ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় বনানী থানার কর্মকর্তাদের কৈফিয়ত তলব

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৩ মে ২০১৭

ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় বনানী থানার কর্মকর্তাদের কৈফিয়ত তলব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্য রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় বনানী থানায় মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে সার্বিক বিষয়ে কিছু ব্যত্যয় ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট থানা কর্মকর্তাদের কৈফিয়ত তলব করেছে পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি। এদিকে হোটেল থেকে জব্দকৃত বিদেশী মদে এ্যালকোহল প্রমাণ পেয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অবৈধভাবে মদ রাখা, ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে আজ মঙ্গলবার শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের কাকরাইলের কার্যালয়ে হাজির হতে হবে হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। এদিকে আপন জুয়েলার্সের রক্ষিত স্বর্ণ ফেরত পায়নি প্রকৃত গ্রাহকরা। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, দুই তরুণী ধর্ষণের মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে বনানী থানা পুলিশের গাফিলতি ছিল। তবে কিছু ব্যত্যয় হয়েছে। সোমবার ডিএমপি কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, সোমবার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বনানী থানার কর্মকর্তাদের কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। আলোচিত এ ঘটনায় মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্ত করতে পুলিশ কমিটি গঠন করে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই তদন্তে গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে। পুলিশ কমিশনার জানান, ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর মামলা করতে আসায় অভিযোগের সত্যতা নির্ণয়ে সময় লেগেছে। তিনি জানান, পেশাদার বাহিনী হিসেবে পুলিশ আইনের বাইরে একটি কাজও করেনি। ন্যায়বিচার ব্যাহত হতে পারে এমন কোন কাজ করেনি। ফৌজদারি কার্যবিধির উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার জানান, থানার ওসির কাছে কোন অভিযোগ আসার পর যুক্তিসঙ্গতভাবে যদি তিনি মনে করেন সেটার প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা আছে। যাতে নিরীহ লোক হয়রানি না হয়। অপরাধীর সাজা হয় তাহলে সেটা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেন তিনি। ওই ঘটনাটি ঘটার এক মাস সাত দিন পর পুলিশের কাছে অভিযোগ আসে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে কেন আগে অভিযোগ এল না। তাই প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হয়েছে। আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেসহ মামলার পাঁচ আসামির সবাইকে গ্রেফতার করাকে পুলিশের আন্তরিকতার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি জানান, অতীতে এমন কিছু করিনি যে আস্থা রাখতে পারবেন না। সুস্পষ্টভাবে বলি, পেশাদারিত্বের বাইরে আবেগ-অনুরাগ আমরা প্রকাশ করব না। কারও কোন আইনের ব্যত্যয় ঘটলে তার দায়িত্ব পুলিশ নেবে না। ন্যায়বিচার যেন নিশ্চিত হয়। সে জন্য কাজ করব। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ তুলে মামলা করতে গিয়ে বনানী থানার ওসি ফরমান আলীসহ দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক ছাত্রী। অভিযোগ ওঠে, মামলার আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে, হোটেলটির মালিক আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের ছেলে হওয়ায় পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সমালোচনা মুখর হন। বিদেশী মদে এ্যালকোহল রাজধানীর বনানীতে আলোচিত ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেল থেকে জব্দ ১০ বোতল মদ বিদেশী ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। সোমবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেমিক্যাল টেস্ট রিপোর্টে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের জমা দিয়েছেন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এই ফলাফল পাওয়া গেছে। যদিও বিদেশী মদ আমদানির কোন বৈধ কাগজপত্র হোটেলটির নেই। এছাড়া হোটেলটির বৈধ বার লাইসেন্সও নেই। তিনি জানান, জব্দকৃত বোতলগুলোর নমুনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে পাঠানো হয়। সোমবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চীফ কেমিস্ট ড. দুলাল চন্দ্র সাহা স্বাক্ষরিত রিপোর্টটি আমাদের হাতে এসেছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, রেইনট্রি থেকে জব্দকৃত মদে ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ এলকোহল আছে। পণ্যের ধরন অনুযায়ী এটি ‘বিদেশী মদ’ হিসেবে আখ্যায়িত। শুল্ক গোয়েন্দা জানায়, টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণিত যে এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। তবে রেইনট্রি এগুলোর আমদানির কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাছাড়া হোটেলের বৈধ বার লাইসেন্স না থাকায় তাদের এই মদ বিক্রির কোন সুযোগ নেই। ডিজি ড. মইনুল খান জানান, শুল্ক আইন, মানি লন্ডারিং ও অবৈধ মাদক রাখার অভিযোগে গত ১৫ মে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের পক্ষ থেকে রেইনট্রি হোটেলের এমডি শাহ মোহাম্মদ আদনান হারুনকে গত ১৭ মে কাকরাইল শুল্ক কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। রেইনট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসুস্থতার কথা বলে এখানে আসেননি। কিন্তু তার অসুস্থতার কোন কাগজপত্রও আইনজীবীরা দেখাতে পারেননি। আগামী ২৩ মে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় তাদের আসতে বলা হয়েছে। সেদিন না এলে শুল্ক গোয়েন্দা দফতর একতরফাভাবেই শুনানির নিষ্পত্তি করবে। আপন জুয়েলার্সের রক্ষিত স্বর্ণ ফেরত পায়নি প্রকৃত গ্রাহকরা আপন জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে প্রকৃত গ্রাহকদের তালিকা দেয়ার কথা থাকলেও রবিবার পর্যন্ত তা দেয়া হয়নি। সোমবারও পর্যন্ত তা স্থগিত করেছে শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতর। শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান জানান, ন্যায়বিচারের স্বার্থে আগামী ২৫ মে (বৃহস্পতিবার) মালিকপক্ষকে স্বর্ণের দোকানে উপস্থিত হয়ে কাগজপত্র বুঝে নিতে পুনরায় সময় দেয়া হয়েছে। কাগজপত্র অনুযায়ী তালিকা তৈরির পর প্রকৃত গ্রাহকদের জমাকৃত স্বর্ণ ফেরত দিতে পুনরায় সময় নির্ধারণ করা হবে। বনানীর ধর্ষণ ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় ৩শ’ কেজি স্বর্ণ জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। তবে উক্ত স্বর্ণে নিয়মিত গ্রাহকদের অনেকে স্বর্ণালঙ্কার মেরামত ও গচ্ছিত রেখেছিলেন বলে দাবি করেন আপন জুয়েলার্স। একই সঙ্গে জব্দকৃত স্বর্ণে গ্রাহকদের মেরামত ও গচ্ছিত রাখা বাবদ স্বর্ণ ফেরত দিতে গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায় তারা। এমন আবেদনে প্রকৃত মালিকদের সঠিক কাগজপত্র চান শুল্ক গোয়েন্দারা। এছাড়া আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দোকান থেকে কাগজপত্র বুঝে নিতে গত ১৮ মে শুল্ক গোয়েন্দা দল উপস্থিত হলেও আপন জুয়েলার্সের কোন কাগজপত্র দেয়নি।
×