ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ঢাকা কলেজ মিলনায়তনেই আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ মে ২০১৭

সেই ঢাকা কলেজ মিলনায়তনেই আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রখ্যাত সাংবাদিক কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ১৯৫০ সালে বরিশাল থেকে মেট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে এসে ভর্তি হন। তখন ঢাকা কলেজের অবস্থান ছিল পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে। টিনের ঘরে বসেই ক্লাস করতেন শিক্ষার্থীরা। এরপরও ঢাকা কলেজ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ কলেজ। যে শ্রেষ্ঠত্ব এখনও ধরে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটি। মঙ্গলবার রাজধানীর সেই ঢাকা কলেজ মিলনায়তনেই বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। ‘আমার ভাইয়ের রঙ্গে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি’ কালজয়ী এই গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তখনকার স্মৃতিচারণ করে অনুষ্ঠানে বলছিলেন, আমাদের অধ্যক্ষ ছিল শামসুজ্জামান খান চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি আদেশ দেন, কোন শিক্ষার্থী যাতে আন্দোলনে যোগ না দেয়। কিন্তু অনেকেই তার সেই আদেশ মানেননি। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারির ধর্মঘটে যোগ দেই আমরা অনেকেই। ২১ ফেব্রুয়ারিতেও ঢাকা কলেজ থেকে সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেই আমরা। সেদিন অনেক গুলিবর্ষণ হয়। ঢাকা মেডিক্যালে দেখি একজন শহীদের লাশ। তার মাথার খুলি উড়ে গেছে। এরপরই আমি আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো কবিতাটি লেখা শুরু করি। এ ভাষা সৈনিক বলেন, প্রথমে এটি কবিতা হিসেবে লেখা হলেও পরে গান হিসেবে সুর করা হয়। ঢাকা কলেজের এক অনুষ্ঠানেই আবার সেই গান গাওয়া হয়। এই গান সব জায়গায় ছড়িয়ে যায়। এতে সরকার ক্ষুব্ধ হয়। আমিসহ ১১ জন শিক্ষার্থীকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও আন্দোলনের মুখে একমাস পরই সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ১৯৫৪ সালে এই গানে নতুন করে সুর দেন সুরকার আলতাফ মাহমুদ। যা এখনও চলছে। এই গানটি বিশ্বের ১১টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তবে সুর ঠিক রাখা হয়েছে। গাফ্ফার চৌধুরী আরও বলেন, এই গানকে সম্মান জানানো মানে ভাষা আন্দোলনকে সম্মান জানানো, ভাষা শহীদদের সম্মান জানানো। তবে আমি এখনও ঢাকা কলেজের ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করি। আমার একটা আশা, এই কলেজ একদিন বিশ্ববিদ্যালয় হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলছিলেন, আজ ঢাকা কলেজের আনন্দের দিন। এই কলেজের ইতিহাস ঐতিহ্য ১৭৬ বছরের। এই কলেজেরই কৃতি ছাত্র আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি ভাষা আন্দোলনের একজন পুরোধা। কালজয়ী এক গানের রচয়িতা। যতদিন এই দেশ থাকবে, ততদিন তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার লেখা আমাদের পথ দেখায়। তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। সমগ্র শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে এই ভাষা সৈনিককে অভিনন্দন জানাই। সংবর্ধনায় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে মানপত্র, শুভেচ্ছা স্মারক, বই ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, সাবেক সচিব খন্দকার রাশিদুল হক, সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রেনু বালা গোপ প্রমুখ।
×