ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নাদালের অবিস্মরণীয় কীর্তি

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৩ জুন ২০১৭

নাদালের অবিস্মরণীয় কীর্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আরও একবার ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন রাফায়েল নাদাল। দুই বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করলেন স্পেনের এই টেনিস তারকা। রবিবার ফাইনালে স্টানিসøাস ওয়ারিঙ্কাকে হারিয়ে টেনিসের উন্মুক্ত যুগে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নির্দিষ্ট কোন গ্র্যান্ডসøামের দশম শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান এই তারকা। সেইসঙ্গে ১৫তম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ নিলেন রাফায়েল নাদাল। ক্লে কোর্টের রাজা হিসেবে বিবেচিত রাফায়েল নাদাল। চোট আর ফর্মহীনতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে এ মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছেন তিনি। অসাধারণ পারফর্মেন্সের সৌজন্যে মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছিলেন এই স্প্যানিয়ার্ড। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রজার ফেদেরারের কাছে হেরে যান তিনি। মেলবোর্নে ব্যর্থ হলেও ক্লে কোর্টে দুর্বার গতিতে ছুটে চলা নাদাল প্রত্যাশিতভাবেই জায়গা করে নেন মৌসুমের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যেহেতু ওয়ারিঙ্কা, তাই কিছুটা ভয় ছিল নাদালের ভক্তদের। কেননা মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে যে এর আগে কখনও হারেননি সুইস তারকা। তিনটি গ্র্যান্ডসøামের ফাইনালে উঠে তিনটিতেই চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। তবে রবিবার রাফায়েল নাদাল পাত্তাই দিলেন না স্টানিসøাস ওয়ারিঙ্কাকে। স্প্যানিশ টেনিস তারকা এদিন ৬-২, ৬-৩ এবং ৬-১ সরাসরি গেমে ওয়ারিঙ্কাকে হারিয়ে ফ্রেঞ্চ ওপেনের দশম শিরোপা জয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২০০৫ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের মিশন শুরু করেন নাদাল। সেই যে শুরু এরপরের গল্পটা শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আবার টানা পাঁচবার প্যারিসের এই টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন নাদাল। দুই বছর পর আবারও শিরোপাটাকে নিজের শোকেসে তুললেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান এই তারকা। এর আগেই নিজেকে ইতিহাসের সোনালি পাতায় টেনিস কিংবদন্তিদের পাশে জায়গা করে নিয়েছেন রাফায়েল নাদাল। ফ্রেঞ্চ ওপেনের দশম শিরোপা জিতে নিজেকে নিয়ে গেলেন অন্য এক উচ্চতায়। স্টানিসøাস ওয়ারিঙ্কাকে হারিয়ে ছাড়িয়ে গেলেন কিংবদন্তি পিট সাম্প্রাসের ১৪ গ্র্যান্ডসøাম জয়ের রেকর্ডকে। রাফায়েল নাদালের মেজর শিরোপার সংখ্যা এখন ১৫। স্প্যানিশ টেনিসের এই কিংবদন্তির সামনে এখন শুধুই রজার ফেদেরার। সুইজারল্যান্ডের জীবন্ত এই কিংবদন্তির নামের পাশে সর্বোচ্চ ১৮ গ্র্যান্ডসøাম। ২০০৫ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রথমবার ফরাসী ওপেনের শিরোপা জয়ের স্বাদ পান নাদাল। এক যুগ রাজত্ব করা নাদাল রাজত্বের সূচনাটাও তখন। রোঁলা গ্যারোয় আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০১৪ সালে সর্বশেষ ফ্রেঞ্চ ওপেনে কোন গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন নাদাল। এরপর হয়ে যায় আরও ১১ গ্র্যান্ডসøামের ফাইনাল। কিন্তু তার কোনটিতেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি এই স্প্যানিয়ার্ড। অনেকেই তো ধরে নিয়েছিলেন, নাদাল তাহলে ফুরিয়েই গেছেন। কিন্তু জাত চ্যাম্পিয়ন বলে কথা। চলতি মৌসুমের শুরুতেই স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের টিকেট কেটে। ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে নাদাল জানিয়ে দিলেন, টেনিস কোর্টে রাজত্ব করার সময় এখনও রয়েছে তার। তবে ক্লে-কোর্টে দুর্দান্ত নাদাল কিন্তু মিস করেন উইম্বলডনকে। যেখানে ২০০৮ এবং ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুখের স্মৃতি রয়েছে তার। এছাড়া ২০০৬, ২০০৭ এবং ২০১১ সালে উইম্বলডনের রানারআপ হন তিনি। এ প্রসঙ্গে ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পর রাফায়েল নাদাল বলেন, ‘ঘাসের কোর্টে আমি ভাল খেলি তা প্রত্যেকেই জানেন, এটা এমন কোর্ট যেখানে খেলতে আমি খুবই উপভোগ করি। ফ্রেঞ্চ ওপেনের দশম শিরোপা জেতা সত্যিই যাদুকরী বিষয়। গত বছরটা আমার খুব কঠিন ছিল। এবার সাফল্যের দেখা পাচ্ছি। তবে উইম্বলডনে ভাল খেলতে না পারাটাও আমাকে খুব হতাশ করে।’ আর মাত্র তিন সপ্তাহ পরই শুরু হবে উইম্বলডন। ইনজুরির কারণে গত বছর এই টুর্নামেন্টে খেলেননি নাদাল। মজার বিষয় হলো এর আগের চার বছর তিনি এমন চারজনের কাছে হেরেছেন। র‌্যাঙ্কিংয়ে যাদের সবারই অবস্থান এক শ’র বাইরে। তবে ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলায় নাদাল এবার নিঃসন্দেহেই নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই কোর্টে নামবেন। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত খেলছেন স্টানিসøাস ওয়ারিঙ্কা। এর আগে গ্র্যান্ডসøামের তিন ফাইনালের টিকেট কেটে তার সবকটিতেই জয়োচ্ছ্বাস করেছেন ওয়ারিঙ্কা। কিন্তু এবার তাকে থামিয়ে দিলেন নাদাল। নাদালের জন্য এই ম্যাচটা ছিল গ্র্যান্ডসøামে ২২তম ফাইনাল। অন্যদিকে ওয়ারিঙ্কার চতুর্থ। ১৯৬৯ সালের পর এবারই প্রথম ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া দুই খেলোয়াড়েরই বয়স ৩০ এর উপরে। তবে বয়স যে কেবলই সংখ্যা নাদাল তা প্রমাণ করলেন আরও একবার। যার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রতিপক্ষ ওয়ারিঙ্কাও। ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা নিজের শোকেসে তুলার সৌজন্যে র‌্যাঙ্কিংয়েও দুই ধাপ এগিয়ে এসেছেন নাদাল। বর্তমানে তার অবস্থান দ্বিতীয়। দুই ধাপ নিচে নেমে চারে ছিটকে গেছেন নোভাক জোকোভিচ। হারলেও তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছেন ওয়ারিঙ্কা। শীর্ষে যথারীতি ব্রিটিশ তারকা এ্যান্ডি মারে।
×