা করতে যাওয়ার সময় কোন মোবাইল বা কোন ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে না গিয়ে তারা ভিকটিমদের মোবাইল বা আইপ্যাড ব্যবহার করেছে। তামিম চৌধুরী, প্রশিক্ষক জাহিদ, তানভীর কাদরী, নুরুল ইসলাম মারজানসহ অন্যদের জীবিত গ্রেফতার করতে না পারায় জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বাইরে বা ভেতরে বা অন্য কারও সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল কি না সে বিষয়টিও তদন্তনাধীন। তবে গ্রেফতাার হওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন নিজেদের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে যাতে পলাতক পাঁচজনের নাম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আর দুই থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করতে পারলে তদন্ত শেষ করা যাবে। তদন্ত সূত্র জানায়, গত বছরের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা গুলশান টার্গেট করে হলি আর্টিজানে হামলা চালায় নব্য জেএমবি। এই জঙ্গী হামলায় দেশী-বিদেশী ২০ জন এবং দুই পুলিশ নিহত হন। নিহত বিদেশীদের মধ্যে ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানী ও একজন ভারতের। বাকি তিন বাংলাদেশী। প্রায় ১২ ঘণ্টার ওই জিম্মি সঙ্কট শেষ হয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ দিয়ে। তারপর থেকে গত এক বছরে সারাদেশে জঙ্গী বিরোধী অভিযান শুরু হয়, পতন ঘটে জঙ্গীদের বড় জঙ্গী আস্তানাগুলোর।
×