ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে সেমিফাইনালে আজ মুখোমুখি উপমহাদেশের দুই জনপ্রিয় দল

ভারতকে হারিয়েই ফাইনালে খেলতে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১৫ জুন ২০১৭

ভারতকে হারিয়েই ফাইনালে খেলতে চায় বাংলাদেশ

সবার মুখে এখন একটি দলের নামই আছে। সেটি বাংলাদেশ। এ দলটি যে এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আলোড়ন জাগিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, দলের ক্রিকেটাররা তাই প্রশংসায় ভাসছেন। এ প্রশংসা নিয়েই ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। জিতলেই প্রথমবারের মতো কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালেও উঠে যাবে। আজ বার্মিংহামের এজবাস্টনে হবে ম্যাচটি। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় ম্যাচটি শুরু হবে। বাংলাদেশ যদি ম্যাচটিতে হারেও তাহলেও প্রশংসা সবার মুখ জুড়েই থাকবে। বার্মিংহামের এজবাস্টনে বাংলাদেশের ‘জয়গান’ না হলেও থাকবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যে এতটা আলোচনায় এসেছে এবার, সেটিতো বাংলাদেশের জন্যই। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে মাশরাফিবাহিনী। কেউই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের আসনে বসাননি। সেই আসনে বসার যোগ্যতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উত্তেজনাও বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উপমহাদেশের তিনটি দল সেমিফাইনালে খেলছে, সেটিও তো বাংলাদেশের জন্যই হয়েছে। আবার খেলা ভারতের বিপক্ষে। যে ভারতের বিপক্ষে খেলা হলেই এখন লড়াইয়ের আমেজ তৈরি হয়ে যায়। সমর্থকদের মধ্যে আলাদা উন্মাদনা কাজ করে। যেই উন্মাদনা একটা সময় গিয়ে পাগলাামি ছড়ায়। মাঠে, মাঠের বাইরে চলে কথার লড়াই। মাঠের ভেতর চলে জেতার তীব্র লড়াই। আগে ভারত-পাকিস্তান লড়াই যেমন উত্তেজনা ছড়াত। এখন বাংলাদেশ-ভারত লড়াই সেই স্থান নিয়ে ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত একটি দল জিতে। তবে বরাবরই দুই দলের মধ্যে যে লড়াই হয় তাতে ক্রিকেটেরই জয় হয়। তবে আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা ভীষণ করে চাচ্ছেন বাংলাদেশই জিতুক। জিতলে ফাইনালে ওঠার গৌরব মিলবে। সঙ্গে ভারতকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয়াও হবে। ২০১৫ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ার ও আইসিসির বিতর্কিত কিছু আচরণের পর যে ভারতের বিপক্ষে হার হয়েছিল বাংলাদেশের, তার বদলাও নেয়া যাবে। শুধু কি তাই। সিরিজে মুস্তাফিজুর রহমানকে একবার যে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ‘ক্যাপ্টেন কুল’ কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপে মুশফিক যে উল্লাস দেখিয়েছিলেন। তারপর অল্পের জন্য হারে বাংলাদেশ এবং মুশফিককে নিয়ে ভারতীয়রা সবাই ঠাট্টা তামাশা করেন। সেটির জবাবও দেয়া হবে। তবে এসব করতে বাংলাদেশ দল কিন্তু কোন চাপে নেই। অর্জন যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন নির্ভার হয়ে খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। চাপহীনভাবে খেলবে। আর এখানেই এগিয়ে থাকছে মাশরাফিবাহিনী। সেমিফাইনালে ওঠার যে অর্জন, তা কখনই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে না। ফাইনালে না উঠলেও কোন ক্ষতি নেই। তাই দলের ক্রিকেটাররাও চাপহীন থেকেই খেলবেন। তাতে জয়ের সম্ভাবনাও অনেকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ আসলে সেমিফাইনালে কিংবা ফাইনালে ওঠার আশা নিয়ে খেলেনি। তবে সুযোগ পেলে এতবড় অর্জনকে হাতছাড়া করে। বাংলাদেশ সেই সুযোগ পেয়েছে এবং নিয়েছেও। সবার ভেতরেই স্বপ্ন থাকে এমন অর্জন পাওয়ার। তবে লক্ষ্য অবশ্যই ছিল গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো কোন দলকে হারাতে পারলে ইতিবাচকভাবে টুর্নামেন্ট শেষ করা যাবে। ইংল্যান্ডের কাছে হেরে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির জন্য পরিত্যক্ত হওয়ায় ১ পয়েন্ট পেয়ে এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিবাচকভাবে টুর্নামেন্ট শেষ করার পরিকল্পনায় সফল হয়েছে। এরপর সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। এখন সেমিফাইনালে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারবে। তাতে করে খেলাও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সবার ভেতর থেকে সেরাটাও বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। যেটি বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। যে সুবিধাটি ভারত কোনভাবেই পাচ্ছে না। যেটি ভারতের জন্য হারের কারণও হয়ে উঠতে পারে। এ টুর্নামেন্টে ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলও তারা। দলটি পাকিস্তানকে প্রথম ম্যাচে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে। সহজেই জয় পেয়েছে। বার্মিহামেই সেই জয়টি ছিল। তবে এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে বাজেভাবে হেরেছে ভারত, সমালোচনায় পড়েছে দল। শেষ ম্যাচটিতে আবার ভারত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গ্রুপপর্বে ভারতকে নিয়ে যে রকম আশা করা হয়েছিল সেইরকম নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি ভারত। আর এখন তো সেমিফাইনাল। ম্যাচটিতে কোনভাবেই হারলেই বিদায় নেবে। এই চাপেই এখন ভুগছে ভারত ক্রিকেট দল এবং দলের ক্রিকেটাররা। এই চাপেই ভুল করে বসতে পারেন ক্রিকেটাররা। তাতে করে হারও হতে পারে। হারলেই বাংলাদেশের বাজিমাত। জিতে ফাইনালে উঠে যাবে বাংলাদেশ। অবশ্য এজন্য বাংলাদেশকেও সতর্ক থাকতে হবে। বার্মিহামের এজবাস্টনেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বল-ব্যাটের লড়াই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৪১ রান করেও জিততে পারেনি। আবার প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও লড়াই করে। কিন্তু এতটাই খারাপ অবস্থা হয় ভারতের করা ৩২৪ রানের সামনে পড়ে ৮৪ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও ম্যাচটিতে তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মর্তুজা খেলেননি। সেই ম্যাচটির পর তো বাংলাদেশকে নিয়ে হায় হায় রবই উঠে গিয়েছিল। কিন্তু মূল টুর্নামেন্ট শুরু হতেই কি বদলে গেছে দল। সেই বদলানোর ছোঁয়া আজ লেগে গেলেই হয়। একটি দিনই তো। এ দিনটিতে যে দল ভাল করবে, তারাই তো জিতবে। দিনটি বাংলাদেশের হলেই তো হয়ে গেল। সেই ভাল দিনের অপেক্ষায়, ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার অপেক্ষাতেই এখন বাংলাদেশ।
×