ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল

যন্ত্রপাতি অচল ॥ ব্যাহত চিকিৎসা, দুর্ভোগে রোগী

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৭ জুন ২০১৭

যন্ত্রপাতি অচল ॥ ব্যাহত চিকিৎসা, দুর্ভোগে রোগী

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ হৃদরোগীদের জন্য ক্যাথল্যাব ও কিডনি চিকিৎসায় ডায়ালাইসিস মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আর এই সুযোগে কমিশনভোগী এক শ্রেণীর চিকিৎসক রোগীদের রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষার জন্য বাইরের ল্যাবে পাঠিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করছে। যন্ত্রপাতির অভাবে এক্সরে ও রেডিওলজি বিভাগসহ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিভাগ অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অন্ত বিভাগে গড়পড়তায় ২ হাজার ৫০০ এর বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। এর বাইরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে দৈনিক ৫ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। এসব রোগীর রোগ নির্ণয়ে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবসহ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে বেশ কিছু পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হাসপাতালের অন্ত বিভাগে ক্যাথল্যাব না থাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছে না কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তির পর প্রায়ই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সাইফুল বারীর দাবি, ক্যাথল্যাব থাকলে অনেক জটিল রোগীকে বাচানো সম্ভব। হৃদরোগ বিভাগে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকার পরও ক্যাথল্যাব স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সরবরাহ না মেলায় হতাশ এই বিভাগীয় প্রধান। একই অবস্থা হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগে। গত ২০১০ সালে বেশ ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়েছিল হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন। কিন্তু বছর না ঘুরতেই অচল ও বিকল হয়ে পড়ে ডায়ালাইসিস সব মেশিন। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীরা বাইরের ল্যাবে ব্যয়বহুল এই ডায়ালাইসিস সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিন না থাকায় শহরের নির্ধারিত কয়েকটি ল্যাব চুটিয়ে এই ব্যবসা করছে। রেফারেল চরিত্রের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি চাহিদার পরীক্ষা হচ্ছে এক্সরে, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই। অথচ এক্সরে বিভাগের কোন মেশিনই সচল নয়। অথচ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ রোগীর এক্সরের চাহিদা রয়েছে। এসব রোগীকে এখন বাইরের ল্যাবে যেতে হচ্ছে। আয়ষ্কাল শেষ হওয়া মেশিন দিয়ে চালানো হচ্ছে সিটি স্ক্যান পরীক্ষার কাজ! চাহিদার এক দশমাংশ পরীক্ষার কাজ চালানো যাচ্ছে না এসব মেশিন দিয়ে। এ নিয়ে এক্সরে, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই বিভাগের খোদ টেকনেশিয়ানরাও ত্যক্ত বিরক্ত। আর রোগীদের তো দুর্ভোগের সীমাই থাকছে না। ফলে মরণাপন্ন রোগীদেরও বাধ্য হয়ে বাইরের ল্যাবে যেতে হচ্ছে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ভরসাস্থল হচ্ছে হাসপাতালের বহির্বিভাগের অনকোলজি এ্যান্ড রেডিও থেরাপি বিভাগের কোবাল্ট-৬০ মেশিন, সিমোলেটর ও ডিপথেরাপি। কোবাল্ট-৬০ মেশিন অচল হয়ে আছে গত ২০১৪ সাল থেকে। তারও আগে বিকল হয়ে গেছে সিমোলেটর ও ডিপথেরাপি। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগেও মাইক্রোওয়েভ, আইএফটি, ট্রাকসন সেটসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে রোগীরা প্রতাশার সেবা পাচ্ছে না। এসব ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমদ জানান, যন্ত্রপাতি বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়কে পত্র দেয়া হয়েছে।
×