ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ওভালে শুরু ওভালেই শেষ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৯ জুন ২০১৭

ওভালে শুরু ওভালেই শেষ

মিথুন আশরাফ লন্ডন থেকে ॥ ওভালে শুরু, ওভালেই শেষ। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরের শুরু হয়েছিল। সেই একই স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে। শেষটিও হয়েছে দারুণভাবে। ক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। টুর্নামেন্টটি শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ ও স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। এরপর এক এক করে ১২টি গ্রুপ ম্যাচ হয়। দুটি সেমিফাইনাল হয়। ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে শিরোপা নির্ধারণ হয়। গ্রুপ পর্বে দুটি গ্রুপ ছিল। একটি ‘এ’ গ্রুপ। যেখানে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ ছিল। আরেকটি গ্রুপ ছিল ‘বি’ গ্রুপ। যে গ্রুপে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ছিল। প্রতিটি দল তিনটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। নিয়মটি ছিল এমন, দুই গ্রুপ থেকে চারটি দল সেমিফাইনালে উঠবে। দুই গ্রুপে পয়েন্ট তালিকার সেরা দুটি দল সেমিফাইনালে খেলবে। সেই সেমিফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক রোমাঞ্চ দেখা গেছে এবার। ‘এ’ গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকেই সবাই শেষ চারের দল হিসেবে ধরে নিয়েছিল। ‘বি’ গ্রুপ থেকে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধরেছিল। কিন্তু ‘এ’ গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড ও ‘বি’ গ্রুপ থেকে ভারত ঠিকই সেমিফাইনালে উঠতে পারে। বাকি দুই গ্রুপের দুটি দল পরিবর্তন হয়। ‘এ’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে ওঠে যায়। ‘বি’ গ্রুপ থেকে পাকিস্তান ওঠে সেমিফাইনালে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এবার যেন বৃষ্টি খেলেছে। গ্রুপ পর্বে তাই চরম নাটকীয়তার দেখা মিলেছে। ‘এ’ গ্রুপে দুটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। তাতে করে সেমিফাইনালে একটি দলের যাওয়া নিয়ে নাটকীয়তা তৈরি হয়। ইংল্যান্ড টানা দুই ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে ফেলে। কিন্তু বাকি থাকে একটি দল। বাংলাদেশের কাছে হেরে নিউজিল্যান্ড বিদায় নেয়। তাতে করে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা জাগায়। শর্ত একটি থাকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হবে। সেই হারও হয়ে যায়। তাতে করে ইংল্যান্ডের পর ‘এ’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। প্রথমবারের মতো আইসিসির কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড টানা তিন ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপরই থাকে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ জিতে, এক ম্যাচ হেরে, এক ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় মোট ৩ পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে খেলে বাংলাদেশ। গ্রুপ রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া (২ পয়েন্ট) ও নিউজিল্যান্ডকে (১ পয়েন্ট) পেছনে ফেলে শেষ চারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ইতিহাস গড়ে। ‘বি’ গ্রুপেও রোমাঞ্চ তৈরি হয়। এই গ্রুপেও বৃষ্টি হানা দেয়। তবে কোন ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। এমন নয়। ম্যাচ শেষ হয়েছে। একটা সময় গিয়ে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ হয়। সবার পয়েন্ট সমান থাকে। যে দল জিতবে তারাই সেমিফাইনালে খেলবে। এমন অবস্থায় গিয়ে ভারত ও পাকিস্তান জিতে সেমিতে খেলা নিশ্চিত করে। ভারত ও পাকিস্তান সমান ৪ পয়েন্ট করে পায়। রানরেটে ভারত এগিয়ে যায়। তাতে করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। গ্রুপ রানার্সআপ হয় পাকিস্তান। যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধরা হচ্ছিল সেমিফাইনালে তো খেলবেই, এমনকি ফাইনালে খেলে চ্যাম্পিয়নও হয়ে যেতে পারে। পাকিস্তানকে গনাতেই ধরা হয়নি। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয়। শ্রীলঙ্কাকেও পেছনে ফেলে পাকিস্তান সেমিফাইনালে ওঠে। সেমিফাইনালে ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন (ইংল্যান্ড) ও ‘বি’ গ্রুপ রানার্সআপ (পাকিস্তান) লড়াই হয়। আরেকদিকে ‘এ’ গ্রুপ রানার্সআপ (বাংলাদেশ) ও ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন (ভারত) মুখোমুখি হয়। প্রথম সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে সহজেই হারিয়ে দেয় পাকিস্তান। ফাইনালে উঠে যায়। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় উপমহাদেশীয় ফাইনাল। এরপর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে পাত্তা না দিয়ে জিতে ভারত। তাতে ফাইনালে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ হয় ভারত। ভারত-পাকিস্তান ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচটি দিয়েই টুর্নামেন্টও শেষ হয়।
×