ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কেতের মাধ্যমে আগাম তথ্য পাওয়া যাবে

জঙ্গীদের অবস্থান, অস্ত্র বিস্ফোরক মজুদ শনাক্তে রাডার আসছে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৮ জুন ২০১৭

জঙ্গীদের অবস্থান, অস্ত্র বিস্ফোরক মজুদ শনাক্তে রাডার আসছে

শংকর কুমার দে ॥ এবার জঙ্গী গোষ্ঠীর গোপন আস্তানায় জঙ্গী সদস্য লুকিয়ে থাকলে তা শনাক্তকরণ করে জঙ্গী ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আসছে রাডার। বাড়িভাড়া নিয়ে গোপনে জঙ্গী আস্তানা তৈরি করে সেখানে অস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড, বোমা ও বিস্ফোরক মজুদ গড়ে তোলা হলে তা রাডারের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এতে জঙ্গী আস্তানায় জঙ্গীদের নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের মাধ্যমে প্রাণ ও সম্পদহানির হাত থেকে রক্ষা করতে রাডারে ধরা পড়া সঙ্কেতের মাধ্যমে আগাম তথ্য পাওয়া যাবে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ রাডার প্রস্তুতকারক দেশ থেকে রাডার আমদানি করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গীরা ঠিক কোন জায়গায় লুকিয়ে রয়েছে তা সঠিকভাবে শনাক্ত করতে রাডার সাহায্য করবে। জঙ্গী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বা অভিযানের সময় জঙ্গীরা অনেক সময়ই নিজেদের বিশেষভাবে তৈরি গোপন জঙ্গী আস্তানার বাড়িতে বা দেওয়ালের পেছনে বা কোন বাড়ির ভেতরে লুকিয়ে থাকলে রাডার তাদের খুঁজে বের করবে। এসব রাডার অন্তত ২০ মিটার দূরত্বে থাকা জঙ্গীকেও শনাক্ত করতে পারবে। তবে আরও বেশি দূরত্বে থাকা জঙ্গীকে যাতে শনাক্ত করা যায় তার ওপর কাজ চলছে। রাডার প্রস্তুতকারক দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যাতে দেশের জঙ্গী আস্তানা ও সদস্যদের শনাক্তকরণ করে তাদের ধরা যায়। এতে প্রাণহানি ও সম্পদহানি দুইটাই রক্ষা পাবে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জন্য জঙ্গী শনাক্তকরণের রাডার নিয়ে আসা হয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনীর জন্য ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতোমধ্যেই বেশকিছু রাডার আনা হয়েছে। কাশ্মীরের সেনা সদস্যরা এ রাডার পদ্ধতি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখছেন। জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গী শনাক্ত করে তাদের ধরতে পারবে ভারতের সেনাবাহিনী। জঙ্গীবিরোধী অভিযানের সময় জঙ্গীদের ধরার ক্ষেত্রে রাডার খুব বড় ভূমিকা পালন করবে। জম্মু-কাশ্মীরে কয়েকটি অভিযানের কথা উল্লেখ করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে বেশকিছু জঙ্গী দেখা গেছে, সেনাবাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জঙ্গীদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যেখানে সেনাবাহিনীদের ফাঁকি দিয়ে জঙ্গীরা গা ঢাকা দিচ্ছে বা জনবহুল এলাকাতে লুকিয়ে রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গীরা দেওয়ালের পেছনে বা বাড়ির মধ্যে লুকিয়ে থাকার কারণে তাদের অনেক সময়ই শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। সীমান্ত বা বাড়ির দেয়াল ভেদ করে রাডার জঙ্গীদের শনাক্ত করতে সহায়তা করবে। এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গীদের ধরতে রাডার ব্যবহার করতে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে রাডার সিস্টেম সাফল্য অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য রাডার ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী গোষ্ঠী বাড়ি ভাড়া নিয়ে গোপন জঙ্গী আস্তানায় মওজুদ করে রাখা গ্রেনেড, বোমা, বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্ট, আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ মওজুদ গড়ে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের ঘটনা ঘটিয়ে প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংস করছে জঙ্গী গোষ্ঠী। রাডার ব্যবহারকারী ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, দূরের কোন বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানার ব্যবহৃত যন্ত্র রাডারের সাহায্যে ঘন অন্ধকার রাতেও দূরের বস্তুকে লক্ষ্য করা যায়। এর ফলেই রাডার উড়োজাহাজের পাইলট কিংবা সামুদ্রিক জাহাজের ক্যাপ্টেনের একটি তৃতীয় নয়ন হিসেবে কাজ করে। যদি কোন জাহাজের ক্যাপ্টেন তার রাডার যন্ত্রের পর্দায় চোখ রাখেন তাহলে দেখতে পাবেন পর্দার কোথাও ফুটে উঠেছে একটি ক্ষুদ্র আলোর বিন্দু। রাডারের পর্দাটি আসলে একটি টেলিভিশন পর্দার মতো। এ পর্দার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে আছে একটি অপেক্ষাকৃত বড় আলোর বিন্দু। বড় আলোর বিন্দুটি হলো নিজের অবস্থান। এর চারপাশে যদি কোন আলোর বিন্দু ফুটে ওঠে তাহলে ধরে নিতে হবে ওখানেই আছে বা এত দূরে আছে নির্দিষ্ট বস্তুটা। রাডারের পর্দার নম্বর এবং অক্ষরই বলে দিতে পারে বস্তুটির অবস্থান কোথায়, কোন দিকে আছে এবং কত দূরে আছে। রাডার যন্ত্র আকাশে উড়োজাহাজে, সামুদ্রিক জাহাজে এবং স্থলভাগের যে কোন স্থানেই ব্যবহার করা যায়। স্থলভাগে বসানো রাডার যেমন বলে দিতে পারে আকাশে কোথাও শত্রু বিমানের আগমন ঘটেছে তেমনি বিমানে অবস্থিত রাডারও বলে দিতে পারে, নিচে কোথায় বিমানবন্দরের অবস্থান, টার লক্ষ্যবস্তু বা তার আশপাশের অন্য কোন শত্রুর বিমান আছে কিনা, কত দূরে আছে। রাডার স্টেশন হলো এক ধরনের মিনি সাইজের বেতার কিংবা টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্রের মতো। এ কেন্দ্র থেকে আকাশে বেতার তরঙ্গ নিক্ষেপ করা হয়। যখন এ বেতার তরঙ্গ আকাশে কোন কঠিন বস্তুতে আঘাত করে তখন প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এ প্রত্যাবর্তনকারী তরঙ্গই ধরা পড়ে রাডারের গ্রাহক যন্ত্রে। রাডারের গ্রাহক যন্ত্রের অংশটি প্রায় টেলিভিশনের মতো। এখানে প্রত্যাবর্তনকারী তরঙ্গের আলোর সংকেতই পর্দায় ভেসে উঠে আলোর বিন্দু রূপে। রাডারের এ তরঙ্গ খুবই দ্রুত ছুটে যায় এবং দূরের বস্তুতে আঘাত করে আবার ফিরে আসে এবং আলোর বিন্দু হয়ে পর্দায় ভাসে উঠেÑ এ প্রক্রিয়াটি চোখের পলকে ঘটে যায়। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব জঙ্গী গোষ্ঠী গোপন আস্তানা গড়ে তুলে তাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড, বোমা, বিস্ফোরক দ্রব্যের মওজুদ ও সুইসাইডাল ভেস্ট পড়ে অবস্থান নেয়ার মতো ঘটনাগুলো রাডারের পর্দায় ভেসে উঠবে। এতে জঙ্গী আস্তানা ও জঙ্গী সদস্যদের শনাক্তকরণের মাধ্যমে জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার করা সম্ভব হবে, যাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই জঙ্গীবিরোধী অভিযান সফল সমাপ্তি ঘটানো সম্ভবপর হবে। ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের রাডার ব্যবহার বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে, যা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য রাডার আনার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন।
×