রুমেল খান ॥ মৌসুম শুরুই হয় এই ফুটবল আসরটি দিয়ে। ১৯ ম্যাচের জমজমাট এক টুর্নামেন্ট। যার মধ্যে ইতোমধ্যেই সাঙ্গ হয়েছে ১৬ ম্যাচ। বাকি আছে মাত্র তিন ম্যাচ। আর এই তিনটি ম্যাচই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তেজনাকর। দুটি সেমিফাইনাল এবং একটি ফাইনাল। দুই সেমির প্রথমটি মাঠে গড়াবে আজ শুক্রবার। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে রাত সোয়া ৭টায় শেষ চারের দ্বৈরথে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড বনাম রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি।
‘আইলো’ এবং ‘ডাইলপট্টি’ খ্যাত পুরনো ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জ সেমিতে এসেছে ‘ডি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন (২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট) হয়ে। নিজেদের গ্রুপ ম্যাচে কামাল বাবুর রহমতগঞ্জ ৩-০ গোলে হারায় টিম বিজেএমসিকে। এছাড়া গোলশূন্য ড্র করে ব্রাদার্সের সঙ্গে। গ্রুপ পর্বে তারা কোন গোল হজম করেনি। সবশেষে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে হারায় ৩-১ গোলে।
এ আসরে এ পর্যন্ত ৩ ম্যাচে ৬ গোল করেছে রহমতগঞ্জ। হজম করেছে মাত্র ১ গোল। দলের মধ্যে জোড়া গোল করেছেন শাহ্রান হাওলাদার। এছাড়া ১টি করে গোল করেছেন ইসমাইল বাঙ্গুরা, মানডে ওসাজাই, ফয়সাল আহমেদ এবং রাশেদুল ইসলাম শুভ।
বন্দরনগরীর দল চট্টগ্রাম আবাহনী শেষ চারে এসেছে ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে (২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট)। নিজেদের গ্রুপ ম্যাচে তারা হারায় ২-১ গোলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড এবং ২-১ গোলে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘকে। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা টাইব্রেকারে ৪-২ (১-১) গোলে হারায় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডকে।
এ আসরে এ পর্যন্ত ৩ ম্যাচে ৫ গোল করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। হজম করেছে ৩ গোল। দলের মধ্যে জোড়া গোল করেন আফিজ ওলাওলে ওলাদিপু। এছাড়া ১টি করে গোল করেছেন জাহিদ হোসেন, কৌশিক বড়ুয়া এবং এনদুকাকু এ্যালিসন।
ফেডারেশন কাপে এ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী এবং রহমতগঞ্জ। এমনকি কখনও ফাইনালেই উঠতে পারেনি (ক্লাব কর্তাদের তথ্যমতে রহমতগঞ্জ নব্বইয়ের দশকে একবার টুর্নামেন্টের সেমিতে উঠেছিল)। স্বপ্নের ‘প্রথম’ ফাইনালে উঠতে এবার উভয় দলের সামনেই সেই সুবর্ণ সুযোগ। ফলে ম্যাচে জিততে দুই দলই মরিয়া এবং উজ্জীবিত।
চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজার শাকিল মাহমুদ চৌধুরী জানান, ‘আমরা কোন দলকেই হাল্কাভাবে নেইনি। রহমতগঞ্জকেও নিচ্ছি না। তাদের প্রতি যথেষ্ট সমীহ রেখেই বলছি তাদের হারিয়েই ফাইনালে যেতে চাই। সেই লক্ষ্যেই আমরা মাঠে নামব।’
যদিও তারকা সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম আবাহনীর একাধিক খেলোয়াড় জ্বরে ভুগছেন কদিন ধরে। নিয়মিত অধিনায়ক মামুনুল ইসলামও জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। কোয়ার্টারে তিনি খেললেও পুরো সময় খেলতে পারেননি। চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত জাফর ইকবাল, এ্যালিসন, আশরাফুল ইসলাম রানা। রানা অবশ্য এবারের ফেড কাপে মাঠেই নামতে পারেননি। তবে আজ জাফর, এ্যালিসনের খেলা নিয়ে সংশয় আছে। রহমতগঞ্জের তারকা কোচ কামাল বাবু বলেন, ‘নিঃসন্দেহে চট্টগ্রাম আবাহনী ভাল দল। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল। ভাল কিছু করার জন্য ছেলেরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের মধ্যে জয়ের মানসিকতা দেখেছি। মাঠে নেমে কিছু করে দেখাতে চায় ছেলেরা। সেমিফাইনালেও সেটা করতে পারলে ফাইনাল বেশিদূর নয়।’
ঘরোয়া ফুটবলে যেকোন পর্যায়ে আসরে শিরোপা জেতার ক্ষেত্রে রহমতগঞ্জের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। আগে তারা ছিল ভীষণ দুর্বল দল। প্রিমিয়ার লীগে অংশ নিত রেলিগেশন এড়াতে। বছর দুয়েক আগে বড় বাজেটের বিনিময়ে শক্তিশালী দুই-তিনটি ক্লাব থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করে নতুনভাবে দলগঠন করার পরপরই রাতরাতি খোলনলচে পাল্টে যায় গোটা দলের। ২০১৫ সালে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দেয় তারা। ২০১৬ সালে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলেরও শিরোপা করায়ত্ত করে দলটি। ওই বছরেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রানার্সআপ হয়ে রাখে কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
সে কারণেই আজকের ম্যাচে শক্তির নিরিখে চট্টলার দলটিই বেশি ফেবারিট বলে মনে করছেন ফুটবলমোদীরা। তবে রহমতগঞ্জের মূল শক্তি তাদের কোচ কামাল বাবু। শিরোপা প্রত্যাশী চট্টগ্রাম আবাহনীকে চোখ রাঙ্গানোর ক্ষমতা ভালমতোই আছে রহমতগঞ্জের। একটা দুর্বল দলকে কিভাবে সাফল্য পাইয়ে দেয়া যায়, সেটা কামাল বাবু অনেকবারই প্রমাণ করেছেন। ২০১১ সালে তার কোচিংয়েই স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের শিরোপা জিতেছিল আরেক ক্লাব, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। গত প্রিমিয়ার লীগের প্রথম লেগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন রহমতগঞ্জকে। সেই দলের ৯০ শতাংশ এই মৌসুমে না থাকলেও কামাল বাবুর ছোঁয়ায় নতুন দল নিয়েই এই মৌসুমে ফেডারেশন কাপের সেমি পর্যন্ত চলে এসেছে অনায়াসেই। সেই কামাল বাবুর কোচিং টেকনিক-ট্যাকটিক্স আজ কোচ সাইফুল বারী টিটুর চট্টগ্রাম আবাহনীর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।