ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

২৩ মে ঢাকায় মানববন্ধন

সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা দেনার ভারে জর্জরিত কেপিএম

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২১ মে ২০১৭

সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা দেনার ভারে জর্জরিত কেপিএম

পান্থনিবাস বড়ুয়া, রাঙ্গুনিয়া, ২০ মে ॥ বিসিআইসির অন্যতম প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিলস লি. (কেপিএম) ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা বাবদ প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা দেনার ভারে কারখানাটি জর্জরিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মিলে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ১০-২৫ টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় কারখানাটি যে কোন মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে গত প্রায় ২-৩ মাস যাবত। অবসরে যাওয়া প্রায় ২৫০ শ্রমিকের পাওনা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ মিল কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করতে পারছে না। ঐতিহ্যবাহী মিলকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে শ্রমিক, কর্মচারী ও সাধারণ জনতা মিলে ‘কেপিএম বাঁচাও ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সংগঠনের ব্যানারে ২৩ মে ঢাকায় বিশাল মানববন্ধন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেপিএম আর্থিক সঙ্কটের কারণে পার্বত্যঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ একেবারে কমে গেছে। যার ফলে গত এক মাস ধরে বাঘাইছড়ি উপজেলার অতি দুর্গম এলাকা সাজেকে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনাহারে শত শত মানুষ দিনাতিপাত করছে। কেপিএমের কন্ট্রাকটার মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ জানান, মিলের ৪৫ হাজার একর নিজস্ব কূপ এরিয়ায় প্রায় ৭শ’ পরিবারের দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বাঁশ আহরণ ও পরিবহন এবং জুম চাষ করে জীবিকানির্বাহ করে। পার্বত্যঞ্চলের বাঁশ ও নরম কাঠের পরিবর্তে বর্তমানে কেপিএমে বিদেশী পাল্প ব্যবহার হচ্ছে। দেশীয় পাল্প কারখানায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় সাজেক, বরকল, লংগদু, নানিয়ারচর, কাউখালী, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী উপজেলায়, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা, মানিকছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি, লক্ষীছড়ি, মহালছড়ি, রামগড় এবং বান্দরবান জেলা সদর, থানচি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, রোয়াংছড়িসহ কেপিএমের কূপ এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিক মানবেতর দিনযাপন করছে। বাঁশ ব্যবসায়ী হাজি আব্দুস সাত্তার বলেন, কাঁচামাল সরবরাহকারী ঠিকাদাররা তাদের সর্বোচ্চ পুঁজি বিনিয়োগ করে এখন প্রায়ই নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বকেয়া পরিশোধ করার ব্যবস্থা নেয়া হলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে কর্ণফুলী কাগজকল। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে পার্বত্যঞ্চলের সাধারণ জনগণ। কেপিএম সূত্রে জানা যায়, বাৎসরিক ৩০ হাজার টন ধারণক্ষমতা নিয়ে ১৯৫৩ সালে মিলটিতে উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৯১ সালে কেপিএম নিজের রুগ্নতা কাটিয়ে উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে বৈদেশিক বাজারে কাগজ রফতানি করতে সক্ষম হয় এবং ওই বছরে ৪ হাজার ১০২ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। ১৯৯০-৯১ সালে কেপিএমের সংস্থাপিত ধারণক্ষমতা ছিল ৩৩ হাজার টন, প্রাক্কলিত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৪৩৮ টন ও প্রকৃত উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ হাজার ২১৬ টন। কেপিএমের উৎপাদিত কাগজের মধ্যে রয়েছে লেখার কাগজ, ছাপা ও মুদ্রণের কাগজ, করোগেটেড বোর্ড, মোমের প্রলেপযুক্ত কাগজ, আঠাযুক্ত ফিতা এবং বিটুমিন কাগজ। ২০০৯-১০ সালে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ হাজার ২০১ টন। বর্তমানে কর্ণফুলী পেপার মিলস প্রতি টন কাগজ ৭৯ হাজার টাকায় বিক্রি করে। কাগজ বিক্রির জন্য কেপিএম-এর ২ হজার ৪৬ জন ডিলার রয়েছে। প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা মিলের কাছে ঠিকাদার ও কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পাওনা রয়েছে। বর্তমানে মিলে চিপার হাউস এবং বাঁশকেন্দ্রে ৪০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের বাঁশ ও নরম কাঠ (পাল্পউড) জাতীয় কাঁচামাল মজুদ রয়েছে। সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় কাঁচামালের মজুদের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ কর্তৃপক্ষ মজুদকৃত কাঁচামালের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে। এতে কাঁচামালসমূহ রোদে শুকিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে। এদিকে কর্তৃপক্ষের কোন দৃষ্টি নেই। বিদেশ থেকে ক্রয়কৃত পাল্প দিয়ে মিলের একাংশ চালু রেখেছে। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করায় অকেজো হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত কাগজ বাংলাদেশে যে কোন কাগজ কলের চেয়ে গুণগতমান শ্রেষ্ঠ।
×