ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর ১৪ পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করতে বিশেষজ্ঞরা আসছেন

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৪ জুন ২০১৭

পদ্মা সেতুর ১৪ পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করতে বিশেষজ্ঞরা আসছেন

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন চ্যালেঞ্জটি সফল হতে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে বিদেশী বিশেষজ্ঞ দল আসছেন ১৭ জুলাই। ইংল্যান্ডের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘কাউই’ এই চূড়ান্ত ডিজাইনের কাজটি করছে। ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির ব্রিটিশ বেশ ক’জন প্রকৌশলী এই নিয়ে প্রকল্প এলাকায় এসেছেন। সয়েল টেস্টের রিপোর্টসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি নিয়ে কাজটি সফলভাবে এগিয়ে নিয়েছেন। তাই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বিশেষজ্ঞরা আসছেন প্রকল্প এলাকায়। প্রথম পাইলিংয়ের কাজ করা ৭ ও ৬ নম্বর পিলারও রয়েছে এই ১৪ পিলারে। ৩টি করে পাইল অর্ধেক করে স্থাপনের পরই টেকনিক্যাল কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় ৭ ও ৬ নম্বর পিলারে। তাই পাইল স্থাপনের কাজ এখানে গুটিয়ে নেয়া হয়েছিল। এই কাজ সরিয়ে নেয়া হয় জাজিরা প্রান্তে। পরবর্তীতে অন্যান্য পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত হলেও ১৪টি পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করা যায়নি। এখন এই চূড়ান্ত ডিজাইন সফল হতে যাচ্ছে। এই পিলারগুলোর মধ্যে ৬ ও ৭ ছাড়াও রয়েছে ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ এবং ২৫, ২৬, ২৭, ২৮ ও ৩৫সহ ১৪টি পিলার। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই বাকি ১৪টি পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে ৪২ পিলারের মধ্যে ২৭টি পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই ৩, ৪, ৫, ১৩, ১৪ এবং ৩৪, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ পিলারের কাজ চলছে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তের তীরের প্রথম পিলারটির ডিজাইন চূড়ান্ত করার কাজও চলমান রয়েছে। শুধু ডিজাইন চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে ১ নম্বর পিলারের কাজ শুরু করা যায়নি। দায়িত্বশীল প্রকৌশলী এই তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, জাজিরার শেষ প্রান্তের ৪২ নম্বর পিলারের পাইলের কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এটির পাইলিংয়ের পরেই মাওয়ার ১ নম্বর পিলারের কাজ শুরুর কথা ছিল। তাই দ্রুত চূড়ান্ত ডিজাইন অনুমোদনের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুর রহমান শুক্রবার জানান, এই পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইনের কাজ চলছে, মাসখানেক সময় লাগবে। আলোচিত এই সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ক্যাপ বেজ ঢালাই সম্পন্ন শেষে এখন ওপরে খুঁটি উঠছে। ৩৯ নম্বরে পিলারের ক্যাপ বেজ করার প্রস্তুতি চলছে। ৪১ নম্বর পিলারের বাকি পাইলগুলো স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন হ্যামারটি এই পিলারে কাজ করছে। তবে নতুন হ্যামারের কুলিং সিস্টেম এখনও না আসার কারণে ৩৬শ’ কিলোজুল ক্ষমতার বিশাল এই হ্যামার পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে কাজ শুরু করছে। এদিকে কাল রবিবার এই কুলিং সিস্টেম জার্মানী থেকে প্রকল্প এলাকার জাজিরা প্রান্তে পৌঁছবে। এরপরই হরদম পাইল ড্রাইভে বড় ভূমিকা রাখবে হ্যামারটি। এদিকে ২৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতার পুরনো হ্যামারটি কাজ করছে মাওয়া প্রান্তের ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের কাজও এগিয়ে চলেছে। ১৯৩ পাইলের মধ্যে ১২৫টি পাইল স্থাপন হয়েছে। আরেকটি নতুন খবর হচ্ছে- পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারে রং করা শুরু হয়েছে। তাই সেতুর প্রকৃত রং ফুটে উঠছে। সোনালী স্থায়ী রং স্প্যানে বসানোর পর বিশেষ জৌলুস ছড়াচ্ছে এখন। বুধবার থেকে এই রং লাগানো শুরু হয়েছে। ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের স্থাপনের জন্য অপেক্ষায় থাকা স্প্যানটিতেই এই রং করা হচ্ছে। আর এই রং করার ইঙ্গিত হচ্ছে এটি শীঘ্রই স্থাপন করা হবে। এই রংয়ের কাজ সম্পন্ন করতে সপ্তাহ দু’য়েক সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে আজ শনিবার থেকে চার দিনের ঈদ ছুটিতে যাচ্ছে স্থানীয় শ্রমিকরা। প্রায় ৬০ শতাংশ শ্রমিক ছুটি পেয়েছে। অনেকে শুক্রবার কাজ শেষ করেই গন্তব্যে রওনা হচ্ছে। ফিরে এসে বুধবার থেকে আবার কাজে যোগ দিবে। তবে সেতুর কাজ চলমান থাকবে। বাকি শ্রমিকরা কাজ চালিয়ে নিবে। বিদেশী প্রায় সব কর্মীরা ঈদেও কর্মব্যস্ত থাকছেন। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক জানান, ইতোমধ্যেই সব মিলিয়ে গড়ে সেতুটির প্রায় সাড়ে ৪২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। আর সেতুর সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) স্থাপনও শুরু হচ্ছে। তিনি নির্দিষ্ট সময় না দিলেও শীঘ্রই স্প্যান বসছে বলে জানান। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের চার লেনবিশিষ্ট মূল সেতুটির দৈর্ঘ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ২২ মিটার। সেতুটিতে মোট ৪১টি ¯প্যান (অংশ) থাকছে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ¯প্যান বড় হওয়ার কারণে রিইনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে তৈরি না করে ওজন কমাতে সেতুটির মূল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে স্টিল দিয়ে। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিক¤পজনিত ধাক্কা মোকাবেলায় বেছে নেয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। পুরো সেতুটির ভার বহন করার জন্য থাকছে ৪২টি পিলার। দু’প্রান্তের দু’টি ট্রানজেশন পিলার বাদে মাঝের ৪০ পিলারের প্রতিটির নিচে থাকছে ৬টি পাইল। এই সেতু বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে দেবে। এদিকে সেতুর কাজ দখতে শুক্রবার প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি পদ্মা সেতুর কাজ পরিদর্শনে এসে সেনাবিহনী ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে সভা করেন। পরবর্তীতে পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়ার মসজিদে বিদায়ী জুমা পড়লে বিকেলে আবার ঢাকা ফিরে গেছেন। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা আরও জোরদার থাকবে। বিদেশী কর্মীরা যাতে নির্বিঘেœ কাজ করতে পারে সেই লক্ষ্যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×