ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড় ধস

পর্যটকশূন্য পার্বত্য তিন জেলা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৩০ জুন ২০১৭

পর্যটকশূন্য পার্বত্য তিন জেলা

মাকসুদ আহমদ চট্টগ্রাম অফিস ॥ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তিন পার্বত্য জেলাকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের আয় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ নির্ভর করলেও এবার তা অনেকাংশে কমে আসবে। গত ১২ ও ১৩ জুনে অতিবৃষ্টির কারণে এই তিন পার্বত্য অঞ্চলে মাটি ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে জনজীবন। সেই সঙ্গে পাহাড়ের উঁচু-নিচুতে বয়ে চলা নখের পিঠের মতো রাস্তা ধসে পড়ার ঘটনা পর্যটকদের শঙ্কিত করে তুলেছে। ফলে রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ পর্যটক শূন্য বান্দরবানের নীলগিরি-নীলাচলে পর্যটক হ্রাস আর খাগড়াছড়ির আলুটিলা সুড়ঙ্গে আর সাজেকে হাতেগোনা পর্যটকে ঈদ কেটেছে। শুধু বাইরের পর্যটকই নয়, স্থানীয় পর্যটকরাও ভিড়ছে না রাঙ্গামাটির আতঙ্কে। ঈদ উপলক্ষে টানা ৫ দিনের বন্ধে এই তিন পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত হোটেল, মোটেল ও কটেজে এবার ছিল পর্যটকের হাহাকার। পাহাড়, লেক, ঝর্ণা আর অরণ্য ঘিরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই তিন অঞ্চল শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বলে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। এমনকি পর্যটক শূন্যের কোন রেকর্ডও নেই। কিন্তু এবার পাহাড়ের মাটি আর রাস্তা ধসের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় পর্যটক নির্ভর শ্রেণী-পেশার মানুষগুলো পথে বসতে শুরু করেছে। এখনও আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে হাজারো পরিবার। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী রাঙ্গামাটির উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্ব মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি। দেশের এক মাত্র রিক্সাবিহীন শহর রাঙ্গামাটি। হ্রদ পরিবেষ্টিত পর্যটন শহর এলাকা হওয়ায় পর্যটকদের চাপ থাকত সবচেয়ে বেশি রাঙ্গামাটিতে। এই শহর ঘুরলেই পাওয়া যায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, চাক্, পাংখোয়া, লুসাই, সুজেসাঁওতাল, রাখাইন সর্বোপরি বাঙালীসহ ১৪টি জনগোষ্ঠী ও আঞ্চলিক ভাষার মানুষ। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় জেলা। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টির পূর্বের নাম ছিল কার্পাস মহল। উঁচু-নিচু পর্বত শ্রেণী পরিবেষ্টিত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে চলা মানুষগুলো সারাবছর অপেক্ষার প্রহর গোনেন কোন উৎসবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদী ছুটির অপেক্ষায়। রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ, কাপ্তাইয়ের পানি বিদ্যুত কেন্দ্র, কাপ্তাই- রাঙ্গামাটি লেক, ৩শ’ বছরের পুরনো চাপালিশ গাছ, শুভলং ঝরনা, কাট্টলী বাজার, পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট, মাইনী, মারিষ্যা ও লংগদুসহ রাঙ্গামাটির বেশকিছু পাহাড়ী উপত্যকা ঘিরে পর্যটকদের ভিড় থাকার কথা সর্বত্র। কিন্তু পর্যটকে ঠাসা সেই পরিবেশ এবার আর দেখা যায়নি। পর্যটকরা রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে নিজেদের আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ছাড়াও রাত যাপনের জন্য আগেভাগে বুকিং দিতে পারেন সার্কিট হাউস, বন বিভাগের রেস্ট হাউস, এলজিইডি রেস্ট হাউস, উসাই রেস্ট হাউস, জেলা পরিষদের রেস্ট হাউস, কৃষি বিভাগের রেস্ট হাউস, বিদ্যুত বিভাগের রেস্ট হাউস, বিসিকের রেস্ট হাউস ও পর্যটন কর্পোরেশনের পর্যটন রেস্ট হাউস সরকারী বা বেসরকারী ও এনজিও পরিচালনা করছে। এছাড়াও একক মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে- হোটেল সুফিয়া, গ্রীন ক্যাসেল, মোটেল জজ, মাউন্টেন ভিউ, ডিগনিটি, শাপলা , ড্রিমল্যান্ড ও নিডস হিল ভিউতে আরামদায়ক রাত্রী যাপন করেন পর্যটকরা। রাঙ্গামাটির পশ্চিমে প্রায় সাড়ে ১৫শ’ ফুট উচ্চতার ফুরমোন পর্বতমালাকে ঘিরে যেমন পর্যটকদের অবস্থান রয়েছে তেমনি বেশকিছু জলপ্রপাতসমৃদ্ধ মাইনী উপত্যকার ২ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতার ভূয়াছড়ি রেঞ্জ পর্বতমালা । এ জেলার শিলা স্তরগুলো পাললিক শিলার পাঁচটি ফরমেশনে ভাগ করা ভুবন, বোকাবিল, টিপাম বেলে পাথর, গিরুজানক্লে, ডুপিটিলা ও এ্যালুভিয়াম। এদিকে, খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে আলুটিলা পাহাড়ের রহস্যময় সেই সুড়ঙ্গ। নুনছড়ি মৌজায় রয়েছে দেবতা পুকুর ও জেলা পরিষদ পার্কে থাকা ঝুলন্ত ব্রিজ এবং রিছাং ঝর্ণা। বর্তমান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস যা পরে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর প্রথম হেডকোয়ার্টার ছিল খাগড়াছড়িতে। সেখানে রয়েছে রামগড় লেক, পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের খামার, শান্তিপুর অরণ্য কুটির, পানছড়ি ও দীঘিনালার সংরক্ষিত বনাঞ্চল যা ভগবান টিলা নামে পরিচিত। রাঙ্গামাটির মতো লেক না থাকলেও রয়েছে চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নদীর শুরু খাগড়াছড়ি থেকে। দেশের সর্ববৃহৎ রাবার বাগান রয়েছে এই পর্যটন এলাকায়। যার আয়তন প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার একর। মানিকছড়িতে রয়েছে সিমুতাং গ্যাসফিল্ড। খাগড়াছড়িতে পর্যটকরা সরকারী ডাকবাংলো, নিরিবিলি, শৈল সূবর্ণা, গাইরিং ও ফোরস্টার হোটেলে অবস্থান নেয়। অপরদিকে, বান্দারবান জেলার নামকরণের ইতিহাস অনুযায়ী এই এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর। আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছডার পাড়ে পাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত।
×