ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এটাই কি স্বতঃসিদ্ধ!

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৫ মে ২০১৭

এটাই কি স্বতঃসিদ্ধ!

রমজান আসতে সপ্তাহদুয়েক বাকি। রোজাদারদের প্রায় জিম্মি করে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় যেন নেমে পড়েছেন আমদানিকারক, প্রস্তুতকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। একই চিত্র লক্ষ্য করা যায় প্রতিবছরই রমজান, ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। সিলেট ও কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের কারণে ব্যাপক ফসলহানির আগে থেকেই নানা কারসাজি করে চালের দাম বাড়াতে থাকে ব্যবসায়ীরা। তাই বলে আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, গুঁড়ো দুধ, লবণও কিছু কম যায় না। দাম বাড়ানোর জন্য সংস্কারের নামে চিনির কারখানা বন্ধ করে দেয়ারও খবর আছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের দাম কমতির দিকে। সে অবস্থায় দেশে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়োদুধ, ছোলা, লবণ ইত্যাদির দাম কমলেও দেশে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা। এর পাশাপাশি অস্থির হয়ে উঠেছে অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছেন। কখনও বলছেন, আকস্মিক মৌসুমী বৃষ্টিপাত, কখনওবা বৈশাখ মাস, কখনও বলছেন চাহিদা বেশি, যোগান কম ইত্যাদি। কেউ কেউ বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করায় ব্যবসায়ীরা চাল আনছেন না। ফলে চাপ পড়েছে দেশীয় চালে অথচ ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর এমনটি হওয়ার কথা নয়। সর্বশেষ, সীমিত পরিমাণে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে, বিশ্বে সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং গবাদিপশু ও পোল্ট্রিতে উৎপাদন বাড়লেও, ক্রেতাকে এসব পণ্যই কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। ফলে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে আর অসহায় হয়ে পড়েছে গরিব ক্রেতারা। সর্বাধিক উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দামে। গাবতলীসহ গরুরহাট এবং সীমান্তে গরু চোরাচালান নিয়ে প্রবল টানাপোড়েন চলতে থাকায় মাংসের বাজার বেশ চড়া। জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করা হোক। মাংসের দামের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে মাছ, ডিম ও দুধের বাজারেও অথচ বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে এমনকি প্রতিবেশী দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বর্তমানে নিম্নমুখী। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় অবাধে সুযোগ নিচ্ছে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ বহুল উচ্চারিত এই সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে অথচ বিদেশে উৎসব, পালা-পার্বণ উপলক্ষে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয় ভোগ্যপণ্য। কোন কারণ ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ, জাত ও মানভেদে সব রকম ডালের দাম ২৮ শতাংশ এবং লবণের দাম ৪৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, ডাল, লবণ, গুঁড়ো দুধ, চিনি ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের দাম কমা সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে কেন অযৌক্তিকভাবে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের। গরম মসলার দামও মনিটরিং করা বাঞ্ছনীয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রো চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো খুবই শক্তিশালী এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অস্বীকার করা যায় না। ফলে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ একরকম উপেক্ষিত ও অনালোচিত থাকছে। ব্যবসাবাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
×