ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারী, তুমি গর্জে ওঠো

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৮ জুন ২০১৭

নারী, তুমি গর্জে ওঠো

প্রতিবারই খুব ঘটা করে উদযাপন করা হয়ে থাকে নারী দিবস। শুভেচ্ছা জানানো হয় লাল গোলাপ হাতে। কিন্তু আলোর নিচের অন্ধকারটাই অস্পষ্ট থেকে যায়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এবং লোকজনের নেতিবাচক কথা শুনে সন্তানের ক্ষুধা মেটাতে বছরের পর বছর বিভিন্ন খাতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের নারী। কিন্তু পাচ্ছেন না ন্যায্য মজুরি। এমনও দেখা গিয়েছে নারীরা নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজ করলেও তার পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইটভাটা, পোশাকশিল্প, কৃষিকাজ, গৃহশ্রম, নির্মাণ খাত ও চাতালের কাজসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক যে কোন কাজে আজও নারীরা পুুরুষের সমান মজুরি পান না। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা তো আজ যে কোন কাজে অত্যন্ত দক্ষ। আগে মনে করা হতো নারী শ্রমিকরা নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্যই উপযোগী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তারা প্রমাণ করে দিয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে খুবই আন্তরিক। নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন দায়িত্ব। চাকরির প্রতি তাদের দরদ অনেক বেশি। সারা বিশে^ই নারী-পুরুষের বেতনের এই বৈষম্য বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, একই কাজ করার পরেও নারীরা কম বেতন পাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলেও পারিশ্রমিকের বিচারে পুরুষদের থেকে অনেক পিছিয়ে। আর এই পার্থক্যটা যে কবে ঘুচবে? শুধু গার্মেন্টসেই নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে না, দেশে সর্বত্রই নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কর্মক্ষম নারীরাই পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের নারী শ্রমিকের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আগত। ফলে তাদের সামাজিক অবস্থা মালিকের সঙ্গে দরকষাকষির পর্যায়ে থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে নারী শ্রমিক সে নিজেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে তার উপর নির্ভর করে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। একদিন কাজ করতে না পারলে তার পরিবার না খেয়ে থাকে। এ ধরনের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সম্পন্ন মানুষকে খুব সহজেই শোষণ করা যায়। আর আমাদের দেশের নারী শ্রমিকদের শ্রম শোষণের এটাই অন্যতম কারণ। যেহেতু নতুন কর্মসংস্থান করা সহজ নয়, তাই দরিদ্র নারীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে কোন পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয়। তখন তাদের কাছে শ্রম শোষণ বা প্রতিকূল পরিবেশ কোন বিষয় নয়। অধিকাংশ নারী শ্রমিকরা আজও আন্তর্জাতিক শ্রম আইন কি তা জানে না। মালিক শ্রম আইন লঙ্ঘন করলে প্রচলিত আইনে তার প্রতিকারের জন্য বিধান আছে এটাই তারা জানে না। এছাড়াও দুর্বল ও অজ্ঞ মানুষেরা আইনী সহায়তা গ্রহণ করতে চায় না। ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে। তাই নারী শ্রমিকরা দিনের পর দিন মালিকের শোষণ মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। নারী শ্রমিকরা যে শুধু শ্রম শোষণের শিকার হচ্ছে তাই নয়, তারা নানাভাবে শারীরিক। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব নারী শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো প্রকট। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে তাদের বেতন বৃদ্ধিসহ উন্নতি করতে ভীষণ বেগ পেতে হয়। বাস্তবতা হলো চাকরি হারানোর ভয়ে এসব বিষয় নিয়ে নারীরা তেমন কোন প্রতিবাদ করে না। তাই ওয়েজবোর্ডসহ প্রেস কাউন্সিলে এ বিষয় থাকা উচিত। কোন প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি বৈষম্য কিংবা হয়রানি হলে ওই বিষয় অনুযায়ী সোচ্চার হওয়া উচিত। এছাড়াও নারী শ্রমিকদেরও সোচ্চার হতে হবে। তাদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রম আইন বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও নির্যাতিত শ্রমিক যাতে বিনা খরচে এবং সহজে আইনী সহায়তা পেতে পারে সে জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই বৈষম্য প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। নারী, তুমি গর্জে ওঠো। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×