ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্য প্রগতিশীল প্রজন্ম গড়ে তোলা

মাধ্যমিক স্কুলে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২২ জুন ২০১৭

মাধ্যমিক স্কুলে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ প্রজন্মকে সুস্থ সাংস্কৃতিক বলয়ের মধ্যে এনে সৃষ্টিশীল, প্রগতিশীল ও সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সারা দেশের মাধ্যমিক স্কুলে সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা দেশে এই প্রথম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই কর্মসূচী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। প্রথম পর্যায়ে দেশের ১৮ জেলার প্রতিটির ১০ টি করে মোট ১৮০ মাধ্যমিক স্কুলে এই কর্মসূচী শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রতিটি জেলার জন্য বরাদ্দ ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ১৮ জেলায় পৌঁছানো হয়েছে। সূত্র জানায়, ঈদের পরই স্কুল বাছাই করে জুলাই মাসেই কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথম পর্বে চট্টগ্রাম, বগুড়া, খুলনা, নীলফামারী, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, যশোর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ভোলা, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, পঞ্চগড়, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল ও টাঙ্গাইল জেলার ১৮০ স্কুল বেছে নেয়া হয়েছে। বগুড়া শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সাগর বসাক জানালেন, বগুড়া সদর উপজেলার ৪ ও প্রত্যন্ত এলাকার ৬ টি স্কুল নিয়ে প্রথম পর্বের যাত্রা শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে দেশের ১৮০ স্কুলের প্রতিটিতে একটি করে হারমোনিয়াম ও তবলা সেট দেয়া হবে। প্রতিটি স্কুলে স্থানীয়ভাবে একজন সঙ্গীত শিক্ষক ও একজন তবলা বাদক (তবলচি) নিয়োগ দেবে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। প্রতি মাসে তাদের সম্মানী দেয়া হবে। এক বছর পর এসব স্কুলে গান শেখার পাশাপাশি নাটক, নৃত্য ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি স্কুলে সাংস্কৃতিক চর্চা কর্মসূচী বাস্তবায়িত হবে। উল্লেখ্য, যে জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতিতে যত উন্নত সেই জাতি উন্নতির শিখরে তত দ্রুত পৌঁছে যায় । লক্ষ্য করা গেছে, নগরীর সরকারী ও নামী-দামী স্কুলে সঙ্গীত শিক্ষক আছেন। মাঠ পর্যায়ের স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক কর্মকা- থেকে বঞ্চিত। বেশিরভাগ স্কুলে হারমোনিয়াম-তবলা নেই। সঙ্গীত শিক্ষকও নেই। এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে কিছু শিখতে পারছে না। নিকট অতীতে দেশের প্রতিটি স্কুলে ‘এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ’ (পাঠ্যবহির্ভূত কার্যক্রম) প্রদর্শনের ব্যবস্থা ছিল। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক পাঠের পাশাপাশি গান নাটক আবৃত্তি নাচ কৌতুক নক্সা সাহিত্য খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনে যার যেদিকে আগ্রহ আছে তা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া হতো। ক্লাস শেষে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসতেন। আনন্দঘন পরিবেশে সাংস্কৃতিক চর্চা হতো স্কুলগুলোতে। পরবর্তীতে এই কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এই সুযোগটি নেয় ‘ফান্ডামেন্টালিস্টরা’। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা শিশু ও তরুণদের প্রভাবিত করে। প্রজন্মের অনেক তরুণ জঙ্গী হয়ে বিপথে যায়। এই অবস্থা দূর করতে প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুলে সাংস্কৃতিক চর্চা কর্মসূচী শুরু হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন খান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ। একটা সময় দেশের প্রতিটি বনেদী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকগণ সন্তানদের নিয়ে বসে কে কি পারে তা জানার চেষ্টা করতেন। পারিবারিক গল্পের মধ্যে শিশু-কিশোররা বুদ্ধিদীপ্ত ও সৃজনশীল মেধার বিকাশ ঘটাতে পারত। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে গিয়ে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বেড়ে ওঠায় পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক বন্ধনের পালার বিঘœ ঘটে। বর্তমানে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন কিছুটা আছে। মাঠ পর্যায়ে এই অবস্থা গড়ে তুলে হারানো সাংস্কৃতিক বলয় ফিরে আনার লক্ষ্যেই সাংস্কৃতিক চর্চা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
×