ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্রিগেড গঠন

বালিকারা আর বধূ হবে না- দৃপ্ত শপথ শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ মে ২০১৭

বালিকারা আর বধূ হবে না- দৃপ্ত শপথ শিক্ষার্থীদের

সমুদ্র হক ॥ ওরা গৃহস্থ ও কৃষক পরিবারের মেয়ে। লেখাপড়া শিখতেই হবে। এমনই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারা। তবু মাঝেমধ্যে বাড়ির অভিভাবদের ঘটকের সঙ্গে ফিসফাস করতে দেখে। বুঝতেও পারে। কখন যে জোর করে বিয়ে দেয়। এমন শঙ্কা আছে। গ্রামের বখাটেরও উপদ্রব কম নয়। স্কুলে যাওয়ার পথে টিজ লেগেইে আছে। কেউ শিস দেয়, কেউ গান গায়, কেউ পিছু নেয়। এ প্রজন্মের মেয়েরাও অনেকটা বুদ্ধিমতি। বখাটে রোমিওদের পাত্তা না দেয়ার কৌশল শিখেছে। তবে বিপাকে পড়তে হয় দুই ক্ষেত্রে। ১. কোন দুর্বলতায় প্রেমে পড়লে। ২. অভিভাবকগণ নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার আগেই জোর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসালে। এই দুটি ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বালিকা বধূ হওয়ার আয়োজনের খবর প্রশাসনের কাছে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন মাঠ পর্যায়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। তারপরও অনেক খবর তাদের কাছে পৌঁছে না। এমনও দেখা গেছে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। তারপর অন্য এলাকায় গিয়ে অভিভাবকরা বিয়ে দিয়েছেন। অনেক সময় বিয়ের কাজি জন্ম সনদ দেখে না। আবার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স বাড়িয়ে জন্ম সনদ নেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে যখন এমনই অবস্থা তখন বগুড়ার যমুনার তীরের ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীরা ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ের পিঁড়িতে না বসার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিল। উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠান হলোÑ স্কুল চত্বরে। শিক্ষার্থীরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলল, কোন অবস্থাতেই তারা বালিকা বধূ হবে না। কেউ যদি নির্ধারিত বয়সের আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বলে তাহলে সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের কাছে গিয়ে সহযোগিতা চাইবে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ধুনটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া সুলতানা। তিনি বালিকাদের কাছে অঙ্গীকার করলেন, বালিকাদের বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর চেষ্টা করা হলে কোনভাবে খবরটি তার কাছে পৌঁছালে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। এমনকি রাতেও যদি তার (ইউএনও) কাছে খবর পৌঁছানো যায় তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেবেন। দরকার হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। সোমবার বিকেলে সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহানারা খাতুন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর প্রায় ৪শ’ বালিকাকে একত্রিত করে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অবহিতকরণ সভা করেন। এ সময়ই শপথ গ্রহণ করানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম তৌহিদুল আলম মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান নূরজাহান আকতার রিক্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, নারী উন্নয়ন ফোরাম বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমা আকতার, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহাদৎ হোসেন মিলু, সহকারী শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম। শিক্ষার্থী ফারজানা আকতার বাঁধন শপথ নেয়ার পর বলল, শুধু তার গ্রামেই নয় প্রয়োজনে আশপাশের গ্রামে কেউ বালিকাদের বিয়ে দিতে চাইলে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। সহপাঠী ললিতা রানী দাসের কথা দরকার হলে প্রতিটি গ্রামে গিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বালিকাদের নিয়ে ব্রিগেড গঠন করবে। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। এ কাজে মুরুব্বিদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান বাঁধন। ধুনটের ইউএনও রাজিয়া সুলতানা বললেন, তার উপজেলায় আগে বাল্যবিয়ে হত। কয়েক দিন আগে কয়েকটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তিনি কঠোর ভূমিকা নেয়ায় এখন অনেকটা কমেছে। প্রতিনিয়ত এলাকায় গিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচীতে অংশ নেন। নদীভাঙ্গন কবলিত এ এলাকার অনেক মানুষের বাস দারিদ্র্য সীমার নিচে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারী প্রচেষ্টাগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরই মধ্যে বাল্যবিয়ে এক অভিশপ্ত অধ্যায় হয়ে আছে। তা দূরীকরণে প্রশাসন ও বেসরকারী সংস্থা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের কাউন্সিলিং করবে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহানারা খাতুন বললেন, স্কুলের কোন মেয়ে বেশি দিন অনুপস্থিত থাকলে তিনি দ্রুত খোঁজ নেন। কোনভাবে বাল্যবিয়ের খবর পেলে তাৎক্ষণিক প্রশাসনের কাছে গিয়ে সহযোগিতা চান।
×