ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাফুফের জরুরী সভায় সবচেয়ে জরুরী বিষয়টাই ছিল অনুপস্থিত

অর্ডের কোচিং অভিজ্ঞতা নিয়ে ধূম্রজাল

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৪ মে ২০১৭

অর্ডের কোচিং অভিজ্ঞতা নিয়ে ধূম্রজাল

রুমেল খান ॥ কত রকম তামাশাই না করতে পারে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তারা জরুরী সভা করে অথচ কিনা সেই সভায় সবচেয়ে জরুরী বিষয়টাই আলোচনা করেনি। এমন কা-ই দেখা গেছে মঙ্গলবার বাফুফে ভবনে। কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ক্রীড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন তির্যক প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। তারা একপর্যায়ে রণেভঙ্গ দিয়ে ব্রিফিং ঠিকমতো শেষ না করেই যেন সভাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে বাঁচেন। গত ১৭ মে বাফুফে জানিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের নতুন কোচ পাওয়া গেছে। তিনি ইংলিশ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টধারী। নাম এ্যান্ড্রু অর্ড। বয়স ৩৭। এই ঘোষণাটিই চূড়ান্তভাবে বাফুফে গণমাধ্যমকে জানালো মঙ্গলবার। অথচ এটি নতুন কোন ইস্যু নয়। এরচেয়ে জরুরী বিষয় ছিল সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগে ভয়াবহ পাতানো খেলার বিষয়টি। যাতে ক্ষুব্ধ হয়ে লীগের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক নির্ধারিত সময়ের আগেই তাদের স্পন্সরশিপ প্রত্যাহার করে নেয়ার হুমকি দিয়েছে বাফুফেকে। বাংলাদেশের ফুটবলে পাতানো খেলার খবর নতুন নয়। পাইওনিয়র থেকে শুরু করে একেবারেই সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পাতানো খেলা হয়ে থাকে। সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগে এবার পাতানো খেলা নিয়ে তুলকালাম কা- চলছে। বিষয়টি ফুটবলপাড়ায় ‘ওপেন সিক্রেট’। অথচ বাফুফে কিনা এই খবর পাচ্ছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে। আসলে বাফুফে কখনই পাতানো খেলার মূলোৎপাটন করতে পারেনি। এ কারণেই দেশের ফুটবলের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোটায়। কোচের প্রসঙ্গে আসা যাক। মঙ্গলবার বাফুফে জানিয়েছে নতুন কোচকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। ছয় মাসের মধ্যে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে যেতে পারবেন না। তেমনি বাফুফেও তাকে বরখাস্ত করতে পারবে না। এক বছর পর উভয়পক্ষের সম্মতিতে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। আপাতত জাতীয় দলের কোন খেলা নেই। তবে এএফসির বয়সভিত্তিক দুটি টুর্নামেন্ট আছে এ বছর। আপাতত দুটি বয়সভিত্তিক (অ-২৩ এবং অ-১৯) কাজ দিয়ে শুরু হবে অর্ডের বাংলাদেশ মিশন। এরপর সেপ্টেম্বরে ফিফা প্রীতিম্যাচ (হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে), ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ... আপাতত এই হচ্ছে অর্ডের কাজ। ন্যাশনাল টিম কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল জানান, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং সাফ ফুটবলের ফাইনালে খেলতে চাই আমরা। যদিও গত তিনটি সাফ ফুটবল আসরের গ্রুপপর্ব থেকেই আমরা বিদায় নিয়েছি। কোচ অর্ডের শর্র্ত অনুযায়ী তাকে প্লেন টিকেট দিতে হবে। তিনি পরিবার ছাড়া আসবেন। বাংলাদেশে একাই থাকবেন। জুনের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে এসে তিনি বাফুফের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেই কাজ শুরু করবেন।’ তাবিথ আরও জানান, অর্ড নাকি ‘সকারুস’ (অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ফুটবল দল) দলের হয়েও কাজ করেছেন। সেটা স্কাউট (প্রতিপক্ষের দলগুলোর ওপর গোয়েন্দাগিরি এবং প্রতিভা অন্বেষণ করা)। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছেÑ ইন্টারনেট ঘেঁটে তাবিথের এই বক্তব্যের কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরও বিস্মযকর ব্যাপারÑ তার কোচিং ক্যারিয়ার তেমন সমৃদ্ধ নয়, তেমনি বাংলাদেশের আগে কোন জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও তার কোন অভিজ্ঞতা নেই। সর্বশেষ ২০১৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার দল পার্থ গ্লোরির সহকারী কোচ হিসেবে আছেন তিনি। যার মেয়াদ শেষ হবে ৩১ মে। প্রশ্ন হচ্ছে যিনি মূলত স্কাউট এবং সহকারী কোচ, সেই অর্ডের হাতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল তুলে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক? অনেক ফুটবলমোদীর আশঙ্কাÑ গত আট বছরে আট বিদেশী কোচ নিয়োগ দিয়ে বাফুফে যেহেতু ‘অশ^ডিম্ব’ প্রসব করেছে, এবার সেই একই ফল হবে। জাতীয় দলের ফিফা র‌্যাঙ্কিং অর্ডের আমলেই হয়তো ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ পূর্ণ করবে। তবে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী শুনিয়েছেন আশার বাণী, ‘আপনারা গত আট বছর যেহেতু অনেক ধৈর্য ধরেছেন, এবার না হয় আরেকটু ধৈর্য ধরুন। এই কোচকে একটু সময় দিন। দেখুন তিনি কি করেন। সার্বিক বিবেচনায় আমাদের কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য অর্ডই সঠিক কোচ।’ অর্ডের পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে মুখ খোলেনি বাফুফে। তবে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ভাল টাকাই পাবেন অর্ড। অঙ্কটা প্রায় ৩৫ হাজার ডলার। তবে ক্রুইফের বেতন সময়মতো পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বাফুফের যে বদনাম হয়েছিল, অর্ডের বেলাতেও যে এমনটা হবে নাÑ এই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি বাফুফে। ২০১০ সালে থাইল্যান্ডের দল বেক তেরো সাসানার কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা অর্ড ২০১২ সালে দায়িত্ব নেন থাইল্যান্ডেরই মুয়াং থং ইউনাইটেডের ‘বি’ দলের। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার অর্ড খেলোয়াড়ী জীবনে (১৯৯৫-২০০০) ছিলেন সেন্টার ব্যাক। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে দুটি সেমি-প্রফেশনাল ক্লাবে খেলেছেন। কখনও জাতীয় দলে খেলেননি অর্ড।
×