ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একুশ শতক ॥ খালিয়াজুরীতে স্বাগত স্বর্ণকন্যা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৪ মে ২০১৭

একুশ শতক ॥ খালিয়াজুরীতে স্বাগত স্বর্ণকন্যা

বাংলার স্বর্ণকন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৮ মে ২০১৭ নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরীতে বিপন্ন নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য আসছেন। হাওড়ের এক কোটি মানুষ এবং কেবলমাত্র খালিয়াজুরীর লক্ষাধিক মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যে, তিনি খালিয়াজুরীর পাশের উপজেলা শাল্লা ঘুরে এলেন মাত্র ক’দিন আগে। ২০১০ সালে প্রথম সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাবার পর এবার মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে হাওড়ের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি উপজেলায় সফর করে তিনি প্রমাণ করলেন যে, দেশের সাধারণ মানুষের নেত্রী তিনি। শাল্লায় তিনি বলে এসেছিলেন হাওড়ের একটি মানুষকেও তিনি না খেয়ে মরতে দেবেন না। সেই ঘোষণাতেই আমরা হাওড়বাসী আশ্বস্ত হয়েছিলাম। এবার তিনি যে খালিয়াজুরী যাচ্ছেন তাতে আমরা কেবল আশ্বস্ত নই, আত্মবিশ্বাসী। তার হাওড় সফরের পর থেকে হাওড়ের বিপন্ন মানুষের পাশে সরকারের থাকার জন্য সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। পুরো কাজটি যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটি তিনি তার সফরের মধ্য দিয়েই প্রমাণ করলেন। মাত্র মাসখানেক আগে আমরা কাউকে বোঝাতে পারছিলাম না যে, হাওড়ের বিপন্ন মানুষের অবস্থাটি কেবলমাত্র সাময়িক কোন বিষয় নয়। এটি যে কিছু লোকের অনাহারে থাকার বিষয় নয় সেটিও বোঝানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। দেশের অন্য অঞ্চলে বন্যা হলে সেটির যে সঙ্কট তার সঙ্গে যে হাওড়ের সঙ্কটকে তুলনা করা যায় না সেটি বোঝাতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। সৌভাগ্য আমাদের যে, বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে আমরা আমাদের কান্নার আওয়াজ পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের প্রত্যাশার ফলে কেবল সরকারের দিক থেকে নয়, দেশের সাধারণ মানুষও হাওড়ের কান্নার আওয়াজ অনুভব করবেন ও তাদের পাশে থাকবেন। এবার ২৯ মার্চ ২০১৭ থেকে হাওড় তলিয়ে যাওয়া শুরু হয়। ২৩ এপ্রিল শনির হাওড় ও ২৪ এপ্রিল পাকনার হাওড় তলিয়ে যায়। টানা ২২ দিন লড়াই করে শনির হাওড়ের পাড়ের মানুষ পরাজিত হয় ২৩ এপ্রিল। পাকনার হাওড়টি আরও একদিন বেঁচেছিল। আমার নিজের বাড়ির হাওড় ছায়ার হাওর ১৫ দিন রক্ষা করতে পেরেছিল হাওড় পাড়ের আমার স্বজনরা। কিন্তু পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে লড়াই করে ওরা জিততে পারেনি। এর মাঝে হাকালুকি বা টাঙ্গুয়ার হাওড়ের মাছ ও হাঁসের মরণের খবরগুলো আমরা পাঠ করেছি। অন্য হাওড়গুলো তো বটেই, কেবল আমার উপজেলা খালিয়াজুরীর সব হাওড়ে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। পুরো হাওড়ের মাছ খাওয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বেসরকারীভাবে বলা হয়েছে যে, ৯০ বছরের ইতিহাসে হাওড়ে এমন মহাবিপর্যয় আর ঘটেনি। পুরো হাওড় এলাকার শতভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ মাছের ক্ষতি হয়েছে। পুরো হাওড় অঞ্চলের ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় হয়েছে এবং সর্বাধিক মানবিক বিপর্যয় হয়েছে এই অঞ্চলে। এই বিপর্যয়ের প্রভাব এতই গভীর যে, সরকারীভাবেই ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবার খাদ্যের অভাবে থাকার পাশাপাশি তাদের গৃহপালিত গবাদিপশুর জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মহাজনের ঋণের দায়ে বিপন্ন হাওড়ের অন্তত একজন কৃষকের আত্মহত্যার খবর জানা গেছে। এরই মাঝে রাষ্ট্রপতি নিজে হাওড় এলাকা ঘুরে এসেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সফর হাওড়ের সকল মানুষের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। অকাল বন্যায় হাওড়ের ফসলহানি নতুন কোন ঘটনা নয়। গড়ে প্রতি তিন বছরে এক বছরের ফসল হাওড়বাসী ঘরে তুলতে পারে না। ৭টি জেলার কোন না কোন উপজেলার কোন না কোন হাওড়ের ফসল প্রতি বছরই নষ্ট হয়। পাহাড়ী ঢল আকস্মিকভাবে উত্তর থেকে নেমে আসে এবং রাতারাতি হাওড় ডুবিয়ে দিয়ে যায়। একেবারে উত্তরে সুনামগঞ্জ বিধায় সেই জেলার হাওড়গুলোর চাপটা প্রথমে আসে। সেই এলাকার হাওড়গুলো আগে ডুবে। এরপর নেত্রকোনা হয়ে কিশোরগঞ্জ দিয়ে বন্যার পানি মেঘনা নদী হয়ে নিচের দিকে নামে। অন্যদিকে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওড়গুলোও এই ঢলে আক্রান্ত হয়ে থাকে। পাহাড়ী ঢলের প্রকৃতি দু’ধরনের। প্রথমটি হচ্ছেÑ ভারত থেকে একাধিক সীমান্তবর্তী নদী দিয়ে ঢলের পানি এসে সুরমা ও কুশিয়ারা এবং তার শাখা নদীগুলোতে প্রবাহিত হতে থাকে। অন্যদিকে একই সঙ্গে হাওড় এলাকায় বৃষ্টি হবার ফলে সেই ভারতীয় ঢলের পানির উচ্চতাও বাড়তে থাকে। সচরাচর চৈত্র মাসে যদি এই অকাল বন্যা হয় তবে হাওড়ের ফসলহানির পরিমাণ ব্যাপক হয়। বৈশাখের শেষ দিকে হলে ফসলহানিটা কমে যায়। এবার চৈত্রে এমন সময়ে অকাল বন্যাটি হলো সেটির সময়ে বোরো ধান পাকা তো দূরের কথা ধানের শীষটাও পোক্ত হয়নি। ফলে পানিতে ডুবন্ত ফসল ঘরে তোলা তো সম্ভব হয়ইনি, গরু-বাছুরের জন্য খড়ও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। হাওড়ের মানুষের জন্য সময়টি ভয়ঙ্কর হয়েছে আরও নানা কারণে। হাওড়ের কৃষক বস্তুত মহাজনী ঋণের জালে বন্দী থাকে। ব্যাংকের চাইতে ১০ বা ২০ গুণ সুদে তারা জমি চাষের জন্য কার্তিক মাস থেকেই ঋণ নিতে থাকে। এসব ঋণ শোধ করা হয় ধানে। ধান কাটার পর ধান দিয়ে ঋণ শোধ করা হয়। কার্তিক মাস থেকে কৃষক যে ঋণ নেয় সেটি কেবল চাষাবাদে নয়, নিজেদের অন্ন যোগানো থেকে সাংসারিক অন্য কাজেও ব্যবহার করা হয়। ধান কাটার পর কাঁচা ধান মহাজনের নৌকায় তুলে দিয়ে কৃষক হয়ত তার ঘরে ছয় মাসের খাবার রাখতে পারে। ছয় মাস আবার সেই মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেয় এবং একই চক্রে জীবনটা কাটিয়ে দেয়। শত শত বছরজুড়ে এই অবস্থা বিরাজ করছে। এবারও তাই হাওড় তলিয়ে যাওয়ায় ঋণসহ কৃষক তলিয়ে গেছে এবং তার ঘরে পরের ফসল না ওঠা পর্যন্ত ঘরে খাবার নেই। সন্তানের লেখাপড়া তো দূরের কথা, তার সংসার চালানোর নগদ টাকাও নেই। গরুর খাবার না থাকায় পানির দামে তাকে গবাদিপশু বিক্রি করতে হচ্ছে। দুঃখজনক হলো এসব প্রাণীর ক্রেতাও এখন হাওড় এলাকায় পাওয়া যায় না। সমগ্র হাওড় এলাকায় সকল কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়ায় কারও পাশে কেউ দাঁড়াতে পারবে সেই অবস্থাটুকুও নেই। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘার মতো তার বাড়ি রক্ষা করাও একটি বড় লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটিতে এটি দুঃখজনক যে, এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে মানুষের দুর্নীতি। হাওড় এলাকায় হাজার হাজার বাঁধ অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করতে হয়। মাটির বাঁধগুলো নির্মাণে দুর্নীতিকে এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে হাওড়ের বাঁধগুলো জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখত। প্রধানত পৌষ মাসে ধান চাষ করে মাঘ মাসেই তারা বাঁধগুলো বেঁধে ফেলত। প্রতিটি গ্রামের ছেলে-বুড়ো সকলে মিলে দলবেঁধে এসব বাঁধ বেঁধে রাখত। স্বাধীনতার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব বাঁধের দায়িত্ব গ্রহণ করে। গোড়া থেকেই লক্ষ্য করা গেছে যে, মাঘ মাসে কখনও এসব বাঁধ বাঁধা হয় না। টেন্ডার করা, ঠিকাদার নিয়োগ ও কাজ শুরু করার জন্য টাকার বরাদ্দ করা ইত্যাদি বিলম্বিত হতে হতে এবার চৈত্র মাসেও বাঁধ বাঁধার কাজ শুরুই করা হয়নি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাঁধগুলো মাটি দিয়ে বাঁধা হয় বলে মাঘ মাসে বাঁধগুলো বাঁধা না হলে সেগুলো শক্ত হয়ে পানির ধাক্কা সামাল দিতে পারে না। এবার আমরা শুনলাম যে, নদীর পাড় বা হাওড়ের বাঁধের চেয়ে বেশি উচ্চতায় ঢল আসার ফলেও হাওড় রক্ষা করা যায়নি। সাধারণভাবে এসব কথা বলার পাশাপাশি সবার আগে এটি বলা দরকার যে, এখন কেবল রাষ্ট্রকে নয়, সকলে মিলে কতগুলো জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। হাওড় এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হবে কি হবে না, কি পরিমাণ মানুষ মারা গেলে এটি দুর্গত এলাকা হবে সেটি আমি জানি না। এটি বিতর্কের বিষয় হওয়াও উচিত নয়। হাওড়ের মানুষকে জীবন দিয়ে দুর্গত এলাকা হবার তকমা নিতে হবে না। সেজন্যই বলছি হাওড়ের মানুষ মারা গেলে তাদের পাশে কবর দেয়ার জন্য দাঁড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। হাওড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে আমরা বহুদিন যেসব আলোচনা করেছি সেগুলোর কথা পরে বলা যাবে। আপাতত জরুরীভাবে যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে সেগুলো এরকম হতে হবে। ১) হাওড়বাসীর ঘরে খাবার নেই। এখনই তাদের ঘরে চুলা জ্বলে না। তাদের খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বস্তুত হাওড়ের কোন মানুষের ঘরেই খাবার নেই। চালের দামও বেড়ে গেছে। এর মাঝেও হতদরিদ্র ও কামলাদের বিনামূল্যে খাবার দিতে হবে। কিছুটা সামর্থ্য আছে যাদের তাদের কম দামে চাল কিনতে দিতে হবে এবং এর পাশাপাশি তেল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে। সরকার পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা মাসে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি যথাযথ নয়। একটি পরিবারের গড়ে ৫ জন মানুষের জন্য জনপ্রতি ২০ কেজি করে অন্তত ১০০ কেজি চাল দরকার এবং কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে দরিদ্র, হতদরিদ্র এবং সম্পন্ন কৃষক ইত্যাদি শ্রেণীতে বিভাজন করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সহায়তার ভিন্নতা করা যেতে পারে। এখানে দেশের অন্য অঞ্চলের চাইতে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বহুগুণ শক্তিশালী করতে হবে। রেশনিং পদ্ধতিও চালু করার কথা ভাবা যায়। ২) হাওড়ের মানুষ ব্যাংক, বেসরকারী সংস্থা ও মহাজনী ঋণের দায়ে জর্জরিত। এখনই হাওড়ের সকল প্রকারের ঋণ আদায় সামনের ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত স্থগিত করতে হবে এবং চলতি বছরে একজন কৃষক যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল তার দ্বিগুণ ঋণ সামনের বছর তাকে বিনাসুদে ও বিনা জামানতে দিতে হবে। এই কাজটি সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন হবে। সরকার ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় স্থগিত করলেও বেসরকারী মহাজনী ঋণের চাপ কৃষকরা কেমন করে সহ্য করবে সেটি অনুধাবন করা কঠিন। এনজিওগুলোর ক্ষুদ্র ঋণের কি হবে সেটিও ভাবতে হবে। এজন্য সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। ৩) হাওড়ে এমনিতেই চিকিৎসা বলতে কিছু নেই। শহরের ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণ করার ক্ষমতাও হাওড়ের মানুষের নেই। চিকিৎসা সুবিধাহীন হাওড়ের মানুষের শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারী হাসপাতাল ও কমিউনিটি হাসপাতালে ওষুধসহ সকল পরীক্ষাও বিনা পয়সায় করতে হবে। হাওড়ে টেলি মেডিসিন ব্যবস্থা ছাড়াও অস্থায়ী চিকিৎসক দল থাকতে হবে। ৪) হাওড় এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থাও চরম দুর্দশাগ্রস্ত। বর্ষাকালে এমনিতেই হাওড়ের ছেলেমেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। এবার বড় সঙ্কট হবে নৌকাসহ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা। এদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রীর বেতন মওকুফ ছাড়াও দুপুরে সকল স্কুলে খাবার দিতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা চালানোর জন্য শতভাগ ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি বা অন্য কোন আকারে নগদ সহায়তাও দিতে হবে। ৫) হাওড়ের গবাদিপশুর সকল খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। হাওড়ের নল-খাগড়া বা কচুরিপানা ছাড়া বর্ষাকালে গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তাই হাওড়ের গবাদিপশুর জন্য সরকারকে বিনামূল্যে/স্বল্পমূল্যে পশুখাদ্য সরবরাহ করতে হবে। প্রসঙ্গত এটিও মনে রাখতে হবে যে, কৃষক যেন তার গবাদিপশু বিক্রি করে দিতে বাধ্য না হয়। যদি এমনটি হয় তবে সামনের বছর ফসল চাষই করতে পারবে না। একই সঙ্গে হাওড়ের কৃষিকে ব্যাপকভাবে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। এজন্য সরকারের ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হবে। অন্যদিকে কৃষকের আগামী ফসলের জন্য সার-বীজ-কীটনাশক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিনামূলে বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করতে হবে। ৬) হাওড়ের শতকরা ৯০টি গ্রাম বর্ষাকালীন ঢেউয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হয়। কৃষক বোরো ধান কেটে ধানের টাকায় বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণ কিনে বাড়িকে ঢেউয়ের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। তবুও প্রতিবছর হাওড়ের বহু গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। এবার কৃষক ধানই পায়নি। বাড়ি রক্ষা করবে কি দিয়ে? সরকারকে হাওড়ের বাড়ি রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে। ৭) হাওড়ের মানুষের কর্মসংস্থান একটি সহায়ক কাজ হতে পারে। এই সময়ে হাওড়ের দিনমজুররা তার এলাকার বাইরে কায়িক শ্রমে নিযুক্ত হতে পারে। কিন্তু তাদের কর্মসংস্থানের একটি সহজ উপায় হতে পারে পুরো হাওড়জুড়ে মাছ ধরার সুবিধা প্রদান করা। সরকার পুরো হাওড় এলাকা থেকে ৯০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পায়। কিন্তু যদি সেই ৯০ কোটি টাকার লোভ সামলানো যায় তবে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে হয়ত হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হবে এবং হাওড়বাসী নিজেই বেঁচে থাকার একটি উপায় বের করতে পারবে। সেজন্য হাওড়ের জলমহালগুলোর চলতি বছরের ইজারা বাতিল করে পুরো হাওড়ে অন্তত এক বছরের জন্য সবাইকে মাছ ধরার সুযোগ করে দিতে হবে। তবে মনে রাখা দরকার, এই সুযোগ যেন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষেরা পায়। বৃহৎ পুঁজি যেন এই সুযোগটাও নিজেদের দখল করে নিতে না পারে। অন্যদিকে মাছের পোনা বেড়ে ওঠার সুযোগও তৈরি করতে হবে। ৮) সরকারের কাছে একটি ছোট আবেদন এমন হতে পারে যে, সরকার হাওড়ের সামগ্রিক বিষয়গুলো সমন্বয় করার জন্য একটি আলাদা মন্ত্রণালয় তৈরি করতে পারে। ৯) সরকারের যেসব কাজ করার বিষয় আমি উল্লেখ করলাম তার বাইরে রাজনৈতিক দল, এনজিও এবং সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হতে পারে হাওড়ের মানুষকে খাদ্যসহ অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে সহায়তা করা। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী বা হাওড়ের সাত জেলার উঁচু ভূমিতে যারা বসবাস করেন ও যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা হাওড়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়াতে পারে। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রীর এই সফর হাওড়ের মানুষের ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নকে কেবল জোড়া দেবে না, বেঁচে থাকার স্বপ্নকেও উজ্জীবিত করবে। এ কথাটিও বলা দরকার যে, এর ফলে হাওড়কে ভিত্তি করে আমরা যে জাতীয় সম্পদ গড়ে তুলি তারও সুরক্ষা হবে। ঢাকা, ১২ মে, ১৭ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচীর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : [email protected], ওয়েবপেজ : www.bijoyekushe.net
×