ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

কেন এমন নৃশংসতা!

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৩ মে ২০১৭

কেন এমন নৃশংসতা!

পরস্পরবিরোধী সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনা দেশে যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বার্থের দ্বন্দ্ব তথা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবদমান গোষ্ঠীকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্রও ব্যবহার করতে দেখা যায়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কখনও কখনও তাদের নিষ্ঠুরতা বর্বরতাকেও হার মানায়। এক এক এলাকা বা অঞ্চলে এক এক ধরনের দেশী অস্ত্রের ব্যবহার চলে। কোথাও রামদা, কোথাও বর্শা, কোথাও টেটা, কোথাওবা বাঁশ-লাঠি। শহরে সাধারণত পিস্তল, বন্দুক, চাপাতি, চাকু এসবের ব্যবহার বেশি। কিন্তু নরসিংদী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কিংবা আধিপত্য বিস্তার করার ক্ষেত্রে হাতে বানানো টেঁটা এক মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন চলা এই টেটাযুদ্ধে এ পর্যন্ত কতজনের প্রাণহানি ঘটেছে আর কতজন মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গু জীবনযাপন করছে তা এক গবেষণার বিষয় বটে। মানুষের প্রতি মানুষের ক্ষোভ-আক্রোশ মেটানোর এ এক নিষ্ঠুর নির্মম প্রবৃত্তি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার নিমিত্তে এই টেটা ব্যবহার সে এলাকার জীবনাচরণে সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ব্যক্তি, সংগঠন, প্রশাসন বিভিন্ন সময় উদ্যোগ, কঠোর পদক্ষেপ নিয়েও টেটার ব্যবহার বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মারাত্মক বিপজ্জনক প্রাণহরণকারী এই টেঁটা নরসিংদীর অনেক স্থানে আত্মরক্ষার বর্ম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অথচ ভেবে দেখা হচ্ছে না এর ছোবল যে কোন সময় যে কেউ খেতে পারে, প্রাণনাশ হতে পারে। ঘটনা পরম্পরায় নরসিংদীতে টেটা ও বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যা অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। গত সোমবার রায়পুরার বাঁশগাড়ীর বালুয়াকান্দী, বটতলীকান্দী, রাজনগর, দিঘলিয়াকান্দী, ছোবানপুরসহ ৭টি গ্রামে ১১ ঘণ্টার অব্যাহত সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়। আহতের সংখ্যা অনেক। স্থানীয় ভাষায় টেটা যোদ্ধাদের লাঠিয়াল বলা হয়। এই লাঠিয়ালদের পোষকতা করে স্থানীয় মোড়ল মাতব্বর রাজনীতিকরাই। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে লাঠিয়ালদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করে। কিন্তু প্রাণবিপন্ন ও প্রাণসংহারের এই রীতি যারা লালন করেন তাদের চৈতন্যোদয় হচ্ছে না। তারা অন্যায় স্বার্থোদ্ধারে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে। বর্তমান ঘটনার সূত্রপাত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে। আর এই সংঘর্ষের দুই প্রতিপক্ষ উভয়ে একই দলীয় রাজনীতির স্থানীয় নেতা। দু’জনের আধিপত্য ও ইচ্ছা পূরণের দ্বন্দ্বে গত ১৯ এপ্রিলের সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও অর্ধশত আহত হওয়ার পর এলাকার অবস্থা এখন থমথমে। কিন্তু এই দ্বন্দ্বের রেশ কোথায় গিয়ে থামবে তা কেউ জানে না। যে যার মতো আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে আর সৃষ্টি করে যাচ্ছে নৃশংসতার ঘটনা। হিংসা, সংঘাত-সংঘর্ষ কোন আদর্শ রাজনীতির স্বপ্ন দেখাতে পারে না, সমাজে সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে না। রাজনীতির ভাষা-লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হতে হবে সুন্দর-মহৎ-কল্যাণকর। সেখানে সংঘাত-সংঘর্ষ থাকলে সে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়, রাজনীতির যে প্রকৃত লক্ষ্য সেই জনকল্যাণও নিশ্চিত হয় না। সেইজন্য জনকল্যাণের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে, সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে যে কোন প্রকার সহিংসতা, হানাহানি বন্ধ হওয়া দরকার। এতেই যেমন রাজনীতির সুস্থতা, স্বাভাবিকতা রক্ষা করা যায়, তেমনি রক্ষা করা যায় মানুষের স্বার্থ। নরসিংদীর উল্লিখিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
×