ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে লাগল দু’দিন, পুড়েছে তিন একর বন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ মে ২০১৭

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে লাগল দু’দিন, পুড়েছে তিন একর বন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী টহল ফাঁড়ির বনে লাগা আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ। শুক্রবার সকালে লাগা আগুন শনিবার বিকেল চারটার দিকে নেভানোর কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় জনগণ ঘটনাস্থল থেকে ফিরে গেছে। দুই একর বনের লতাগুল্ম পুড়েছে বলে বন বিভাগ দাবি করলেও বনজীবী ও স্থানীয়রা বলছেন, কমপক্ষে তিন একর বনভূমি পুড়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও সাইদুল ইসলাম বলেন, আগুন নিভে গেছে, ধোঁয়ার কু-লী দেখা যাচ্ছে না। তবে অগ্নিকা-ের স্থল নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ আগুন নাশকতার নাকি দুর্ঘটনা তা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে বলা যাবে। তিন সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মাসুদুর রহমান সরদার বলেন, বন বিভাগ ও স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় পাঁচ একর এলাকাজুড়ে ফায়ারলাইন কাটা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ভোলা নদী তিন কিলোমিটার দূরে হওয়ায় আগুন নেভাতে কষ্ট হয়েছে। সুন্দরবন বিভাগের সিএফও আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় জনতা, বন বিভাগ এবং বাগেরহাট, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট যৌথভাবে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছে। আগুনে প্রায় দুই একর বনভূমির লতা-গুল্ম পুড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে সুন্দরবনের আগুন নিভে গেলেও শঙ্কা কাটছে না পরিবেশবাদী সংগঠন ও সুন্দরবনপ্রেমী মানুষের। প্রতি বছর এ শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনে আগুন লাগার বিষয়টি কোন সাধারণ ঘটনা নয়। তাদের মতে, সুন্দরবনকে ধ্বংস করতে এক শ্রেণীর আগুন সন্ত্রাসী তাদের নিজেদের স্বার্থে এমন নাশকতা করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এমন নাশকতা চলতেই থাকবে। সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটির শরণখোলা উপজেলা আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম আকন বলেন, সুন্দরবন রক্ষা ও আগুন সন্ত্রাস বন্ধ করতে হলে সকল প্রকার বনজসম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের আগুন সন্ত্রাসীদের শাস্তি না হওয়ায় সুন্দরবনে আগুনের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। গতবার আগুন লাগার পর বন বিভাগ লোকালয়ের পাশ থেকে কাঁটাতারের বেড়া ও বনের বিলগুলোতে পুকুর খননের যে ঘোষণা দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবন অনেকটা রক্ষা হতো। তিনিও সুন্দরবনে সাধারণের প্রবেশাধিকার ও বনজসম্পদ আহরণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। আগুন নেভানোর কাজে জড়িত স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির হোসেন খান বলেন, দু’দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে দুই-তিন শ’ গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে আগুন নিভিয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদিজ্জামান বলেন, আগুন নেভানোর কাজ শনিবার বিকেলে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনাস্থলসহ নিকটবর্তী এলাকা বন বিভাগের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আমাদের তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির তদন্তকাজ চলছে।
×