ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাগড়াছড়িতে নদী-খাল দখলের হিড়িক ॥ দেখার কেউ নেই

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৬ জুন ২০১৭

খাগড়াছড়িতে নদী-খাল দখলের হিড়িক ॥ দেখার কেউ নেই

জীতেন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়িতে সর্বত্রই চলছে নদী, খাল ও ছড়া দখলের মহোৎসব। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন নীরব থাকায় দখলকারীরা বর্তমানে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। তাদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না জেলার নদী, খাল, ছড়াসহ নালা নর্দমা পর্যন্ত। নদী, খাল ও ছড়া পাড় দখল করে গড়ে উঠছে নানা স্থাপনা। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদীপ্রবাহ। প্রতি বর্ষা মৌসুমে জলবদ্ধতা ছাড়াও বিপুলসংখ্যক নদী তীরবর্তী নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়েছে। দখল ঠেকাতে প্রশাসনের কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না থাকায় বিপন্ন হচ্ছে, পর্যটন শহর খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং সৌন্দর্য। বর্তমানে পার্বত্য এ জেলা শহর দূষণকবলিত জনপদে পরিণত হয়েছে। শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খাল, ছড়া ও শহরের পানি নিষ্কাশনে সৃষ্ট ড্রেন ও নালাগুলো জবর দখলের ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়ে হচ্ছে এবং শহরের মানচিত্রের ও পরিবর্তন হয়ে যেতে বসেছে। চোখের সামনে এভাবে শহরের ভৌগোলিক পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বেদখল হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে স্থানীয় প্রশাসন জানান, অচিরেই বেদখলকৃত নদী, খাল, ছড়া ও নালাগুলো উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরেজমিন দেখা গেছে, রাঙ্গাপানি ছড়া, খাগড়াছড়ি নদী, পানখাইয়াপাড়া খাল, গোলাবাড়ী খাল দখল করে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। শুরুতেই দুই একটা বাঁশের ঘর নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। গত দুই-তিন বছর ধরে খাগড়াছড়ি শহরের জনসাধারণ মারাত্মক জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলের কবলে পড়ে খাগড়াছড়ি ছড়া, রাঙ্গাপানি ছড়া ও চেঙ্গী নদী তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দখলের কবলে পড়ে এসব খাল, নদী ও ছড়া তার নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। অপরদিকে জেলা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সৃষ্ট ড্রেন ও নালাগুলোও হয়েছে প্রভাবশালীদের দখলের শিকার। আসন্ন বর্ষার আগে অবৈধ দখলদারের কবল থেকে এসব খাল, ছড়া, নদী ও নালাগুলো দখল মুক্ত করে পুনঃখননের ব্যবস্থা করা না হলে এবার খাগড়াছড়িতে জলাবদ্ধতা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। খাগড়াছড়ি পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা খাগড়াছড়ি শহরের খাল, নদী, ছড়া দখল মুক্ত এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থার গ্রহণের দাবিতে আন্দোলন করলেও কোন ফল হয়নি। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, নদী রক্ষার জন্য সরকার আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু প্রশাসন তা পালন করছে না। প্রশাসন যদি জনগণকে সচেতন করে তাহলে নদী দখল কমে যাবে। খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম বলেন, খাগড়াছড়ি শহরকে বাসযোগ্য করে রাখতে শীঘ্রই নদী, খাল ও ছড়া দখলমুক্ত করার অভিযান চালানো হবে। জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করার বিষয়টা আমার জানা নেই। তা ছাড়া আমার কাছে এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×