ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাজকিয়া নুর মুন

জমজমাট চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসর

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৩১ মে ২০১৭

জমজমাট চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসর

বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডে শুরু হচ্ছে ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্বিতীয় বৃহত্তর আয়োজন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসর। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আটটি দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শিরোপার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে। দীর্ঘ ১১ বছর পর এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ করে নিয়েছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। ‘এ’ গ্রুপে টাইগারদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও আরেক পরশাক্তি নিউজিল্যান্ড। ‘বি’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারত পাচ্ছে চিরশত্রু পাকিস্তান, দুর্ধর্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কাকে। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালে এই টুর্নামেন্টের নামকরণ করা হয় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এরপর ২০০৪, ২০০৬, ২০০৯, ২০১৩ সালে চারটি আসর অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে আরও দুটি আসর হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে প্রথম আসর বসেছিল বাংলাদেশে। ২০০০ সালে দ্বিতীয়টি কেনিয়ায়। মূলত নন-টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর ক্রিকেটের উন্নতির জন্য তহবিল সংগ্রহের নিমিত্তেই এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা হাতে নেয় আইসিসি। শুরুতে অবশ্য এর নাম ছিল আইসিসি নক-আউট ট্রফি। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে বড় ক্রিকেট আসর ছিল এটি। যেটিকে ‘মিনি ওয়ার্ল্ড কাপ’ও বলা হতো। সরাসরি নক-আউট পদ্ধতিতে এটি অনুষ্ঠিত হতো। কোয়ার্টার ফাইনাল দিয়ে শুরু হতো টুর্নামেন্ট। কোন গ্রুপপর্ব ছিল না। যাতে বিশ্বকাপের মর্যাদা কোনভাবেই কমে না যায়। প্রথমে শুধু টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো সুযোগ পেত। এরপর ১০টি পূর্ণ সদস্য দেশ ও আরও দুটি সহযোগী দেশ টুর্নামেন্টে অংশ নিত। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। টুর্নামেন্ট শুরুর ছয় মাস আগে শুধু ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা আটটি দলএ এখন সুযোগ পাচ্ছে। সেই হিসেবে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নেয় দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ। শুরুতে প্রতি দুই বছর পরপর অনুষ্ঠিত হলেও এখন প্রতি চার বছর পর হচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ২০০৪ ও ২০১৩ সালে দুবার রানার্সআপ হয়েছিল এবারের আয়োজক ইংল্যান্ড। কিন্তু শিরোপার স্বাদ পায়নি তারা। ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারার বাজি, এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতবে ইংল্যান্ড। হাই-প্রোফাইল ব্যাটিং ও বোলিং ইউনিট নিয়ে ইংলিশরা টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট। নিজেদের পরিকল্পনামতো খেলতে পারলে নিজেদের দিনে সেরা তারা। সব কিছু ঠিক থাকলে এবার হয়ত শিরোপার স্বাদ পেতেও পারে ইংল্যান্ড। ইয়ন মরগানের নেতৃত্বে ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়ে মাঠে নামছে স্বাগতিকরা। ঘরের মাঠের সেরা ক্রিকেটাররাই রয়েছে দলে। মরগান, জোট রুট, বেন স্টোকস, জস বাটলাররা সেরা সময় পাড় করছেন। বোলিংয়ে লিয়াম প্লাঙ্কেট, ক্রিস ওকস ও মার্ক উড দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। মাত্রই ঘরে মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে জিতেছে ইংল্যান্ড। দুই ম্যাচেই তিন শতাধিক রান করেছে তারা। মরগান, স্টোকস পেয়েছেন সেঞ্চুরির স্বাদ। এছাড়া শেষ ছয়টি ওয়ানডে সিরিজের পাঁচটি জিতেছে ইংল্যান্ড। মরগান বেশ ভালভাবেই দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালেও দলে ছিলেন তিনি। দলের হার সামনে থেকে দেখেছিলেন। এবার আর হতাশ করতে চান চান ইংলিশ অধিনায়ক। বড় টুর্নামেন্টে স্বপ্নের শিরোপা জিততে চান। ঘরের মাঠে খেলা বলেই ইংল্যান্ডকে সবাই ফেভারিট মনে করছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম শিরোপার স্বাদ পায় গত আসর ২০১৩ সালে। সেটাও ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির হাত ধরে। ধোনি এবার শুধু উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তার নেতৃত্বেই ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মাঠে নামবে টিম-ইন্ডিয়া। চ্যাম্পিয়নদের নেতৃত্বে বর্তমান সময়ের সেরা অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। গত আসরের নয় ক্রিকেটার এবারের দলে আছেন। তারা হলেন- কোহলি, ধোনি, শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, দিনেশ কার্তিক, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার। নতুন করে যোগ দিয়েছেন অজিঙ্কা রাহানে, যুবরাজ সিং, কেদার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, মোহাম্মদ শামি ও জাসপ্রীত বুহরাহ। ঘোষিত দলে ছিলেন মানিশ পান্ডে। কিন্তু আইপিএলে ইনজুরিতে পড়ায় তাকে বাদ দিয়ে নেয়া হয়েছে দীনেশ কার্তিককে। নামগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকাদের। বিরাট কোহলি যেদিন জ্বলে উঠবেন সেদিন একাই পুষিয়ে দেবেন। এছাড়া ধোনি, যুবরাজ, রোহিত, ধাওয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরীক্ষিত পারফরমার। বোলিংয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দ্যুতি ছড়ানো পারফরমারদের নিয়েছে ভারত। সব মিলিয়ে বোলিং, ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি ভারসাম্য দল গঠন করেছে তারা। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হতে পারে ধোনির উপস্থিতি। অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর ব্যাট হাতে সময়টা ভাল কাটছে ধোনির। কিন্তু সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারছেন না। ধোনি ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তার পাফরম্যান্সের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। ধোনির পাশাপাশি চাপে রয়েছেন বিরাট কোহলিও। বিশ্বমঞ্চে এবারই প্রথম ভারতকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন কোহলি। ধোনির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়া কোহলি ভারতকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কতদূর নিতে যেতে পারেন, সেটাই দেখার। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোন মূল্যে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিততেই হবে তাদেরকে। নিজেদের আত্মবিশ্বাসে প্রতিপক্ষকে এরই মধ্যে হুমকিও দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানে থেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নিচ্ছে এবি ডি ভিলিয়ার্সের দল। বরাবরের মতো এবারও তারা হট-ফেবারিট। সবশেষ বিশ্বকাপের মতো সবশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় তারা। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা ‘বি’ গ্রপের হট ফেবারিট। ভিলিয়ার্স অবসরের আগে দেশকে একটি ট্রফির স্বাদ দিতে চান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেই ট্রফি জয়ের বড় সুযোগ দেখছেন মারকুটে এ ব্যাটসম্যান। ব্যাটিংয়ে-বোলিংয়ে এ দলটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে খেলছে দলটি। পেস বোলিংয়ের মূল ভরসা ডেল স্টেইন না থাকলেও তরুণ কাগিসো রাবাদা রয়েছেন প্রোটিয়া শিবিরে। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা না, পুরো টুর্নামেন্টের নজরে থাকবেন রাবাদা। ২২ বছর বয়সি এ পেসারের ওপর দক্ষিণ আফ্রিকার সাফল্য অনেকাংশ নির্ভর করছে। ২০০০ সালে কেনিয়ায় বসে দ্বিতীয় আসর। সেবার আয়োজক কেনিয়াসহ মোট ১১টি দেশ অংশ নেয়। সবাইকে অনেকটা অবাক করেই সেবার শিরোপা ঘরে তুলে নিউজিল্যান্ড। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের একমাত্র শিরোপা সেটিই। গত বছর ২০১৫ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেললেও শিরোপার স্বাদ পাওয়া হয়নি ব্ল্যাক-ক্যাপসদের। অধিনাযক কেন উইলিয়ামসন যে ম্যাচে জ্বলে উঠবেন সেদিন হাই-স্কোরিং ম্যাচ হবে, নিশ্চিত। এছাড়া মার্টিন গাপটিল, রস টেইলর, টম লাথাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও নেইল ব্রুমরা সেরা সময় পার করছেন। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং সাফল্য অনেকটাই তাদের ওপর নির্ভর করছে। ওদিকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ গ্রহণের ঠিক আগ মুহূর্তে দুটি বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হলো শ্রীলঙ্কাকে। প্রথমত, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হার। দ্বিতীয়ত, আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে অবনমন। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে টপকে আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠেছে। শ্রীলঙ্কার এক ধাপ অবনবমন হয়েছে। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তাদের চ্যালেঞ্জ একাধিক। কিন্তু নতুন করে গড়ে ওঠা লঙ্কানরা কি অসাধারণ কিছু করতে পারবে? শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ মনে করেন ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নিচ্ছে তারা। তবে ভালো করতে আত্মবিশ্বাসী। যদিও শেষ কয়েকমাস একাধিকবার হারের তিক্ত স্বাদ পেতে হয়েছে। ২০০২ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লঙ্কানরা।
×