ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গভীর সমুদ্রবন্দর

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৩ জুন ২০১৭

গভীর সমুদ্রবন্দর

দেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের চিন্তাভাবনা চলছে দীর্ঘদিন থেকে। বর্তমানে যে দুটো বন্দর রয়েছে, চট্টগ্রাম ও চালনাÑ এ দুটোই মূলত সমুদ্র সংলগ্ন নদীবন্দর। এর মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বন্দর দিয়েই দেশের আমদানি-রফতানির ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকে। চালনাকে বর্তমানে সারা বছর ধরে সচল রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে। কিছু পরিমাণ ব্যবসা-বাণিজ্যও হচ্ছে। এর পাশাপাশি বরগুনার পায়রায় একটি বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সমুদ্রসংলগ্ন নৌবন্দরের প্রধান সমস্যা হলো, এগুলোতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হয়, যা খুব ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। কেননা প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ নদীবাহিত পলি এসব বন্দরের নাব্য অবস্থার বিঘœ সৃষ্টি করে থাকে। তদুপরি বিদ্যমান দুটো বন্দরই অনাধুনিক, সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ। যে কারণে এসব বন্দরে দেশী-বিদেশী জাহাজ ভেড়া থেকে শুরু করে মালামাল খালাসে সময় বেশি লাগে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও উপেক্ষা করা যায় না। একথাও সত্য যে, বর্তমান বিশ্বে সুপরিসর, সুবিস্তৃত, সুবিশাল সব নৌযান তথা জাহাজ ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিকে অনেক নিরাপদ ও ত্বরান্বিত করেছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে বাংলাদেশেও একটি অথবা একাধিক গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। এতদিন পর্যন্ত দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা ছিল কক্সবাজার উপকূলবর্তী সোনাদিয়া দ্বীপে। বিবেচনায় ছিল কুতুবদিয়া, মাতারবাড়িও। তবে সবশেষ সমীক্ষায় উঠে এসেছে মাতারবাড়ির কথা। উল্লেখ্য, তিনটিই কক্সবাজার সংলগ্ন মহেশখালী দ্বীপের সন্নিকটে এবং সমুদ্রের গভীরতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুকূল হওয়ায় সর্বাধিক পছন্দনীয় স্থান পেয়েছে মাতারবাড়ি। প্রাথমিক পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়ায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই চলবে চূড়ান্ত সমীক্ষার কাজ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন বা জাইকার বিনিয়োগে এ বন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হলেও এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সে অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ও আনুষঙ্গিক দক্ষতা অবশ্যই আরও বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে জাইকা ২০১৮ সালের শেষ দিকে বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করতে ইচ্ছুক। ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে এই গভীর সমুদ্রবন্দরটি অপারেশনে যাওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে অবস্থান করছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে রূপান্তরিত হতে পারে। সে অবস্থায় গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন ও গুরুত্ব আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে বৈকি। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, চালনা ও পায়রা বন্দরের আধুনিকীকরণসহ সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। বহির্বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ ব্যবসা-বাণিজ্য, শান্তি ও স্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশ এখন অনেকেরই আগ্রহের কেন্দ্রস্থল। সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত প্রথম সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীন, ভারত, এমনকি নেদারল্যান্ডসের ব্যাপক আগ্রহের বিষয়টি সুবিদিত। তবে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত জাইকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ এবং সর্বোচ্চ দাতা দেশ হিসেবে স্বীকৃত।
×