ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৮ জুন ২০১৭

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ মাহে রমজানের ১২তম দিবস। এ মাসের মাঝামাঝি সময় আসলে ধনীশ্রেণী যাকাতদানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যাকাত বছরান্তে যে কোন মাসে দেয়ার বিধান থাকলেও অতিরিক্ত সওয়াব প্রাপ্তির আশায় রমজানের মৌসুমে যাকাত প্রদান একটি শুভ কালচারে পরিণত হয়েছে। যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম এবং মহান আল্লাহর ফরজকৃত একটি বাধ্যতামূলক দেয়। কুরআন মাজিদে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিরাশিবার যাকাতের কথা উল্লিখিত হয়েছে। সূরা তাওবার ৬০নং আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় যাকাত ফরজ করা হয়েছে এবং তা ব্যয়ের খাতসমূহ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যদিও ইসলামের সূচনাকাল হতেই এর প্রচলন ছিল, দ্বিতীয় হিজরীতে রোজা ফরজ হওয়ার পর একই বছরের শাওয়াল মাসে যাকাত ফরজ হয়। তথাপি এর পূর্ণাঙ্গ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা মক্কা বিজয়ের পর ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠে। নবম হিজরীতে যাকাতের বিধান পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হয়। কুরআন মাজিদের বহু স্থানে বলা হয়েছে, তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত দাও। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) বলেন, ইসলামের মূলভিত্তি পাঁচটি : এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইল্লাহ নেই এবং মুহম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল, নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ আদায় করা এবং রমজানের রোজা রাখা।-(মিশকাত)। যাকাত ফরজ সম্পর্কে আরও বহু হাদিস বিদ্যমান। যাকাত একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য এবং আর্থিক ইবাদত। কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যাকাত প্রদান না করলে তার নিকট হতে রাষ্ট্র তা বল প্রয়োগে আদায় করবে। যাকাত প্রদান না করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ এবং তার রাসুল (স.) যাকাত আদায়ের জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং কৃপণতাবশত তার পরিশোধ না করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। যাকাত ফরজ হওয়া সম্পর্কে সকল যুগের এবং সব দেশের মুসলিম উম্মাহ একমত। সুতরাং যাকাত অস্বীকারকারী ব্যক্তি মুরতাদ বলে গণ্য হবে। যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.)-এর নেতৃত্বে সাহাবিগণের যুদ্ধ সর্বজনবিদিত। প্রাপ্তবয়স্ক এবং বুদ্ধি-জ্ঞান সম্পন্ন মুসলিম নারী ও পুরুষের মালের ওপর কতিপয় শর্তসাপেক্ষে যাকাত ফরজ করা হয়েছে। কোন অমুসলিম ব্যক্তির ওপর যাকাত ধার্য করা যাবে না- এ বিষয়ে উম্মতের ঐকমত্য (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কারণ যাকাত এক প্রকারের ইবাদত যা কবুল হওয়ার প্রথম শর্ত হলো ইসলাম গ্রহণ। ইসলাম গ্রহণের পরই কোন ব্যক্তির ওপর ইসলামের বিধান মান্য করা বাধ্যতামূলক হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন বালক, বালিকা এবং পাগলের মালের ওপরও যাকাত ফরজ নয়। কারণ তাদের ওপর শরিয়তের বিধান পালনের কোন দায়িত্ব নেই। যেসব শর্তসাপেক্ষে উপরোক্ত ব্যক্তির মালের ওপর যাকাত ধার্য করা হয় তা হলো: (১) মালের ওপর পূর্ণ একটি (চান্দ্র) বছর তার পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকতে হবে। (২) মাল এমন প্রকৃতির হতে হবে যার ওপর যাকাত ধার্য হতে পারে। (৩) মাল নিসাব পরিমাণ বা নিসাবের মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে। (৪) ঐ নিসাব পরিমাণ মাল তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। মালিকানা বলতে কোন বস্তু ও ব্যক্তির মধ্যকার শরিয়াহ সম্মত যোগসূত্রকে বুঝায়, যা ব্যক্তিকে ঐ বস্তু নিঃশর্তভাবে ভোগ ব্যবহারের অধিকার দেয় এবং অপর লোকের হস্তক্ষেপ বাধা দেয়। (ইসলামের যাকাত বিধান ১/৯০) নগদ অর্থ, সোনা, রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য, পালিত পশু, কৃষিজপণ্য ইত্যাদির ওপর যাকাত ধার্য হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি, সরকারী সম্পত্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস, বাড়ি-ঘর ইত্যাদির ওপর যাকাত ধার্য হয় না। কৃষিজ ফসল ফলমূল ইত্যাদির ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছর মালিকের দখলে থাকা শর্ত নয়। তা যখন আহরিত হয় তখন তার ওপর যাকাত (উশর) ধার্য হয়ে থাকে। সুতরাং যাকাত প্রদানের মাধ্যমে এ মাহে রমজানে আমাদের সহায় সম্পত্তিকে পবিত্র করে তুলি এবং গরিব দুঃখীদের হক আদায় করে আল্লাহর কাছে নিজেকে তার প্রিয়ভাজন করার প্রয়াস চালাই।
×