ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনসংহতি সমিতির দুই গ্রুপ ও ইউপিডিএফ গড়ে তুলছে অস্ত্রভান্ডার

কথিত জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতেই ওরা অশান্ত করছে পাহাড়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১ জুলাই ২০১৭

কথিত জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতেই ওরা অশান্ত করছে পাহাড়

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জুমল্যান্ড ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার কথিত দাবি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সামরিক উইং বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও প্রকারান্তরে অঘোষিতভাবে এদের একটি অংশের কাছে ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়ে গেছে। এর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে দফায় দফায় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু নতুন নতুন কায়দায় এরা অনুরূপ অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে চলেছে। অধিকাংশ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ আসছে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী একাধিক গ্রুপের কাছ থেকে। উল্লেখ্য, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে যে রক্তের হোলি খেলা চলেছে তাতে প্রাণহানির সংখ্যা অগণন। একাধিক পয়েন্টে বড় বড় হত্যাযজ্ঞ ও নিধন চলেছে। পাহাড়ী-বাঙালী এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরও অকাতরে প্রাণ ঝরেছে। বর্তমানে একদিকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া যখন বিভিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে, সেক্ষেত্রে পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানির অবকাশ কোথায় তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার। শান্তিচুক্তির আগে পাহাড়জুড়ে ছিল জনসংহতি সমিতির সামরিক উইং শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের রক্তের হোলি খেলা। শান্তিচুক্তির পর জনসংহতি সমিতির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে শন্তু লারমা খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তার বাহিনীর বিপুল সদস্যদের নিয়ে অস্ত্রসমেত আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু একটি অংশ এর বিরোধিতায় ছিল। পরবর্তীতে তারা শন্তু লারমাকে বেইমান আখ্যায়িত করে প্রতিষ্ঠা করে ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট)। এ গ্রুপের হাতে রয়ে যায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। সরকার পক্ষে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী একে একে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রধান সমস্যাটি রয়ে গেছে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ। এ বিরোধ নিয়ে সরকার নিয়োজিত একটি কমিশন তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। পাহাড়ী-বাঙালীদের মাঝে ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন। পাহাড়ীরা মনে করেন, পাহাড়জুড়ে ভূমির মালিকানা পাহাড়ীদের। অথচ এই পাহাড়ে যুগের পর যুগ ধরে বাস করে আসা বাঙালীদেরও ভূমির মালিকানা রয়েছে এবং ৮০-র দশকের পর থেকে নতুন করে বাঙালীদের (স্যাটেলার) বসতি গড়ে তোলার পর তাদের কবুলিয়ত (ভূমির মালিকানা) প্রদান করা হয়। বর্তমানে বাঙালীদের সেই ভূমির মালিকানা পাহাড়ীরা মানতে নারাজ। বিশেষ করে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে এ ধরনের সমস্যা ব্যাপক। শান্তিচুক্তির শর্তাদি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনসংহতির মধ্যেই মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। জনসংহতি সমিতি ভেঙ্গে সৃষ্টি হয় নতুন গ্রুপ। যার নাম জনসংহতি সমিতি সংস্কার। মূল সমিতি সন্তুর নামেই পরিচিতি পেয়ে আসছে। এর পাশাপাশি ইউপিডিএফের বিরোধিতা তো রয়েছেই। শান্তিচুক্তির পর থেকে পাহাড়ে বিভিন্ন সময়ে হত্যা, লুণ্ঠন, জ্বালাও পোড়াও, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির পরিস্থিতি রয়েছে নজিরবিহীন অবস্থায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভোরে রাঙ্গামাটির লংগদুতে উদ্ধার হয়েছে ভারি অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। সেনা নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের এ আস্তানাটিতে অভিযান চালানোর পর একে-৪৭ রাইফেল, সামরিক পোশাকসহ গোলাবারুদ উদ্ধার হওয়ার পর নতুন করে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল ইউপিডিএফ সদস্যদের। অপরদিকে, জনসংহতি সমিতির সংস্কার গ্রুপ এমনকি সন্তু গ্রুপের সদস্যদেরও রয়েছে অস্ত্রের ভা-ার। এসব অস্ত্র দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছ থেকে সংগৃহীত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর একটি অংশ সমতলের সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রিও হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা এবং সিভিল প্রশাসনের কাছে এদের তৎপরতার নানা খবর থাকলেও গভীর অরণ্যাঞ্চল হওয়ায় উদ্ধার অভিযান প্রতিনিয়ত পরিচালনা করা একটি কঠিন ব্যাপার। তবে বিভিন্ন সূত্রে যখনই খবর মিলছে তখনই অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবারের লংগদুর এ অভিযানটি এ পর্যন্ত সর্বশেষ। এতে সফলতা এসেছে। কিন্তু এ ধরনের গোপন আস্তানার সংখ্যা অসংখ্য। বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, পাহাড়ের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। কিন্তু তাদের নাম ব্যবহার করে জনসংহতি সমিতি (সন্তু), জনসংহতি সমিতি (সংস্কার) ও ইউপিডিএফ এবং এদের সমর্থিত অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলো যে দাবি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছে তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী। এরা চায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুমল্যান্ড ঘোষণা করতে হবে। দিতে হবে স্বায়ত্তশাসন। নিজেদের দাবি করে জুম্মজাতি। অথচ দেশের এক-দশমাংশ এ এলাকাটি বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ নয়। সমতলের সঙ্গে সংযুক্ত অঞ্চল। সেই ব্রিটিশ আমলে ঘোষিত সিএইচটি (চিটাগং হিল ট্যাক্টস)। এ অঞ্চলে বসতির শুরু থেকেই বাঙালীরাও বসতি গড়ে তুলেছে। তবে সংখ্যাধিক্যে পাহাড়ীরা ছিল বেশি। বর্তমানে বাঙালীদের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু এ বাড়তি প্রবণতা পাহাড়ের এসব সংগঠনের কুচক্রী মহলের সহ্য হচ্ছে না। পাহাড়ীরা দেশের সমতল এলাকায় সকল সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে কিছুটা বাড়তিও পেয়ে থাকে। তাদের জন্য রয়েছে আলাদা কোটা। অথচ বাঙালীদের জন্য পাহাড়ে কোটা যেমন নেই, তেমনি অধিকারটুকুও পাহাড়ী এসব সংগঠনের নেতারা দিতে নারাজ। সঙ্গত কারণে বাঙালী-পাহাড়ীদের মাঝে সদা সর্বদা একটি বিভক্তির রেখা জন্ম নিয়ে আছে। এ রেখা বিভাজনে সরকার যতটা আন্তরিক, পক্ষান্তরে জেএসএস ও ইউপিডিএফ ততটা বিপরীত। এসব নিয়ে সংঘাত ও অস্ত্রের ঝনঝনানি কেবলই বাড়ছে। বাঙালীদের ওপর পাহাড়ীদের আক্রমণ হলে, বাঙালীরাও পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে। এতে সাধারণ বাঙালী-পাহাড়ীদের প্রাণহানি ঘটছে। সহায় সম্পদ লুণ্ঠন হচ্ছে। বাড়িঘর জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ অশান্তির ডালপালা কেবলই বিস্তৃতি লাভ করছে। যা ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের অশনি সঙ্কেত হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ব্যাপকভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারী কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার পর পাহাড়ে যে উন্নতি এসেছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এরপরও এদের নতুন দাবি জুম্মল্যান্ড ও স্বায়ত্তশাসন। বাঙালীদের দাবি, পাহাড়ীরা নির্বিঘেœ বাঙালী নিধন চিন্তা ভাবনায় লিপ্ত। পক্ষান্তরে পাহাড়ীদের কেশাঘ্রও স্পর্শ করা যাবে না। এ প্রক্রিয়া কখনও মেনে নেয়া যায় না। অপরদিকে, পাহাড়ীরা মনে করে, পার্বত্যাঞ্চলে সবকিছু তাদের মালিকানায় থাকবে। ভাবখানা এমন যে, পার্বত্যাঞ্চলের মালিকানা এককভাবে পাহাড়ীদেরই। কিন্তু দেশের সংবিধান ও আইন তা বলে না। অথচ তারা তা মানতে নারাজ। জনসংহতি সমিতি দুই গ্রুপে বিভক্ত হলেও নীতি নৈতিকতা ও দাবি নিয়ে একই অবস্থানে রয়েছে। যৌথবাহিনীর অবস্থান সুদৃঢ় না থাকলে বাঙালীদের বসবাস কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তাও বড় একটি প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। পাহাড়ের বিভিন্ন সূত্রে তথ্য রয়েছে, যৌথবাহিনী যখনই অভিযান চালায় তখনই তারা সীমান্ত পেরিয়ে অবস্থান নেয়। অভিযান শেষে নিরাপত্তা বাহিনী ফিরে গেলে পুনরায় স্ব স্ব অবস্থানে ফিরে আসে। বর্তমানে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হচ্ছে, ভারি অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলার বিষয়টি। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন উত্তরণ’ অব্যাহত রয়েছে। এ অপারেশনের মূল অর্থই হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়ন সাধন। যে পাহাড়ের দূরবর্তী অঞ্চলে অতীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না সেখানে এখন সেই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুত সংযোগও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এক সময় পাহাড়জুড়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার তা তুলে দেয়ার পর পার্বত্যাঞ্চল জুড়ে এখন আধুনিক এ ব্যবস্থার সুবিধাও তারা ভোগ করছে। সরকার প্রদত্ত সুবিধার আলোকে এদের একটি গোষ্ঠী বিভিন্ন নামে অন লাইন বার্তা সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব বার্তা সংস্থায় তারা কেবলই চালাচ্ছে অপপ্রচার, যা বিদেশে নানাভাবে দেশের ভাবমূর্তিকে ভুলুণ্ঠিত করছে। এরপরও সরকার পাহাড়ের উন্নয়নে আন্তরিক থাকায় সাধারণ মানুষ সমতলের মতো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। এ সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহারও করছে পাহাড়ী সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলো। জনসংহতি সমিতির দুই গ্রুপ ও ইউপিডিএফ নেপথ্যে এদের মূল ইন্ধন যোগানদাতা বলেই অভিযোগ রয়েছে। যদিও জনসংহতির দুই গ্রুপ এবং ইউপিডিএফের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে, তার নেপথ্যে রয়েছে একক আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। আর চাঁদাবাজির অর্থের ভাগাভাগির বিষয়টি তো রয়েছেই। চাঁদাবাজি ও একক আধিপত্য বিস্তারে এখন প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবহার। এসব বিষয় নিয়ে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ অর্থাৎ বাঙালী ও পাহাড়ীরা সমভাবে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। রাঙ্গামাটি জেলার অধীনে দশ উপজেলা এবং খাগড়াছড়ি জেলার অধীনে ৯ উপজেলা এবং বান্দরবানের অধীনে রয়েছে ৭টি উপজেলা। এসব উপজেলায় প্রতিনিয়ত উন্নয়ন কর্মকা- চালাচ্ছে সরকার। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নতুন নতুন সড়ক নির্মাণসহ উপজাতীয়দের সুবিধার্থে, শিক্ষা গ্রহণসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নানা কর্মকা- চালু রয়েছে। আরও রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নানা সেবামূলক কর্মকা-। কিন্তু স্বল্পসংখ্যক অস্ত্রধারী গ্রুপের কাছে সরকারী উন্নয়ন কর্মকা-ের অগ্রযাত্রা প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি পাহাড়জুড়ে ধস ও ঢলে যে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে সরকার বিভিন্নভাবে দ্রুত তৎপরতা শুরু করেছে। পক্ষান্তরে, এ মহাদুর্যোগে পাহাড়ের এসব সংগঠনগুলোর ইতিবাচক কোন কর্মকা- পরিলক্ষিত হয়নি। ইউপিডিএফ তিনদিনের শোক পালন করেছে কাগজে কলমে। আর জনসংহতি সমিতি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আশপাশেও দাঁড়ায়নি। এ মহাদুর্যোগ উত্তরণে সেনাবাহিনীর ৫টি তরতাজা প্রাণ ঝরে গেছে। আর সাধারণ মানুষের প্রাণহানিও কম ঘটেনি। এর মধ্যে বাঙালীর পাশাপাশি পাহাড়ী নারী-পুরুষ ও শিশুও রয়েছে। পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে সরকারের তৎপরতার যেখানে কমতি নেই, সেখানে পাহাড়ী সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। যা দুঃখজনক ও বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হচ্ছে। পাহাড়ে বাঙালীদের অবস্থান বর্তমানে কোথাও কোথাও সমান অবস্থায় পৌঁছলেও বাঙালীদের কাছে অস্ত্রের ব্যবহার নেই বললেই চলে। সঙ্গত কারণে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা কেন অস্ত্র সংগ্রহ করে চলেছে। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সর্বত্র যা মিলছে তা হচ্ছে, প্রথমত- নিজেদের আধিপত্য বিস্তার, দ্বিতীয়ত- চাঁদাবাজি এবং তৃতীয়ত- অর্থাৎ সর্বশেষ উদ্দেশ্য হচ্ছে জুমল্যান্ড ও স্বায়ত্তশাসনের কথিত অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে সোচ্চার থাকা। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসীদের এ সকল অবস্থান গুঁড়িয়ে দেয়া নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বড় কোন বিষয় নয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ এবং সহায় সম্পদের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকায় অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে অভিযান চালাতে হয়। একজন সাধারণ মানুষও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্য নিয়েই অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা রয়েছে। জেএসএসের বিরোধ নিয়ে দুই গ্রুপের বৈঠক ও সমঝোতা প্রশ্নে তাদের পক্ষ থেকে সর্বশেষ একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে জেএসএস সন্তু গ্রুপ জাতি ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে ইউপিডিএফের সঙ্গে বৈঠক ও সমঝোতা করেনি। সংগঠনের সঙ্কট কাটানোর জন্য অথবা জনমতের চাপে লোক দেখানোর জন্যই তারা ইউপিডিএফের সঙ্গে বৈঠকের খেলা খেলেছে। তাদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউপিডিএফ, জেএসএস বৈঠকের পর্যালোচনায় দেখা যায়, যখনই ইউপিডিএফ বৈঠক চেয়েছে, অর্থাৎ যখনই জেএসএস বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে তখনই ইউপিডিএফ রাজি হয়েছে। পক্ষান্তরে, ইউপিডিএফ যতবার বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে জেএসএস ততবারই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এছাড়া পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে সমঝোতার প্রশ্নে ইউপিডিএফের আন্তরিকতা, সদিচ্ছা, উদারতা ও সংযমের বিষয়টি লক্ষণীয়। তবে জেএসএস সন্তু গ্রুপের দ্বিমুখী নীতি, ভ-ামি, অপতৎপরতা ও গণবিরোধী চরিত্রও পরিষ্কার। সঙ্গত কারণে এটাও পরিষ্কার যে, ইউপিডিএফের সঙ্গে ইতোপূর্বে যত আলোচনা বৈঠক ও সমঝোতা হয়েছে তার নেপথ্যে রয়েছে ইউপিডিএফ নির্মূল কর্মসূচী। এ কর্মসূচীর পরিবর্তন যেমন হয়নি, বাতিলও হয়নি- এ দাবি ইউপিডিএফপন্থীদের। যারা নিজেদের পাহাড়ের একটি রাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করে থাকে।
×