ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অমিত দাস

দুঃসহ দাবদাহ

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১ জুন ২০১৭

দুঃসহ দাবদাহ

আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। মাটি, পানি, বাতাস চার পাশের পরিবেশ ঘরের দেয়াল সবকিছু থেকেই গরম হাওয়া বের হচ্ছে। ছাতা ছাড়া বাইরে বের হওয়াই দুষ্কর। এক মুহূর্ত সময় রোদে দাঁড়ালেই মনে হয় যেন মাথা ঘুরে পড়ে যাব। এ এক অসহনীয় অস্বস্তিকর অবস্থার উদ্ভব ঘটেছে। প্রতিদিনিই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৫০-৩৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। যা আমাদের জীব-জগতের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এটা জলবায়ূর পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণতার অশনিসংকেত বাংলাদেশে। একটা সময় ছিল যখন বছরের এ সময়টাতে বিছানায় পাটি বিছিয়ে কিংবা তালপাখার বাতাসে গরমে কষ্ট থেকে গ্রাম বাংলার মানুষ রেহাই পেত। কিন্তু এখন পাখার বদলে বৈদ্যুতিক পাখা এসেছে। কিন্তু যখন বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে তখন জনগণ আরও বেশি বিপাকে পড়ে। দাবদাহের দুর্দান্ত দাপটে মানুষ আজ দিশেহারা। কদিনের ভ্যাপসা গরমে ছাগল-মহিষ, কাক-কুকুর, সকলেই খুব কাহিল হয়ে পড়েছে। হাঁস-ফাঁস করছে দম বেরিয়ে যাওয়ার দশা। কলেজ থেকে ফিরবার পথে দেখলাম মগড়া নদীতে ব্রিজের ওপর থেকে এক দল শিশু গরম থেকে বাঁচার জন্য জলে লাফিয়ে পড়ছে। ছেলে মেয়েরা নেত্রকোনায় দত্ত হাই স্কুলের সামনে তালের শাঁস কিনে খাচ্ছে। এই গরমে দুর্ভাগা দরিদ্র জনসাধারণের কষ্টের কোন সীমা নেই। বিশেষ করে কাঠ মিস্ত্রি, রাজ মিস্ত্রি, দিন মজুর, ভ্যান চালক, ধান কলে কুলি-কামিন, তারা সংসার চালতে সূর্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে। তাদের গা থেকে দর দর করে ঘাম ঝরে। এই দাবদাহ তাদের জন্য দুঃখ দুর্দিন, দুর্দশা ডেকে এনেছে। কোথাও এক ফোঁটা বাতাস নেই। গাছের পাতা নড়ে না। গাছের ছায়া নেই। অথচ তারা অনভূতিহীন নির্বাক পশুর মতো খেটে চলেছে। এটা আমাদের মর্মমূলে নাড়া দেয়। এই সব দুঃখী মানুষ কখনও পিপাসায় ডাবের জল কিংবা শীতাতপ ঘরের কল্পনা করতে পারে না। এই সব মানুষই বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়ে আমাদের জন্য আরাম আয়েশের আয়োজন করে। শহরের অবস্থা আরও বেগতিক। সেখানে জনবসতিপূর্ণ এলাকা পরিবেশ দূষণ বেশি বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেশি। শিল্প কারখানা তীব্র যানজট তার ওপর এই দাবদাহ সবকিছু মিলিয়ে নাগরিক জীবন নগরে একেবারে নাজেহাল। এ সময়ে কলেরা, টায়ফয়েড, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, সর্দি জ্বর, হিট স্ট্রোক প্রভৃতি রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। এগুলো পানিবাহিত রোগ। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব কিংবা উন্মুক্ত স্থানের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি জীবাণু সংক্রমিত বাসি ভাজা পোড়া তৈলাক্ত মুখরোচক খাবার খেয়ে এই সমস্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই এগুলো না খাওয়াই উত্তম। তাছাড়া এই গরমে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই এ সময়ে সমাজবাসীর সুস্থ থাকার একমাত্র অবলম্বন হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×