ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য

মালয়েশিয়ায় অবৈধরা অস্থায়ী পাস নিয়ে জটিলতায়

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৭ জুন ২০১৭

মালয়েশিয়ায় অবৈধরা অস্থায়ী পাস নিয়ে জটিলতায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসকারীরা অস্থায়ী পাস (ই-কার্ড) নিয়ে নানা জটিলতার শিকার হচ্ছেন। নির্ধারিত ই-সেন্টার থেকে ই-কার্ড (টেম্পোরারি পাস) নিতে গিয়ে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ছেন তারা। কর্মীরা দালালদের হাতে টাকা তুলে দিলেও ই-কার্ড হাতে পাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশটির পুলিশ দালালদের বিরুদ্ধে গত এক জুন থেকে অভিযান শুরু করেছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার করলেও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য থামছে না। যদিও মালয়েশিয়ার সরকার ঘোষণা দিয়েছে যারা ই-কার্ড না করে অবৈধভাবে বসবাস করবে তাদের জেল জরিমানা করা হবে। সরকারের এই ঘোষণার পর দেশটিতে বসবাসকারী কাগজপত্রহীন অবৈধ প্রবাসী কর্মীদের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ই-কার্ড (টেম্পোরারি পাস) নেয়ার নির্দেশ দেন দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার অবৈধ প্রবাসীদের ই-কার্ডের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। এ অবস্থায় মাত্র ২৫ দিন হাতে হয়েছে কর্মীদের। এই সুযোগ হাত ছাড়া হলে তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ার বসবাসকারী অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। ৩০ জুনের মধ্যেও যারা ই-কার্ড করবে না, তাদের সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রিংগিত জরিমানা ও এক বছর পর্যন্ত জেল বা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। কিন্ত ই-কার্ড নিতে গিয়ে কর্মীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। হয়রানি বা জটিলতা সৃষ্টিকারীরা বাংলাদেশেরই মানুষ। তারা সেখানে দালাল হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে বাংলাদেশের এ রকম দালালের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। তারা বাংলাদেশী কর্মীদের কেনাবেচা করেই সেখানে বিরাট অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন। তারা প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে ই-কার্ড করে দেয়ার দায়িত্ব নিচ্ছে। কিন্তু কোন কর্মীরই ই-কার্ড করে দিতে পারেনি বলে মালয়েশিয়া থেকে বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, ‘রিহায়ারিং প্রোগ্রামে’ নিবন্ধন না করে যাদের ই-কার্ড দেয়া হয়েছে- এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৪টি ইমিগ্রেশন সেন্টারে পুলিশ জড়িতদের খোঁজ করছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর এর আগে জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতু শ্রী নাজিব তুন রাজাকের সঙ্গে টেলিফোনে বাংলাদেশী কাগজপত্রহীন প্রবাসী কর্মীদের বৈধতার আওতায় আনার অনুরোধ করেন। এ অনুরোধে সাড়া দিয়ে মালয়েশিয়ান সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ই-কার্ড (টেম্পোরারি পাস) দেয়ার। বর্তমানে অবৈধ কর্মীরা ই-কার্ড কার্যক্রমের আওতায় বৈধতা নিচ্ছেন। তবে এই কার্ড বেশিদিনের জন্য দেয়া হচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময় পরে এর কোন কার্যকারিতা থাকবে না। যাদের কোন ধরনের কাগজপত্র নেই তাদের ডকুমেন্ট প্রদানের লক্ষ্যে দুই ধরনের টেম্পোরারি পাস দেয়া হচ্ছে। প্রথমত যাদের কোন ধরনের কাগজপত্র নেই তারা মালিকের সহায়তায় ইমিগ্রেশন বিভাগে গেলে তাদের একটি ‘লাল’ টেম্পোরারি পাস দেয়া হয়। পরে সেই কার্ডটি নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে কর্মীরা পাসপোর্ট করে নিতে পারবে। ওই পাসপোর্ট নিয়ে আবারও ইমিগ্রেশনে গেলে তাদের ‘নীল’ টেম্পোরারি পাস দিচ্ছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এই কার্ডের মেয়াদ হবে এক বছর। এই সময়ের মধ্যে চলমান ‘রি-হায়ারিং গ্রোগ্রাম’ আছে তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে কর্মীরা বৈধতা পাবে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ নিয়োগ কর্তাদের কোনো এজেন্ট বা দালাল দিয়ে ই-কার্ডের নিবন্ধন না করতে সতর্ক করেছে। কর্মীরা নিজেরাই ইমিগ্রেশন বিভাগে এসে ই-কার্ড নিতে পারবেন। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে কর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, যার কার্ড তাকেই করতে হবে। এখানে কোন দালাল বা অন্য কেউ করতে পারবে না। কিন্তু ইমিগ্রেশন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে দালাল চক্র যোগসাজশ করে বড় ধরনের ব্যবসা তৈরি করে বসেছিল। কিন্তু গত এক জুন থেকে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন বিভাগ অভিযান শুরু করে। এতে বেশ কয়েকজন দালাল পুলিশের হাতে আটক হয়েছে বলে খবর মিলেছে। তবে ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, অবৈধ কর্মীদের জন্য শুরু হওয়া ই-কার্ড করার জন্য নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে অনেক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। গত দেড় মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার অবৈধ কর্মী ই-কার্ড নিয়েছেন। যারা ই-কার্ডের জন্য নিবন্ধন করবেন তাদের অবশ্যই যেসব নিয়ম ও শর্ত মেনে করতে হবে। অবৈধ কর্মীকে অবশ্যই কোন বৈধ কোম্পানিতে কাজ করতে হবে, অবৈধ কর্মীদের কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকা যাবে না, ই-কার্ডের জন্য ১৫ (সোর্স কান্ট্রি) দেশের কর্মীরা আবেদন করতে পারবে। অবৈধ কর্মী যদি আগে কোন কোম্পানি থেকে পালিয়ে যায়, তাহলে ই-কার্ড নিবন্ধন বাতিল করা হবে, মেডিক্যাল টেস্ট করতে হবে ও মেডিক্যালে কোন সমস্যা ধরা পড়লে ই-কার্ড নিবন্ধন বাতিল করা হবে। প্রতিদিন গড়ে ১০ কোম্পানি থেকে কর্মীদের ই-কার্ড নিবন্ধন করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ই-কার্ডের মেয়াদ থাকবে এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে রি-হায়ারিং পদ্ধতিতে কর্মীরা নির্দিষ্ট মালিকের মাধ্যমে বৈধ ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
×