ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চারুশিল্পী সংসদের স্মরণে ভাস্কর আবদুল্লাহ খালিদ

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১০ জুন ২০১৭

চারুশিল্পী সংসদের স্মরণে ভাস্কর আবদুল্লাহ খালিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্মরণ করা হলো মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে। শিল্প-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বদের আলোচনায় উঠে এলো এই কিংবদন্তী শিল্পীর সৃষ্টিশীল জীবনের কথা। শুক্রবার ছুটির দিনে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটোরিয়ায় এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে চারুশিল্পী সংসদ। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, প্রখ্যাত ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান, চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান ও সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান, স্থপতি রবিউল হুসাইন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ভাস্কর মজিবুর রহমান ও সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী। পরিবারের স্মরণসভায় কথা বলেন শিল্পীর স্ত্রী কুলসুম খালেদ ও ভাই সৈয়দ আহমেদ মর্তুজা। আবদুল্লাহ খালিদের সৃষ্টির মূল্যায়ন করে হামিদুজ্জামান খান বলেন, তার নির্মিত অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধেরই এক প্রতীক। এই ভাস্কর্যটির গঠনশৈলী একেবারেই ভিন্ন রকমের। তিনি যে প্রক্রিয়ায় ভাস্কর্যটি সৃজন করেছেন, এমন কাজ এ দেশে আর কেউ কখনও করেনি। স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, অপরাজেয় বাংলা তৈরি করার সময় মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য ও ঐতিহ্যকে প্রতিধ্বনিত করবেÑএমনটাই ভেবেছিলাম আমরা এবং সেটাই হয়েছিল। অপরাজেয় বাংলা সব সময়ই জীবন্ত, যা প্রতি মুহূর্তে গণসংগ্রামের ইতিহাস সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা যোগায় আমাদের। শুধুমাত্র শিল্পের নন্দনতত্ত্ব বিবেচনা নয়, ভাস্কর্যটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য বিবেচনা না করলে এর প্রতি ‘সুবিচার করা হবে না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ভাস্কর্যটির নির্মাণশৈলী চারুকলা গবেষণায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে পারে বলেও অভিমত দেন তিনি। ভাস্কর্যটি নির্মাণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা কলাভবনের সামনে ছোট একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলাম। নির্মাণশৈলী তেমন ভাল না হলেও শিল্পকলার শিক্ষক, ছাত্রদের বেশ অবদান ছিল তাতে। পরে একদিন রাতের আঁধারে এক ছাত্রনেতার মদদে সেই ভাস্কর্যটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেই, কলাভবনের সামনে এমন একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে যা সব অত্যাচার ও দুর্যোগ সয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকালেও এই ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ দেখতেই আসতাম ক্যাম্পাসে। এটি নির্মাণে অনেক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। আব্দুল্লাহ খালিদকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অগ্রজ সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ প্রসঙ্গে অনুজ সৈয়দ আহমেদ মর্তুজা বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের ফটিকের মতোই ছিল তার ছেলেবেলা। ভীষণ দুরন্ত ছিল সে। খেলাধুলা, সাঁতার সবকিছুতে ছিল তার দুরন্ত বিচরণ। তার চেয়ে বয়সে ছোট বা বড় কিংবা লম্বায় বড় হয়েও কেউ তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারত না। লেখাপড়ার বিষয়েও ছিল অন্যরকম। প্রায়শই অঙ্কে পাস করতে না পারলেও শিল্পকলায় থাকত সবার আগে। স্কুল-কলেজের দেয়ালে ছবি এঁকে বেড়াত সে। রবিউল হুসাইন বলেন, তার শিল্পসত্তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল। সমসাময়িক ভাস্কররা যখন পশ্চিমা ধাঁচে ঝুঁকেছেন তখন প্রাচ্যের ধারাতেই চোখ রেখেছিলেন আব্দুল্লাহ খালিদ। তিনি উত্তর আধুনিক শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন। তার অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এই ভাস্কর্যের তিন মডেল দৃঢ়চেতা বাঙালীর মনোভাবেই ফুটিয়ে তুলে। আব্দুল মান্নান বলেন, প্রচ- জেদি ও একরোখা ছিল খালেদ। যেটা মাথায় ঢুকত সেটা সে করেই ছাড়ত। এ কারণে আমরা তাকে ‘পাগলা খালিদ’ বলেও ডাকতাম। শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক ও চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জানান, খুব শীঘ্রই আব্দুল্লাহ খালিদকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি থেকে একটি স্মরণসংখ্যা প্রকাশ করা হবে। ডিরেক্টরস গিল্ডের গুণীজন সংবর্ধনা টেলিভিশন নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের আয়োজনে প্রদান করা হলো গুণীজন সংবর্ধনা। সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে পর্যন্ত স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক ও চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, চিত্রনাট্যকার, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, প্রযোজকসহ ৩৮ গুণী ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের আইভী কনভেনশন সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যদিও সংবর্ধনাপ্রাপ্ত অনেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অভিনেত্রীয় হৃদি হক। গুণীজন সংবর্ধনাপ্রাপ্তরা হলেন মুস্তাফা মনোয়ার, সৈয়দ হাসান ইমাম, আমজাদ হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন (মরণোত্তর), মামুনুর রশীদ, তারিক আনাম খান, গাজী রাকায়েত, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সারা যাকের, সুবর্ণা মুস্তাফা, রোকেয়া প্রাচী, খালিদ মাহমুদ মিঠু (মরণোত্তর), এ কে আজাদ (মরণোত্তর), সাইদুল আনাম টুটুল, ম. হামিদ, মোরশেদুল ইসলাম, আবুল হায়াত, গোলাম সোহরাব দোদুল, শহীদুল হক খান, জাহিদ হাসান, শহীদুল আলম সাচ্চু, নুরুল আলম আতিক, আবু সাইয়ীদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, মুরাদ পারভেজ, সাইফুল ইসলাম বাদল, মাসুম আজিজ, মাহফুজ আহমেদ, অনিমেষ আইচ, শহীদুজ্জামান সেলিম, হানিফ সংকেত, রেজানুর রহমান, মোহাম্মদ হোসেন জেমী, রেদওয়ান রনি, শাহনেওয়াজ কাকলী, রিয়াজুল মাওলা রিজু ও রেজানুর রহমান।
×