ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনায় টর্নেডোয় ১০ গ্রাম লণ্ড ভণ্ড, নিহত ১

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৪ জুন ২০১৭

নেত্রকোনায় টর্নেডোয় ১০ গ্রাম লণ্ড ভণ্ড, নিহত ১

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ৩ জুন ॥ শনিবার দুপুরে নেত্রকোনার আটপাড়া ও মদন উপজেলার ওপর দিয়ে প্রচ- বেগে টর্নেডো বয়ে যায়। এতে আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতি ইউনিয়নের তেলিগাতি বাজারসহ ১০-১২ গ্রাম ল-ভ- হয়ে যায়। এছাড়া মদন উপজেলার আরও প্রায় ১০ গ্রাম আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই উপজেলার সহস্রাধিক কাঁচা ও টিনশেড ঘরবাড়ি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক হাজার গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘর ও গাছপালার নিচে চাপা পড়ে মদনের কদমশ্রী গ্রামে নূর নাহার (৪৫) নিহত এবং দুই উপজেলায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। জানা গেছে, শনিবার বেলা ১টা ৪০ মিনিটের সময় আটপাড়ার তেলিগাতি এবং মদন সদর, গোবিন্দশ্রী, ফতেপুর, তিয়শ্রী, নায়েকপুর ও চানগাঁও ইউনিয়নে প্রচ- বেগে টর্নেডো আঘাত করে। মাত্র পাঁচ মিনিটের ঝড়ে তেলিগাতি ইউনিয়নের তেলিগাতি বাজার, তেলিগাতি গ্রাম, ইকরাটিয়া, শাসনকান্দি, বড়তলি, বিজয়পুর, পশ্চিম হাতিয়র, পূর্ব হাতিয়র, গন্ধর্বপুর, কামারগাতি ও শ্রীরামপাশাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম একেবারে ল-ভ- হয়ে যায়। তেলিগাতি বাজারের অন্তত ৩০টি দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকের ঘরের ওপর বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে। এদিকে ঘরের নিচে চাপা পড়ে মদনের কদমশ্রী গ্রামে নূর নাহার নিহত হন। এছাড়া বজ্রপাতে আহত হন বাঘমারা গ্রামের জিসান ও প্রিতাশ। ওই দু’জন ছাড়াও কদমশ্রী গ্রামের মাসুম(৩৫) এবং আটপাড়ার বিজয়পুর গ্রামের আনোয়ারা বেগমকে(৫০) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামের আরও ১০-১২ জনকে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তেলিগাতি গ্রামের রাহেলা বেগম ও নয়ন মিয়া জানান, আকাশে ঘন কালো মেঘ করে শোঁ শোঁ শব্দে ঝড় আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব কিছু তচনচ হয়ে যায়। তেলিগাতি ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীম আরা বেগম জানান, টর্নেডোয় কলেজটির ৮টি টিনশেড ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ কারণে আজ রবিবার ডিগ্রীর অর্থনীতি পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও তেলিগাতি বিএনএইচকে একাডেমি, তেলিগাতি মাদ্রাসা এবং ইকরাটিয়া বালিকা বিদ্যালয়সহ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদের চাল উড়ে গেছে। এদিকে রাস্তায় গাছপালা উপড়ে পড়ায় নেত্রকোনা-আটপাড়া সড়ক ও মদন-ফতেপুর সড়কে প্রায় তিনঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিদ্যুতের লাইনও ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়সহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ময়মনসিংহ ॥ শুক্রবার রাতে ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া গেছে। জানা যায়, রাত ৮ টার দিকে ডাকাতিয়া ইউনিয়নের সামালিয়াপাড়া, আঙ্গারগাড়া, কাচিনা ইউনিয়নের তামাট গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি, গাছপালা, কয়েকটি পোল্ট্রি খামার উড়িয়ে নেয়াসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সামালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মোস্তফা মাস্টারের কয়েক লাখ টাকার গাছপালা উপরে পড়েছে, একই এলাকার শাহ আলমের বাড়ি, হোসেন তালুকদারের পোল্ট্রি খামার, নাজমুল হক মাস্টারের সেগুন বাগান, হেকমত আলীর পোল্ট্রি খামার ও দেলুয়ারের পোল্ট্রি খামার ঝড়ে ভেঙ্গে নষ্ট হয়েছে। আম, কাঁঠাল, লিচুসহ শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে। ফটিকছড়ির দু’টি গ্রামে টর্নেডো নিজস্ব সংবাদদাতা ফটিকছড়ি থেকে জানান, উপজেলার নানুপুর ইউনিয়নের দুটি গ্রামে শুক্রবার মধ্যরাতে আকস্মিক টর্নেডো আঘাত হানায় অর্ধশতাধিক বসতঘর ও গাছপালা উপড়ে গিয়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। এ গ্রাম দুটি হচ্ছে গামরী তলা ও পশ্চিম নানুপুর। টর্নেডো আঘাত হানার সময়ে গ্রামবাসী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। মাত্র ২/৩ মিনিট এ টর্নেডো স্থায়ী হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় জানান, টর্নেডোর আঘাতে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
×