ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে ॥ গাফ্ফার চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ মে ২০১৭

দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে ॥ গাফ্ফার চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নষ্ট করার ষড়যন্ত্র চলছে। সুপ্রীমকোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তারই অংশ। ভাস্কর্যের সঙ্গে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। যদি থাকত তবে পবিত্র কাবা ঘরে ‘হাজরে আসওয়াদ’ (পবিত্র কালো পাথর) এবং ‘মাকামে ইব্রাহিম’ (হযরত ইব্রাহিমের (আ) পায়ের ছাপ অঙ্কিত পাথর) মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হতো না। আজ হেফাজতের দাবি মেনে আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাস্কর্যটি সরানো হলে ভবিষ্যতে তারা শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ ও অপরাজেয় বাংলা অপসারণের দাবি তুলবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত জীবনে ধার্মিক মুসলমান ছিলেন। কিন্তু তিনি ইসলামকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেননি। বর্তমানে ইসলামকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। হেফাজত, জামায়াত, তালেবান ও আইএসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। শনিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৪৪তম বার্ষিকী উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধু শান্তি পদক প্রদান অনুষ্ঠানে গাফ্ফার চৌধুরী এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জুলিও কুরি বঙ্গবন্ধু শান্তি সংসদ এ পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। একুশে ফেব্রুয়ারির অমর সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...’ রচনার জন্য এবছর আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘বঙ্গবন্ধু শান্তি পদক’ প্রদান করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে গাফ্ফার চৌধুীর হাতে এ পদক তুলে দেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লেখক ও গবেষক মোনায়েম সরকার, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মেজাফফর হোসেন পল্টু, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঞাঁ ও এ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম। পদক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, আমি জীবনে অনেক পুরস্কার ও পদক পেয়েছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িত এমন পুরস্কার ও পদক সব সময়ই আমার কাছে বিশেষ কিছু। অনেকের মতে লেনিন, ওয়াশিংটন, গান্ধীর চেয়েও বঙ্গবন্ধু অনেক বড় নেতা। কারণ, বঙ্গবন্ধু তার দেশকে দুবার স্বাধীন করেছেন। প্রথমত, একাত্তরের নয় মাস তার নেতৃত্বে দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর পরই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ ত্যাগ করে। অনুষ্ঠানে তিনি বঙ্গবন্ধুর সময়কার বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। প্রধান অতিথি তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন শান্তির দূত। তিনি পাকিস্তান আমলের ২৩ বছর শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন করে গেছেন। এজন্য ১৯৭৩ সালে বিশ্ব শান্তি পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে তাকে জুলিও কুরি পদকে ভূষিত করে। গাফ্ফার চৌধুরী সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। বঙ্গবন্ধু তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। গাফ্ফার ভাই, যা মনেপ্রাণে বিশ্বাস ও ধারণ করেন তাই লেখেন। তার লেখা আমাদের প্রেরণা যোগায়। ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করে। বিএনপি-জামায়াত আমলের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তার লেখা সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছে। তবে আমার ‘ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটির স্রষ্টা হিসেবে বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন তিনিও বেঁচে থাকবেন।
×