ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৬ জুন ২০১৭

নিরাপদে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আসন্ন ঈদে নিরাপদ ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সড়ক-নৌ ও রেলপথ এই তিন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। ঈদের এক সপ্তাহ আগে দেশের সকল সড়ক-মহাসড়ক মেরামতসহ রাস্তার দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ যানবাহন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা, লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। ১০ রমজানের পর থেকে বাস-ট্রেন ও লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রির তারিখ ঘোষণা হবে। ঈদে যাত্রী পরিবহনে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির ৯০০ বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ যাত্রী হয়রানি বন্ধে নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। সব মিলিয়ে ঈদের সময় যাত্রীদের ঘরে ফেরা নিরাপদ করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে সরকার। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও ১০ রমজানের পর থেকে নৌ-রেল ও সড়কপথে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। এবারও পাঁচদিন অগ্রিম টিকেট বিক্রি করবে রেলওয়ে। একজন সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, ১০ রমজানের পর অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। উত্তরাঞ্চলের বাস যাত্রীরা অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে মহাখালী, সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে এ বছরও অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে না। নৌপথের যাত্রীদের জন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বুথ থেকে কেবিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভাল। কিন্তু ঈদের সময় সড়কে বাড়তি গাড়ির চাপ থাকায় রাজধানীসহ আশপাশের ১৪টি পয়েন্টে যানজটের ভোগান্তি হতে পারে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে এখনই সময় লাগে অন্তত তিন ঘণ্টা। এতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল হয়ে উত্তরবঙ্গগামী ২১ জেলার যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যা ঈদে আরও বাড়তে পারে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব, ও অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ডের কারণেই জয়দেবপুর চৌরাস্তা ও টঙ্গী ব্রিজ মোড় এলাকায় যাত্রী ভোগান্তি নিত্যদিনের। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যার যা করণীয় তা ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, রাজধানীসহ আশপাশের যানজটপ্রবণ পয়েন্টগুলোতে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি এ বছর আনসার মোতায়েন করা হবে। ঈদ মৌসুমে সড়ক-মহাসড়কে থাকে বাড়তি গাড়ির চাপ। ফলে বাড়ে সড়ক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই পরিবহন মালিকদের দাবি, দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ করতে হবে। সকল মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রেকার রাখার বিকল্প নেই। পাশাপাশি মহাসড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকলে যানজট এড়ানো অনেকটাই সম্ভব হবে। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যানজটমুক্ত মহাসড়ক নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঢাকায় ১৪টি প্রবেশ পয়েন্টে যানজটপ্রবণ এলাকায় মোতায়েন থাকবে স্বেচ্ছাসেবক। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নিতে মহাসড়কে থাকবে রেকার। সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানিয়েছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়া অন্য সড়কগুলো নিয়ে এবার যানজটের খুব একটা চিন্তা নেই। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর রাস্তার অবস্থা ভাল বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রতিবছরের মতো আমরা ঈদ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। এ ব্যাপারে দ্রুত মালিক-শ্রমিক মিলিয়ে সভা আহ্বান করা হবে। টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি রোধ, বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ, অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের ভিজিলেন্স টিম কাজ করবে। তিনি, মহাসড়কে অযান্ত্রিক ও নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবি জানান। ভোগান্তির কারণ হতে পারে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক চলতি মাসের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় প্রতিদিনই এই মহাসড়কে যানজট আছে। সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে যানজটের পরিধি। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ ফোর লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। টাঙ্গাইলের ফোন লেন প্রকল্পের কাজ চলমান। সিলেটের অবস্থা ভাল। তুলনামূলকভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি সবচেয়ে চাপা। গাড়ির চাপ যথেষ্ট। কিছু কিছু স্থানে ভাঙ্গাচোরা সড়ক, নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ, হাটবাজার, স্বল্প গতির যানবাহন, লোকাল গাড়ির আধিক্য, অবৈধ পার্কিং ও বাজারসহ নানা কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল আড়াই ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগছে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা। পরিবহন চালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ পথের ভোগান্তির মূল জায়গা এখন টঙ্গী-গাজীপুর-টাঙ্গাইল অংশ। অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রায় ২১ জেলার যানবাহন নিয়মিত চলাচল করছে। বাস মালিকরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যাই প্রায় এক হাজার। ঈদ উপলক্ষে এর সংখ্যা আরও বাড়বে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর এবং টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে পথচারীদের অবাধ চলাচল দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের অবরোধ ও দুর্ঘটনার পরে অবরোধ, ফিটনেসহীন গাড়ি অকেজো হয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যমুনা সেতুর পূর্ব স্টেশন থেকে কালিহাতী উপজেলা এবং মির্জাপুর এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে মির্জাপুরের ইচাইল, ডুবাইল, মিয়াপুর ওম সোহাগপাড়া, কালিহাতীর চরভাবনা, বাসাইলের বাইখোলা, ঘাটাইলের কালিদাসপাড়া এবং সদর উপজেলার করটিয়া দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব এলাকায় ঈদ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের। জয়দেবপুর চৌরাস্তা এবারও দুশ্চিন্তার কারণ ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ভোগড়া বাইপাস হলো যানজটের দিক থেকে বিষফোঁড়া হিসেবে খ্যাত। আবার জয়দেবপুর চৌরাস্তার সমস্যা পুরোটাই সমাধান যোগ্য। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো জয়দেবপুরে চৌরাস্তার তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার আগে থেকেই যানজটে পড়ে। এই সামান্য রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে কখনও দুই ঘণ্টা। অথচ মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ যেতে এখন সময় লাগে দুই ঘণ্টা! পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বলছেন, জয়দেবপুর চৌরাস্তার চারপাশজুড়েই পরিবহনের অরাজকতা। সিটি সার্ভিসগুলো এখানে ঘুরানো হয়। রাখা হয় এলোপাতাড়ি করে। এরপর লেগুনা, অটোরিক্সা, ম্যাক্সি, অটো, ব্যাটারিচালিক রিক্সার অবৈধ টার্মিনাল বানানো হয়েছে চৌরাস্তার স্কুলের সামনে। পণ্যবাহী পরিবহনগুলো রাখা হয় রাস্তার ওপর। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লোকাল বাসগুলোও রাস্তায় থামিয়ে ইচ্ছেমতো যাত্রী তোলা হয়। সব মিলিয়ে গোটা সড়কজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য, ঈদের আগেই সব অবৈধ টার্মিনাল উচ্ছেদ করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে চৌরাস্তা এলাকায় কোন পরিবহন দাঁড়াতে না দিলেই যানজটের সমস্যা হবে না। যানজটের স্পট এবারের ঈদেও মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি মোড়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসব পয়েন্টে রোভার স্কাউটের পাশাপাশি বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হবে। যানজটপ্রবণ স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ আশুজিরাবো বাজার, ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে, বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈর, নবীনগর কাঁচপুর, ভুলতা ও মেঘনা। এছাড়া মহাসড়কের যানজটপ্রবণ এলাকার পাশে অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করবে সড়ক ও মহাসড়ক অধিদফতর। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আসন্ন রমজানের ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের সেবা প্রদানে বিআরটিসির ৯০০ বাস প্রস্তুত থাকবে। এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যাত্রী সেবা দেবে ৪৬৬ বাস। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় মহাখালী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে ৫০টি বাসও প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া যাত্রী সেবা প্রদানের বিষয়াদি তদারক করতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে। বুধবার এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিসির তিনটি মনিটরিং টিম নিয়মিত কাজ করবে। এছাড়া সড়কে যানবাহনের কোন প্রকার সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট চারটি কারিগরি টিম টাঙ্গাইল, বগুড়া, রংপুর এবং কাঁচপুর ব্রিজ এলাকায় স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ২২ জুন থেকে ঈদের স্পেশাল সার্ভিস শুরু হবে। যা ঈদের তিনদিন পর পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে ৩০০ বাস মেরামত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারী ভাড়ার বেশি যাত্রীদের থেকে আদায় করা যাবে না। বিআরটিসির সকল কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। কোন বাসে বেশি ভাড়া নিলে সংশ্লিষ্ট ডিপো ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান মন্ত্রী। বাড়তি ভাড়া রোধে টার্মিনালে ভিজিলেন্স টিমÑ ও. কাদের ঈদে বিভিন্ন যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলীসহ বাস টার্মিনাল এলাকায় ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই টিম যাত্রী ভোগান্তি আছে কি না, তা দেখভাল করবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি ঈদের আগে তিনদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচলে থাকবে কড়াকড়ি। সোমবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। মন্ত্রী বলেন, যানবাহন চলার সুবিধার্থে ঈদের আগের সাতদিন ও পরের সাতদিন সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। রোজায় বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দেশের সব সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। মহাসড়কে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ কমাতে পোশাক কারখানাগুলো আলাদা আলাদা দিনে ছুটি ও খোলার তারিখ ঘোষণার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ করে কাঁচপুর, গাজীপুর, টঙ্গী, কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা এলাকার পোশাক কারখানায় এভাবে ছুটি ঘোষণা করা হলে যানজট কমবে। মন্ত্রী আরও বলেন, এ ছাড়া ঢাকা থেকে বের হওয়া ও প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যানবাহন ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালনের জন্য আনসার নিয়োগ করা হবে। কিছু কিছু জায়গায় ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, বিকেএমইএ, বিজিএমইএকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঈদের আগের তিনদিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলবে না বলেও জানান মন্ত্রী। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টসসামগ্রী, ওষুধ ও জ্বালানি বহনকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে। ঈদ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল করা উচিত বলেও জানান তিনি। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের সময় যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মালামাল বা যাত্রী পরিবহন বন্ধে এবং যাত্রী ভোগান্তি কমাতে এই দলগুলো টার্মিনালগুলোতে কাজ করবে। এবার সরকারীভাবে রোজার ঈদের ছুটি ঠিক করা হয়েছে ২৫ থেকে ২৭ জুন। চাঁদ দেখা যাওয়া সাপেক্ষে ২৬ জুলাই বাংলাদেশে ঈদ-উল ফিতর উদ্যাপিত হতে পারে। মন্ত্রী জানান, ২২ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, সকল শ্রেণীর অযান্ত্রিক যানবাহন নিষিদ্ধ রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। শহর এলাকায় শপিংমলের সামনে যানজট নিরসনে এবং যত্রতত্র পার্কিং বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা জানান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। তাছাড়া যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে মহানগরী এবং মহাসড়কের ওপর ও উভয় পাশের অস্থায়ী ও ভাসমান বাজার উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করতে ঈদের সাতদিন আগে সড়কের মেরামত কাজ শেষ করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগকে। বঙ্গবন্ধু সেতু, মেঘনা সেতু, গোমতি সেতুসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ সেতুসমূহের টোল প্লাজার সকল বুধ ২৪ ঘণ্টা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সড়কের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প সড়কে চলাচলের পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, বিকল্প সড়কের রুট নির্দেশনাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য বিআরটিএ বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করবে। ঈদের চারদিন আগে যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করতে বিআরটিএ সদর দফতরে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। ঈদের আগে চারদিন ও পরের চারদিন পর্যন্ত মোট আটদিন কন্ট্রোল রুম খোলা থাকার কথা বৈঠকে জানানো হয়। রমজানে রাজধানীতে যানজট নিরসনে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ট্রাফিক কর্মকর্তাদের ছুটি কমিয়ে সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে থাকার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তবে শুধু পুলিশ নয়, সকল প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় যানজট সমস্যা নিরসন হবে। আর এ জন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছে ডিএমপি। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, রাজধানীতে এবার ওয়াসা, মেট্রোরেল ও চলমান সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমূলক কাজের কারণে রাস্তায় যানজট লেগেই রয়েছে। এর মধ্যে রমজানে সরকারী-বেসরকারী অফিস ইফতারের আগে ছুটি হবে। সব মিলিয়ে এবার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
×