ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মিসরে সন্ত্রাসী হামলা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৯ মে ২০১৭

মিসরে সন্ত্রাসী হামলা

মিসরে মুখোশপরা কয়েকজন বন্দুকধারীর আক্রমণে শিশুসহ ৩৫ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়। কপটিক খ্রীস্টানদের ওপরই এই হামলা চালানো হয়। মিসরের রাজধানী কায়রোর ১৫৫ মাইল দক্ষিণে মিনইয়া প্রদেশে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বন্দুক চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরা সবাই গণপরিবহনের যাত্রী। সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে তিনটি পিকআপ ট্রাকযোগে হামলাকারীরা কপটিক খ্রীস্টানদের বহনকারী বাসে গুলিবর্ষণ করে। বাসযাত্রীরা মিনইয়া প্রদেশের স্যান্ট স্যামুয়েল গির্জায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বাসগুলো অতর্কিত আক্রমণের শিকার হয়। সন্ত্রাসীদের তল্লাশি করতে নেমেছে মিসরের নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মিসরের মরুভূমিতেও সেনাবাহিনীর টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই হামলার দায়ভার কেউ স্বীকার করেনি বলে সংবাদ মাধ্যম নিশ্চিত করেছে। দেশটিতে তিন মাসের জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। তবে মিসরের কপটিক খ্রীস্টানদের ওপর হামলা এই প্রথম নয়। এর আগের আক্রমণগুলোর দায় স্বীকারও করা হয়েছে আইএসের পক্ষ থেকে। ৯ এপ্রিল তাস্তা এবং আলেকজান্দ্রিয়ায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। এই হামলাও কপটিক চার্চকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছিল। শুক্রবারের হামলায় দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি যে কোন মূল্যে এই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। জঙ্গীদের সহিংস কর্মকা-ের মোকাবেলায় সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখারও আশ্বাস দিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট। জানা যায়, হতাহতের বেশিরভাগই শিশু। মিনইয়া প্রদেশের গবর্নর ইমাম আল বেদোয়াইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী সন্ত্রাসীরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের সাহায্যে এই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রোমান ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস এই ধ্বংসাত্মক সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানান। এই নির্মম ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছেন তাদের প্রতি ফ্রান্সিস আন্তরিক সমবেদনাও জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়াও মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ধর্মীয় নেতারা এই জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানান। মিনইয়ার এই সশস্ত্র আক্রমণ মুসলিম এবং খ্রীস্টানদের সমন্বিত ঐক্যের বাঁধনে ফাটল ধরবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এসব ধর্মীয় নেতা। মিসরকে অস্থিতিশীল এবং বিশৃঙ্খল করতেই এই হামলা চালানো হয় বলে নেতারা উল্লেখ করেন। কপটিক অর্থডস্ক চার্চ মিসরে খ্রীস্টানদের প্রধান গির্জা। কপটিকরা বেশিরভাগ মিসরের অধিবাসী। দেশের বাইরেও গির্জার প্রায় ১০ লাখ সদস্য আছে। এই কপটিক গির্জায় নিজস্ব পোপ রয়েছেন। যারা সেইন্ট মার্কের উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত। যিশুখ্রিস্টের মানবিক চেতনা নিয়ে খ্রীস্টানদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের হিসেবেই এই কপটিক খ্রীস্টানদের অভ্যুদয়। রোমান সাম্রাজ্যেও ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের দ্বারা এই কপটিকদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ইতিহাসে বিধৃত আছে। মিসর মুসলিম দেশ, সেখানে কপটিক খ্রীস্টানদের ওপর হামলা হচ্ছে মাঝে মাঝে। যে কোন জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ সমর্থন করে না। জঙ্গী হামলা রুখতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক ঐক্য।
×