ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিকল্প ভাবা বাঞ্ছনীয়

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৫ মে ২০১৭

বিকল্প ভাবা বাঞ্ছনীয়

উত্তরবঙ্গ ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে টানা ৩ দিন পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে প্রায় থেমে গিয়েছিল উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় অর্থনীতির চাকা। তখন সংশ্লিষ্ট সব জেলায় প্রায় সব ধরনের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেড়েছে হাহাকার। অনেক স্থানেই ট্রাকে পণ্যবোঝাই করার পর শুরু হয়েছিল আকস্মিক ধর্মঘট। ফলে চোখের সামনে প্রতিদিন পচেছে কোটি কোটি টাকার বিবিধ কৃষিপণ্য, আম, লিচু, তরিতরকারি, শাক-সবজি। স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে কৃষিপণ্যের চাহিদা নেমে এসেছিল শূন্যের কোটায়। ফলে কৃষক ও খামারিদের মাথায় হাত পড়েছে। অনেক স্থানে গাছ ও খেত থেকে আহরিত পণ্যদ্রব্য সড়কে এবং রাস্তায় ফেলে আহাজারি করতে দেখা গেছে কৃষকদের। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ট্রাকের বাম্পার, সাইড এ্যাঙ্গেল ও হুক খোলার সরকারী আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ ৭ দফা দাবিতে আহূত এই ধর্মঘটে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন হয়েছে লাখো-কোটি কৃষক ও খামারি। অসহায় কৃষকদের জিম্মি না করে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের উচিত ছিল দাবি ও অধিকার আদায়ে বিকল্প কোন পথে অগ্রসর হওয়া। কেননা, সামনেই রমজান। সে অবস্থায় সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের জিম্মি করে দাবি আদায় সমর্থনযোগ্য নয় কোন অবস্থাতেই। এতে একদিকে যেমন কৃষিপণ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে, অন্যদিকে দাম না পেয়ে চাষাবাদে আগ্রহ হারাবে কৃষক। গত কয়েক বছরে দেশে বিপ্লব ঘটে গেছে কৃষিতে। ডিজিটাল কৃষিসহ হাইব্রিড পদ্ধতি চালুর ফলে একেবারে বীজতলা থেকে শুরু করে সার, সেচ, কীটনাশক, আবহাওয়া, জলবায়ু, ফসল উৎপাদন, বাজার পরিস্থিতিসহ অন্যবিধ সমস্যা নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময়, পরামর্শ ও প্রতিকারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে। এর অনিবার্য ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষি ব্যবস্থাপনায়, সুফল পাচ্ছে কৃষক, সর্বোপরি বাড়ছে ফসল উৎপাদন। তার মানে ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থা দেশের কৃষিতে প্রায় বিপ্লব নিয়ে এসেছে। আবহমানকাল ধরে প্রচলিত গবাদিপশুচালিত লাঙ্গল-জোয়ালের দিন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। হাইব্রিড বীজ, জিএম বীজসহ আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ফসল, শাকসবজি, মৎস্য, পোল্ট্রি, ফলফলাদির উৎপাদন বাড়িয়েছে বহুগুণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি। বগুড়ার সান্তাহারে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম সৌর শক্তিচালিত অত্যাধুনিক বহুতল বিশিষ্ট খাদ্যগুদাম। প্রতিবছর উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক খাদ্যগুদামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ফল উৎপাদনে সপ্তম। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এই উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। এখন নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। গমের ঘাটতি এখনও আছে। এর পাশাপাশি ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাংস, দুধ, মাছ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, শুধু ভাতে পেট ভরে বটে, তবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। গত কয়েক বছরে শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন বাড়লেও মাছ, দুধ, মাংস জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনে বিপুল ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। এদিকে সবিশেষ ও সমন্বিত দৃষ্টি দিতে হবে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক চাহিদা ও যোগাননির্ভর ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং বাজার ব্যবস্থা অপরিহার্য। সরকার সম্প্রতি দেশের সব খাদ্যগুদামকে অনলাইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রশংসনীয়। এর পাশাপাশি প্রয়োজন অত্যাবশ্যক অত্যাধুনিক খাদ্যগুদাম নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে মানসম্মত খাদ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা। তা হলেই বহুমুখী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিশ্চিত হবে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা। সে অবস্থায় যখন তখন পরিবহন ধর্মঘট ডেকে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে জিম্মি করা যাবে না কিছুতেই।
×