ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেট মিসবাহ ও ইউনুসের বিদায়...

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ মে ২০১৭

গ্রেট মিসবাহ ও ইউনুসের বিদায়...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাবেক হয়ে গেলেন মিসবাহ-উল হক ও ইউনুস খান। ডমিনিকায় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জীবনের শেষ ইনিংসে অধিনায়ক মিসবাহ আউট হন ব্যক্তিগত ২ রানে, আর আধুনিক টেস্টের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান ইউনুস ফেরেন ৩৫ রান করে। এর মধ্য দিয়ে একসঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেটের দুটি গৌরবময় অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। দু’জনে মিলে ১৯৩টি টেস্ট খেলে উপহার দিয়েছেন ১৫ হাজারের বেশি রান, ওয়ানডে যোগ করলে সেটি পাহাড়সম। ১৬-১৭ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ ৮ বছর জন্মস্থান পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে না পারার আফসোস সঙ্গী করেই বিদায় নিতে হলো। বিদেশ বিভূইয়ে হয়েও অর্জনটা কম নয়। গত বছর প্রথমবারের মতো দেশকে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে তুলেছিলেন মিসবাহ, প্রথম পাকিস্তানী হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলস্টোনে পা রেখেছেন ইউনুস। টেস্ট ও ওয়ানডে দিয়ে ইউনুসের (৩৯ বছর) আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু ২০০০ সালে। বয়সে প্রায় চার বছরের বড় মিসবাহর (প্রায় ৪৩) শুরুটা তার পরের বছর টেস্ট দিয়ে। পাকিস্তানে তখন তারকার অভাব নেই। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, মুশতাক আহমেদ, সাঈদ আনোয়ার, রশিদ লতিফ। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়েন তৎকালীন অধিনায়ক সালমান বাট ও দুই পেসার মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ আসিফ। কেঁপে ওঠে দেশটির ক্রিকেটের ভিত। পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য বিদেশী দলগুলো পাকিস্তানে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। অনেকেই ভেবেছিলেন পাক-ক্রিকেট আসলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। কঠিন সেই পরিস্থিতিতে হাল ধরেন মিসবাহ। ব্যাট হাতে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যান ইউনুস। আর ওয়াসিম-ওয়াকারদের তারকা ইমেজের দূত হয়ে ছিলেন শোয়েব আকতার-শহীদ আফ্রিদিরা। তবে মাঠ ও মাঠের বাইরে ক্রিকেটার ও ব্যক্তিচরিত্রের বিচারে তাদের কেউই মিসবাহ-ইউনুস হয়ে উঠতে পারেননি। ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কে শনিবার টেস্টের চতুর্থদিনে দ্বিতীয় ইনিংসে দু’জন যখন শেষবারের মতো ব্যাটিংয়ে নামেন পুরো ড্রেসিং রুম তখন দাঁড়িয়ে। ব্যাট উঁচিয়ে গার্ড অব অনার দিয়েছেন প্রতিপক্ষ উইন্ডিজ খেলোয়াড়রা। ২ ও ৩৫ রানে আউটÑ ব্যক্তিগতভাবে শেষটা রাঙাতে পারেননি। কিন্তু দীর্ঘ ক্যারিয়ারের মতো এই সিরিজেও প্রমাণ করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেটে এখনও তারা কতটা অপরিহার্য। ছয় ইনিংসে মিসবাহর রান ৯৯*, ১২*, ৯৯, ০, ৫৯ ও ২। ইউনুস ৫৮, ৬, ০, ৫, ১৮ ও ৩৫। গ্রেট জাভেদ মিয়াদাদকে টপকে আগেই দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়েছিলেন। জ্যামাইকায় প্রথম টেস্টে প্রথম পাকিস্তানী হিসেবে ১০ হাজার রানের অনন্য মাইলফলকে পা রাখেন ইউনুস। ১১৮ টেস্টে ৫২.০৫ গড়ে নামের পাশে ১০০৯৯ রান, সেঞ্চুরি ৩৪টিÑ সকল ক্ষেত্রেই যা পাকিস্তানের হয়ে রেকর্ড। সম্প্রতি স্থানীয় এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক জরিপে টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে জনপ্রিয়তায় জহির খান, জাভেদ মিয়াদাদ, ইনজামাম-উল হকের চেয়ে এগিয়ে মোহাম্মদ ইউনুস খান। সেই তুলনায় বেশি বয়সে অভিষেক হওয়া মিসবাহ খেলেছেন ৭৫ টেস্ট, ইউনুসের চেয়ে অনেক কম। তারকায় ঠাসা দলে শুরুতে ছিলেন ৬-৭ নম্বর ব্যাটসম্যান। সেভাবে ধারাবাহিকও হতে পারেনি। তবে ২০১০-এ পাকিস্তান ক্রিকেটে বাটদের সেই ফিক্সিং কলঙ্কের পরের অধ্যায়টি ধরলে সেখানে কেবল মিসবাহর নামটিই জ্বল জ্বল করবে। ব্যাটিংয়ে-নেতৃত্বে হয়ে ওঠেন দলের নিউক্লিয়াস। ২০০৯ সাল থেকে নিজেদের মাটিতে খেলার সুযোগ হয়নি। এরপরও প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে তুলেছেন। ১০ সেঞ্চুরিতে ৪৬.৬২ গড়ে করেছেন ৫২২২ রান।
×