ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর রাত্রীকালীন প্রস্রাব ॥ পিতামাতার করণীয়

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২৩ মে ২০১৭

শিশুর রাত্রীকালীন প্রস্রাব ॥ পিতামাতার করণীয়

শান্ত এবার ৭ বছরে পা ফেলল। গলায় তাবিজ ঝোলানো, ছেলেটি বোকার মতো চেয়ে আছে। বাবা-মা ওর প্রতি খুবই বিরক্ত। তাদের একটাই অভিযোগ, এত বড় ছেলে বিছানায় প্রস্রাব করে, মায়ের কথা এত মারলাম, বকলাম অথচ অভ্যাস পাল্টাল না। ফকির-কবিরাজের কাছে ধরনা দিয়েও রক্ষা হলো না। সবাই রুবেলকে এজন্য বকাবকি করে। ধীরে ধীরে সে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। একা একা থাকে, কেমন যেন মনমরা হয়ে যাচ্ছে। সাইক্রিয়াট্রিস্টের পরামর্শে অবশেষে ওকে নিয়ে আসা হলো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে। সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ মতে বিহেভিয়ার থেরাপি ওষুধের মাধ্যমে পুরো পরিবারটিতে শান্তি ফিরে এলো। এখন রুবেল নিয়মিত স্কুলে যায়, লেখাপড়া করে, রাতে আর বিছানায় প্রস্রাব করে না, শুনতে হয় না বাবা-মায়ের ভর্ৎসনা আসুন দেখি শান্ত কী সমস্যায় ভুগছিল তা নিয়ে আলোচনা করি। পরিসংখ্যান মতে পাঁচ বছর বয়সে ১০ শতাংশ, আট বছর বয়সে ৪ শতাংশ এবং ১৪ বছর বয়সে ১ শতাংশ ছেলেমেয়ের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করার প্রবণতা থাকে। তবে রাত্রীকালীন প্রস্রাব করা ছেলেদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়। কোন শিশু যদি পাঁচ বছর পার হওয়ার পর সপ্তাহে দু’দিন এবং পরপর তিন মাস ধরে রাতে অথবা দিনে বিছানায় অথবা কাপড়ে প্রস্রাব করে তবে তাকে ফাংশনাল এনিউরেসিস বলা হয়। তখন তার চিকিৎসার দরকার হয়। এই শান্ত ছেলেটি ফাংশনাল এনিউরেসিস রোগে ভুগছিল। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় : ১. ৭০ শতাংশ বাচ্চার আত্মীয়স্বজনের মধ্যে এ সমস্যা থাকতে পারে। ২. মানসিক চাপ : বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়া, মায়ের কাছ থেকে বাচ্চা আলাদা থাকা, নতুন ভাইবোনের জন্মগ্রহণ করা, খুব গরিব ঘরের বাচ্চা, একই পরিবারে অনেক ছেলেমেয়ে, বার বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ইত্যাদি। ৩. আরও কিছু কারণের মধ্যে ব্রেনের মেচুরেশন দেরিতে হয় বলে ধারণা করা হয়। ৪. এছাড়া আরও কিছু ব্যাপার খতিয়ে দেখা দরকার। যেমন- বাচ্চার টয়লেট ট্রেনিং ঠিকমতো হয়েছে কি-না এবং শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের ধারণা কেমন, দেখা গেছে যে নেতিবাচক ধারণাও একটা কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় যাকে আমরা নেগেটিভ এটিচুড বলি। ৫. বাচ্চাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় মূত্রনালির ইনফেকশন, ডায়াবেটিস, মৃগীরোগ আছে কি-না খতিয়ে দেখা উচিত। ৬. সামাজিক কারণ। ৭. টেনশন যেমনÑ প্রথম প্রথম স্কুলে যাওয়া, অন্য জায়গায় বেড়াতে যাওয়া। ৮. বাচ্চার ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে : ১. বাচ্চারা তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। হীনম্মন্যতায় ভোগে। ২. খেলাধুলা করার আগ্রহ, উৎসাহ-উদ্দীপনা কমে যায়। ৩. পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমে যায়। ৪. বাচ্চার মধ্যে বিষণœতার জীবাণুটি বাসা বাঁধতে পারে। ৫. আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া কমে যায়। ফলে বাচ্চার মধ্যে যে হাসিখুশি আর চঞ্চলতা ছিল তা ধীরে ধীরে লোপ পেতে পারে। ৬. বাচ্চা নার্ভাস ও টেনশনে ভোগে। চিকিৎসা ১. বাবা-মাকে এ রোগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া যে, এটি একটি সাধারণ সমস্যা। এজন্য বাচ্চাকে মারবেন না বা তাকে দায়ী করবেন না। ২. শিশুটিকে আশ্বস্ত করা যাতে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। ৩. রাতে পানি কম খাবে। ৪. রাতে উঠিয়ে প্রস্রাব করানো। ৫. একটি চার্ট ব্যবহার করা। ৬. ওষুধের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। বাবা-মায়ের প্রতি উপদেশ রাতে বা দিনে ঘুমালে শিশুরা কাপড়ে বা বিছানায় ইচ্ছা করে প্রস্রাব করে না। এটি একটি রোগ। এজন্য আপনার সোনামণিকে অযথা দায়ী করবেন না। সঠিক জায়গায় চিকিৎসা নিন, শিশুটি সুস্থ হয়ে যাবে। ডাঃ এটিএম রফিক উজ্জ্বল শিশু বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
×