ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আবহ

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১০ জুন ২০১৭

ঈদের আবহ

বাঙালী মুসলমানদের জীবনে বছরে দুটি ঈদ আসে আনন্দ, প্রীতি, সৌহার্দ্য আর সাম্যের বার্তা নিয়ে। এই দুই আনন্দ পরবে রাজধানী থেকে বাড়ি ফেরার এক অনির্বচনীয় সুখের পরিধি বিস্তৃত হয়। সবার সঙ্গে সবার যোগে প্রাণে প্রাণ মেলানোর এক মহামিলন আপ্লুত করে। ঈদ প্রণোদনা যোগায় ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকেই। ঈদ মানেই আনন্দ। আর সেই আনন্দ ভাগ করে নেয়া হয়। স্বজন-পরিজনের সঙ্গে যেমন, তেমনি গরিব-ধনী সকলের প্রাণেই সহমর্মিতার আবেদন জাগায়। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা তথা রমজান শেষে আসে ঈদ-উল-ফিতর। দুস্থ গরিব মানুষও সেই উৎসবে শামিল হয়। ফিতরা তথা দানের এই ঈদে বিত্তবানরা তাদের আয়, ধনসম্পদের ওপর যাকাতও প্রদান করেন, একই সঙ্গে ফিতরাও প্রদান করেন। গরিব আত্মীয়স্বজনরা এই যাকাত ও ফিতরা পাওয়ার বিধিবিধানে আবদ্ধ। তাদের বাইরেও গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। যাকাতের অর্থ মনে আনে এক ধরনের স্বচ্ছতা, নাগরিক জীবনে অভ্যস্তরাও ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যায়। শেকড়ের টানই হোক আর স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এক মাহেন্দ্রক্ষণ হিসেবেই ঈদের ছুটি আসে মহার্ঘ্য হয়ে। আর দুই সপ্তাহেরও বেশি পর ঈদ-উল-ফিতর পালন করা হবে। খুশির এই আমেজ তৈরির আবহ শুরু হয়ে যায় প্রথম রমজান থেকেই। বাহারি রঙের ডিজাইনের পোশাকের কদর বাড়ে। আর্থিকভাবে সচ্ছল সবাই ঈদে নতুন পোশাক, অলঙ্কার, জুতাসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ে ব্যস্ত থাকে রমজানজুড়ে। দেশে এখন সেই আবহ বিদ্যমান। পোশাক তৈরিতে এখন ব্যস্ত কারিগররা। দিনরাত চলছে সেলাই মেশিন। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রিপিসসহ বাহারি সব পোশাক। এসব পোশাক শুধু শহর, নগর নয়, গ্রামগঞ্জেও চলে যায় পাইকারি দোকানিদের হাত হয়ে। পাইকাররাও ব্যস্ত। পছন্দসই পোশাক কেনার জন্য তারা ঘুরছেন বিভিন্ন পোশাক কারখানায়। শুধু শপিং মল, মার্কেট বা পাড়া-মহল্লার দোকানই নয়, ফুটপাথজুড়েও বেচাকেনার আয়োজন চলছে। বেচাকেনার এই হাট সরগরম থাকে ঈদের চাঁদ রাতেও। ঈদ মৌসুমই বিক্রেতাদের সবচেয়ে বড় মৌসুম। বছরের এই সময়টাতেই পণ্য বিক্রি হয় সর্বাধিক। জুতার দোকানগুলোয় ভিড় জমে উঠেছে। দেশী-বিদেশী বাহারি জুতাগুলো দোকানে সাজানো। ক্রেতারা এ দোকান ও দোকান ঘুরে পছন্দমাফিক জুতা কিনছেন। সেমাই, ফিরনির উপকরণসহ গরম মসলার বাজারগুলোও জমজমাট। গরু ও খাসির মাংস এবং মুরগির বিক্রি এমনিতেই বেড়ে যায় রমজানে। দামও থাকে চড়া। তবু সাধ্যি অনুযায়ী ক্রেতারা কিনে থাকেন আনন্দ উৎসবকে আনন্দময় করার জন্য। নানা স্বাদ ও গন্ধযুক্ত খাবার তৈরির উপকরণ সংগ্রহে ক্রেতারা এখনই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে সর্বত্র তাই ব্যস্ততার পরিধি বাড়ছে। শহর থেকে স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা হয়ত আছে। হয়ত নেই। অধিক যাত্রীর ভারে যানবাহনগুলোর অবস্থা ন্যুব্জ হয়ে যায়। বাসের ছাদের মতো ট্রেনের ও লঞ্চের ছাদেও যাত্রীর আধিক্য বাড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও। উপচেপড়া ভিড় যানবাহনজুড়ে। আর ভাড়ার দরও ওঠে অধিক। তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া নেয়ার প্রবণতা অনেক পুরনো। যে কোনভাবে যানবাহনের ভিতর শরীর গলিয়ে দেয়ার মধ্যে যাত্রীরা এক ধরনের নিশ্চয়তা পায় ঘরে ফেরার। স্বপ্ন পূরণের সুযোগ প্রাপ্তিতে যানবাহনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হলেও কালোবাজারিরাও তৎপর থাকে। এই এক মৌসুম তাদের দু’হাতে টাকা কামানোর। পথে পথে যানজটে নাকাল হতে হয় জেনেও মানুষ বাড়ি ফেরে। এই তার আনন্দ। এই আনন্দ পূর্ণতা পায় যদি তারা ফিরতে পারে নির্বিঘেœ। শত দুর্ভোগ দুঃখ কষ্ট বেদনার বিপরীতে ঈদের আনন্দ অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয়। ঈদের বাজার থেকে ঈদে ঘরে ফেরার লগ্নগুলো সুমসৃণ নির্ঝঞ্ঝাট হলে আনন্দের আধিক্য বাড়ত। ঈদের আবহ সবার মনে থাকুক অনাবিল এই প্রত্যাশা।
×