ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীদের লাশ নেবে না পরিবার

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৩ মে ২০১৭

জঙ্গীদের লাশ  নেবে না  পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম বেনীপুরে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে আত্মঘাতী ৫ জনের কারও লাশ গ্রহণ করবেন না তাদের স্বজনরা। ওই আস্তানায় নিহত জঙ্গী নেতা সাজ্জাদের মা ৮০ বছরের বৃদ্ধা মারজাহান জানান, তিনি তার ছেলে সাজ্জাদ ছাড়াও একই পরিবারের ছেলের বউ ও তিন নাতি-নাতনি কারোরই লাশ নেবেন না। মারজাহান বলেন, মানুষ হিসেবে সবার জন্যই মন কাঁদছে। কিন্তু কোন দেশবিরোধী সন্তানের লাশ গ্রহণ করবেন না তিনি। মারজাহান মনে করেন, কেউ খারাপ কাজ করলে তার শাস্তি হয়, তার ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা তেমন শাস্তিই পেয়েছে। বৃদ্ধা মারজাহান জানান, তিনি লাশ নেবেন কি না, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার কাছে এখনও কিছু জানতে চায়নি। তবে জানতে চাইলে তিনি সাফ জানিয়ে দেবেন, কারও লাশ নেবেন না তিনি। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে বেনীপুর গ্রামের সাজ্জাদ আলীর (৫০) বাড়িটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর ভেতরে থাকা জঙ্গীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু জঙ্গীরা তাতে সাড়া দেয়নি। বরং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তখন বাড়িতে পানি স্প্রে করা শুরু করে তখন জঙ্গীরা বাড়ি থেকে বের হয়ে একযোগে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এক নারী জঙ্গী প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আবদুল মতিনকে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরে তারা আত্মঘাতী হয়। পুলিশ জানায়, তারা আত্মহুতি দিয়েছে। আর অভিযানের পর সাজ্জাদের মেয়ে সুমাইয়া পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ওই বাড়ি থেকে পরে কৌশলে উদ্ধার করা হয় সুমাইয়ার দুই শিশুসন্তানকেও। বেনীপুরের সাজ্জাদ আলীর বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে তার ছোট ভাই মুক্তার আলীর বাড়ি। এ বাড়িতেই ছেলের সংসারে থাকেন সাজ্জাদের মা মারজাহান বিবি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়েই কথা হয় তার সঙ্গে। মারজাহান বলেন, বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মাছমারা গ্রামের লুৎফর রহমান নামে এক ব্যক্তির মেয়ের সঙ্গে সাজ্জাদের বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পর থেকে সাজ্জাদ তার শ্বশুরবাড়ির পাশেই একটি বাড়ি করে থাকত। মাস চারেক আগে শ্বশুরের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হয়। এ দ্বন্দ্বের পর সাজ্জাদ পরিবার নিয়ে গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি মহল্লায় কিছুদিন ভাড়া থাকে। ছেলেকে ভাড়া বাড়িতে থাকতে দেখে তিনিই বেনীপুরে মাঠের ভেতর তাকে ৫ কাঠা জমি দেন বাড়ি করতে। মাস দুয়েক আগে বাড়িটির নির্মাণ শেষ হয়। একদিকে মাটির দেয়াল ও চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি করা ওই বাড়িতে সাজ্জাদ পরিবার নিয়ে ওঠে। দুই মাসে মাত্র দুইবার ছেলের বাসায় গেছেন মারজাহান। কিন্তু সেখানে অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি বলে দাবি করেন তিনি। মারজাহান বলেন, সাজ্জাদ আলীর স্ত্রী ও মেয়েরা খুব পর্দাশীল ছিল। তাই নিজের ভাই মুক্তারের বাড়িও তারা খুব একটা যেত না। বছরে দু’একবার যেত। ছেলের পরিবারটির সঙ্গে তার তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না। এ জন্য তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। মুক্তার আলীর স্ত্রী শামিমা খাতুন (৩৫) বলেন, লোকমুখে তারা শুনেছেন, বেলী বেগম অস্ত্র হাতে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ জন্য তিনি বিশ্বাস করেছেন, পরিবারটি জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছিল। তা না হলে তারা বিশ্বাসই করতে পারতেন না। এখন যেহেতু তারা বিশ্বাস করেছেন, তাই তাদের কারোরই লাশ নেবেন না। তার স্বামী মুক্তার আলীও কারও লাশ নেবেন না বলে জানান তিনি।
×