ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট ॥ এফবিসিসিআই

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ জুন ২০১৭

শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট ॥ এফবিসিসিআই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটকে ‘শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট’ বলে মন্তব্য করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। ব্যবসায়ীদের অপর সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পক্ষ থেকেও ২০১৭-১৮ ঘোষিত বাজেটের প্রশংসা করা হয়েছে। তারা বলছেন, বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার সারাদেশে যে ১০ টি এসইজেড স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে রফতানি ও রেমিটেন্স নিম্নমুখী থাকায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একই সঙ্গে বিশাল অঙ্কের এই বাজেট বাস্তবায়নই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাই বাজেট বাস্তবায়নে প্রথম থেকেই সরকারকে আরও বেশি মনযোগী হতে হবে। বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রভৃতি খাতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আওতায় সুবিধাভোগীদের সংখ্যা এবং মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বছরে দুটি উৎসব ভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী বাজেটেও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বিদ্যুত ও জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে নিঃসন্দেহে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া গতিশীল করবে। তবে এ সকল অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, জাতীয় অর্থনীতির দুটি মূল উৎস রফতানি ও রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি বর্তমানে নিম্নমুখী। এছাড়াও সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষি ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ের এই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এফবিসিসিআই কার্যালয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে। ভ্যাটের বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী মহল সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পূর্বে আইনের কতিপয় বিষয় সংশোধনের জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটে সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা এসবের প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করেছি। মহিউদ্দিন বলেন, বাজেটের ওপর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এফবিসিসিআইর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছি। পরবর্তীতে বাজেট ডকুমেন্টস, অর্থ বিল পর্যালোচনা এবং এফবিসিসিআইর বাজেট এক্সপার্ট ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ৩ জুন আমাদের প্রাথমিক মতামত তুলে ধরব। পরবর্তীতে বিষদ পর্যালোচনা এবং এফবিসিসিআইর সদস্যভুক্ত চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশনের মতামতের আলোকে এফবিসিসিআইর বিস্তারিত মতামত উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও অর্থ ব্যয় সঠিকভাবে করতে না পারায় প্রতিবছরই বাজেট সংশোধন করতে হয়। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। বাজেট বাস্তবায়নে বছরের শুরু থেকেই সুষ্ঠু মনিটরিং জোরদার করা জরুরী। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং তদারকের মান নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। এদিকে বাজেট সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এর প্রশংসা করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। চেম্বারের বোর্ডরুমে আয়োজিত এক আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে সারাদেশে ১০টি এসইজেড স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা প্রশংসার দাবিদার। তিনি এসইজেডগুলোতে বিভিন্ন সেবার সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে ফাস্টট্র্যাকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কার্য সম্পাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এডিপিতে বিভিন্ন প্রকল্প বিশেষ করে বিদ্যুত, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ আহরণ, রেলপথের উন্নয়ন প্রভৃতি খাতে বরাদ্দ বেশি রাখাকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, এ বছর এডিপির বরাদ্দ মোট বাজেটের ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে, যা গতবছর ছিল ৩৩ শতাংশ। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তিনি আরও বলেন, জিডিপির ৫-৬ শতাংশ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে এবং এ খাতের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আরও বেশি হারে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এফডিআই আকর্ষণের অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন একমাত্র পূর্বশর্ত। সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে এলএনজি আমদানি এবং প্রস্তাবিত বাজেটে গ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে এর মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেছে, যার ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশপাশি ব্যবসায় ব্যয় হ্রাস পাবে এবং ব্যবসায়ী সমাজ আরও নতুন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। তিনি বলেন, সরকারী ব্যাংকগুলো হতে ঋণ গ্রহণের বিষয়ে ঢাকা চেম্বার মনে করে, এটি একটি গতানুগতিক প্রক্রিয়া এবং বর্তমানে দেশে তারল্যের সংকট নেই, যার ফলে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দও ব্যাংক হতে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার কমানো হলে ব্যবসায়ী মহলের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও উপকৃত হবেন। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটটি ব্যবসাবান্ধব, তবে বড় আকারের এ বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
×