ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চাপ এখন ফুটপাথ, হকার্স মার্কেটে

চট্টগ্রামে শেষ সময়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৪ জুন ২০১৭

চট্টগ্রামে শেষ সময়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সামনে ঈদ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এখন চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটা। চাকরিজীবীদের অধিকাংশ শহর ছেড়ে যাওয়ায় নামী শপিংমলগুলোতে ভিড় কমে এসেছে। এখন বিকিকিনির হাঁকডাক মূলত ফুটপাথ, হকার্স মার্কেট এবং নিম্নবিত্তদের বিপণী কেন্দ্রগুলোতে। তাও এবার ফুটপাতে বেচাকেনায় ছন্দপতন ঘটিয়েছে একটানা এবং থেমে থেমে বৃষ্টি। তারপরও ঈদে প্রিয়জনের জন্য কিছু একটা চাই-ই। ফলে সাধ্যমত কিনে নিচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। চট্টগ্রাম নগরীর নামী-দামী এবং মাঝারি মানের অসংখ্য বিপণী কেন্দ্রে প্রায় একমাস ধরে চলেছে বিকিকিনির উৎসব। প্রথমে হুমড়ি খেয়ে পড়া ভিড় ছিল টেরিবাজার এলাকায়, যেখানে অপেক্ষাকৃত কমদামে পাওয়া যায় থান কাপড়। রোজা ১৫টি অতিক্রান্ত হওয়ার পর ভিড় শুরু হয় রেডিমেড পোশাকের মার্কেটে। বরাবরের মতো এবারও ক্রেতাদের আকর্ষণ নিউমার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, আখতারুজ্জামান প্লাজা, সানমার ওশান সিটি, সিঙ্গাপুর-ব্যাঙ্কক মার্কেট, লাকী প্লাজা, বে সুপার মার্কেট, ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল প্লাজা, আমীন সেন্টার, ইউনুস্কো সেন্টারসহ জমজমাট মলগুলোতে। এছাড়া সারাবছরের বাজার হিসাবে চট্টগ্রামে খ্যাতি রয়েছে রেয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুম-ী লেন, জহুর হকার্স মার্কেট, সমবায় সিঙ্গাপুর হকার্স মার্কেট, পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট, অলংকার শপিং কমপ্লেক্স এবং এ ধরনের কিছু মার্কেট। চট্টগ্রামে ঈদ ছাড়াও এ মার্কেটগুলোতে সারাবছরই ক্রেতাদের ভিড় থাকে। সঙ্গত কারণেই ঈদে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। একেবারে শেষ সময়ে এসে জনস্রোত মূলত মাঝারি এবং নিম্নবিত্তদের মার্কেটগুলোতে। বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকরা একেবারে শেষ সময়ে ছুটি পায় বিধায় তাদের কেনাকাটাও হয় শেষদিকে। তবে চট্টগ্রামের অধিবাসদের মধ্যে চাঁদ রাতের বেচাকেনার একটা রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে স্থায়ী বাসিন্দাদের অনেকেই আগেভাগে ভিড়ের মধ্যে না গিয়ে অপেক্ষায় থাকেন চাঁদ রাতের জন্য। দূরের চাকরিজীবীরা শহর ছেড়ে যাওয়ায় তখন মার্কেটে ভিড় থাকে কম এবং বিভিন্ন বিপণি কেন্দ্র ও দোকানে থাকে মূল্য ছাড়ের অফারও। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এখন সবচেয়ে বেশি ভিড় জুবিলী রোডে আমতল থেকে নিউমার্কেট হয়ে স্টেশন রোড পর্যন্ত এলাকায়। কারণ, এখানেই রয়েছে বিশাল রেয়াজুদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, তামাকুম-ী লেন এবং ফুটপাথে পণ্যের পসরা। ফুটপাথ দখল হয়ে দোকান এখন যানবাহন চলাচলের সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এ সড়কে এখন যানবাহন চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। শুধু মানুষ আর মানুষে গিজগিজ অবস্থা। এরইমধ্যে চলছে বিক্রেতাদের হাঁকডাক। তুলনামূলকভাবে সস্তায় কেনাকাটা করা যায় বলে নি¤œ আয়ের মানুষগুলোর পছন্দের জায়গাও এ এলাকা। তবে এবার বৃষ্টিতে ভোগান্তি বেড়েছে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই। ফুটপাথের দোকানগুলো ওপরে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে পণ্য সাজিয়েছে। ফলে একদিকে ঢুকলে মনে হয় যেন দীর্ঘ এক সুড়ঙ্গ পথ। শুক্রবার সকাল থেকে মার্কেটগুলোতে ভিড় কমতে থাকে। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ভিড় বেশি ছিল। কেনাকাটা সেরে দূরের যাত্রীরা শহর ছেড়েছেন। প্রায় ৭০ লাখ জনঅধ্যুষিত চট্টগ্রাম নগরী এখন অনেকটাই ফাঁকা। ট্রেন এবং বাসের ভিড়ও কমে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ২৫ লাখ মানুষ নগরী ছেড়ে গেছে গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। তবে বর্ষা এবং বছরের মাঝামাঝি ঈদ হওয়ায় সপরিবারে বসবাসকারী অনেকেই বাড়ি যেতে পারেননি। এর প্রধান কারণ সন্তানদের লেখাপড়া। তারপরও পরিবার পরিজন নিয়ে যারা গেছেন তারা আগেভাগেই শহর ত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম রেল স্টেশন এবং বাস টার্মিনালগুলোতে বৃহস্পতিবার রাতে যে প্রচ- চাপ দেখা গিয়েছিল শুক্রবার তেমনটি নেই। ভাড়া বাড়িয়ে নেয়ার যে হিড়িক তাও বৃহস্পতিবারের মতো হয়নি পরের দিন। এখন যারা শহর ছাড়ছেন তাদের অধিকাংশই শ্রমজীবী মানুষ, যারা ছুটি এবং ঈদের বেতন বোনাস পেয়েছেন শেষ মুহূর্তে। সকলেরই চোখেমুখে আনন্দের ছাপ। অনেকেরই বছরে শুধু ঈদেই বাড়িতে যাওয়া হয়। দেখা হবে স্বজনদের সঙ্গে। আয় রোজগার যা-ই হোক না কেন, প্রিয়জনের জন্য কিছু একটা নিতেই হয়। ঈদে এটুকু কেনাকাটা বড়ই আনন্দের। এদিকে, ঈদের লম্বা ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় অনেক বাসাতেই ঝুলছে তালা। অরক্ষিত এই বাসাগুলোর জন্য চিন্তাও কম নয়। বিশেষ করে এ সময়ের মধ্যে চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে।
×