ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবারেরটা হবে বড় বাজেট কর ও ভ্যাট আদায় বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৩ মে ২০১৭

এবারেরটা হবে বড় বাজেট কর ও ভ্যাট আদায় বাড়াতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন বাজেটে বাড়তি করারোপের আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট হবে নির্বাচন পূর্ব বাজেট। সুতরাং সেখানে খুব যে একটা চাপাচাপি করতে পারব, সেটা মনে করি না। তাই চাপাচাপি যা করার, এ বছরেই শেষ করতে হবে। আমাদের স্বাভাবিক গতিধারায় এটা (আগামী) হবে সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট। আট বছরের গতিধারায় যেটা, তাতে এটা হবে বড় বাজেট। বাজেট বাস্তবায়নে তাই কর ও ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সম্পাদক ও বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় মুহিত এসব কথা বলেন। নিউজ পেপার আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ ডিউটি, এআইটি আড়াই শতাংশ এটি একটি বিরাট চাপ বলে মন্তব্য করেছেন সম্পাদকরা। তারা বলছেন, প্রতিবার বাজেটের সময় বলা হয়, দেখা করি, দেন-দরবার করি। কিন্তু কাজ হয় না। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কাগজ ইমপোর্ট করা অনুচিত, উই হ্যাভ ভেরি গুড কোয়ালিটি পেপার। দেশী কাগজ দিয়ে ছাপার সময় ছিঁড়ে যাওয়ায় আমদানি করা কাগজের তুলনায় বেশি খরচ হয় বলে দাবি করা হয় সম্পাদকদের পক্ষ থেকে। অর্থমন্ত্রী জানান, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য নিজের দ্বাদশ বাজেটই হবে তার দেয়া শেষ বাজেট। চাপাচাপির ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী জানান, চাপাচাপি হলোÑ ইনক্রিজ ইন রেভিনিউ বাই ৩০ পারসেন্ট, হোয়ার দ্য ইউজুয়াল পারসেন্টেজ ফিফটিন টু সিক্সটিনে রকম। সে জায়গায় ৩০ শতাংশ করছি। দেন আরও বেশকিছু কিছু প্রমিসেস অলরেডি মেইড। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের শেষে কিংবা ২০১৯ সালের শুরুতে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনের আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য বর্তমান সরকার শেষ বাজেট দেবে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাজেটের আকার বাড়াচ্ছেন মুহিত। উচ্চাভিলাষী সমালোচনা মানতেও তার আপত্তি নেই। বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে রাজস্ব আয়ও বাড়াতে হচ্ছে মুহিতকে। এবার বাজেটের আকার ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আরও বাড়াতে হবে। নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জানতে চান, এ বাজেটে ভ্যাটের আকার কত হবে? গত বছরের ঘোষিত বাজেটের পুরোটা কি বাস্তবায়ন করা গেছে, না কি ঘাটতি আছে? অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি বাজেট ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার ছিল, বাস্তবায়িত হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি কম। এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী) কোন পরিবর্তন করা হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা প্রথম। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ শতাংশ ভ্যাট, ৩৬ শতাংশ আয়কর এবং বাকিটা কাস্টম ডিউটির মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে,Ñবলে সভায় জানান এনবিআরের একজন কর্মকর্তা। আগামী ৫ বছরের মতো ভ্যাটদাতার সংখ্যা ৫ লাখে উন্নীত করা হবে বলেও জানান তিনি। গত আট বছরে রাজস্ব বোর্ডকে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে লোকজন নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে ১৩ থেকে ১৪ লাখ। এটা এবারে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এটা মনোভাব ও বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে সম্ভব হয়েছে। নতুন করদাতাদের বেশির ভাগ ৪০ বছরের নিচে। এটা খুব উৎসাহমূলক। এটার ওপর ভিত্তি করে (রাজস্ব আদায়ে) উচ্চবিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবন্ধিত ব্যবসায় ইউনিট সাড়ে আট লাখ হলেও এর মধ্যে মাত্র ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট দেয়ার চিত্র তুলে ধরে মুহিত বলেন, সংখ্যায় খুবই কম। আমাদের প্রচেষ্টা হবে এ সংখ্যা বাড়ানো। যারা ভ্যাট দেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চান কাজী মিডিয়া লিমিটেডের (দীপ্ত টিভি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা মেশিন আমদানি করছি। যাদের ভ্যাট দেয়া উচিত, সেখানে আমার তা স্থাপন করব। এ মুহূর্তে ৪০ বা ৫০ হাজার মেশিন আমরা আনছি। সেই মেশিনে সব লেনদেন রেকর্ড হবে। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি প্রশ্রয় পায় বলে বাজেট বাস্তবায়নের ধারা সারা বছর এক রকম রাখার প্রস্তাব দেন দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের বেতন-ভাতায়ই শিক্ষা বাজেটের বেশির ভাগ চলে যায়। শিক্ষা উন্নয়নে বাজেট কম থাকে বলে সব সময়ই অভিযোগ উঠে। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলে উঠেন, উন্নয়নটা কী, হোয়াট ইজ উন্নয়ন? অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক নয়। জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা বরাদ্দ আছে। শেষ মুহূর্তে বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি হয়, এটা সত্য নয়। বরং অপচয় দুর্নীতি কম হয়। মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন এগুলোর ওপর বাজেটে জোর দেয়া হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বরাদ্দের প্রথমেই থাকবে বিদ্যুত, যোগাযোগ খাত থাকবে দ্বিতীয় নম্বরে। ২০-৩০ বছর ধরে কর দিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের কোন কার্ড দেয়া যায় কিনা, তা বিবেচনার সুপারিশ করেন চ্যানেল আইর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। তিনি সারাদেশে শস্য বীমা চালুর প্রস্তাবও করেন। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে বিদেশ থেকে কর্মী আনতে হচ্ছে, এ জন্য প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন ডলার চলে যাচ্ছে। বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে, কিন্তু বিতরণ করা যাচ্ছে না। এ জন্য বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। ডিজেলের দাম কমানোর কথা বলা হলেও তা কমানো হয়নি। এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছেÑ তা জানতে চাই, প্রশ্ন রাখেন এ ব্যবসায়ী নেতা। অর্থমন্ত্রী বলেন, ডিজেলের দাম কিছু কমানো হয়েছে। আরও কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় আছে। আমাদের অর্থনীতি সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ই-টেন্ডারিং যখন বাস্তবায়ন হচ্ছে, তখন আমাদের (সংবাদপত্র) মরে যাওয়ার অবস্থা। বিজ্ঞাপন না দিলে পত্রিকা বেশ সমস্যায় পড়বে, যারা মধ্যম পর্যায়ের পত্রিকা। দরপত্র বিজ্ঞাপন সংবাদপত্রে আগের মতোই প্রকাশ এবং বিজ্ঞাপন দর বাড়ানোর প্রস্তাবও করেন সম্পাদকরা। টেলিভিশনের পক্ষে শাইখ সিরাজ বলেন, ডিএফপির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন হলে পত্রিকাগুলো সরকারী অর্থ পায়, তবে চ্যানেলগুলো যুগ যুগ ধরে সরকারী প্রচার বিনামূল্যে চালিয়ে যাচ্ছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন অর্থ দিলে টেলিভিশনে দেবেন না কেন, এ বিষয়ে প্রস্তাব করছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, যখন কম্পিউটার প্রিন্টিং শুরু হলো, তখন মনে করা হচ্ছিল বইপত্র পাবলিশড হবে না, কিন্তু তা হয়নি। একই বিষয় ই-টেন্ডারিং এ হচ্ছে। আরটিভি কর্মকর্তা আশিক রহমান বলেন, টিভিগুলো বিজ্ঞাপন বিল আনার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছি, কিন্তু বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে আমরা অসম প্রতিযোগিতার শিকার হচ্ছি। কোন রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সঙ্কটে, আমরা আমাদের চ্যানেল বাঁচাতে পারছি না। অর্থমন্ত্রী তখন বলেন, বাংলাদেশে চ্যানেলের সংখ্যা অত্যাধিক। প্রতিক্রিয়ায় এক সম্পাদক বলেন, আপনারাই তো দিচ্ছেন, একের পর এক। এরপর অর্থমন্ত্রী বলেন, যে ব্যবসা করেন সে হিসাব করেই আসেন, ব্যবসা হচ্ছে কি না? ব্যাংক খাত চাঙ্গা করতে কোন উদ্যোগ আসছে কিনাÑ এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর খুব ভাল অবস্থায় রয়েছে, এতগুলো ব্যাংক ব্যবসা করছে, অন্য কোন দেশে আছে বলে জানি না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন ব্যাংক না দেয়ার চেষ্টা করতে পারি, সেখানে আবার যারা নতুন ধনী-টনী হয়েছেন, তাদের চেষ্টা থাকে। খালেদার জিয়ার ভিশন-২০৩০ প্রসঙ্গে সম্পাদকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প দেয়া দেশের জন্য ভাল, তবে আমি এখন এ বিষয়ে কমেন্ট করব না। পুরো স্টেটমেন্ট এখনও আমি পাইনি। প্রত্যেক কাগজ পুরো স্টেটমেন্ট দেয়নি। আমি আটটি কাগজ পড়েছি। এটা পাওয়া সহজ, জানি আমি, প্রত্যেকবার আমি তার অফিস থেকে পাই, নিয়ে আসি, এবারও তাই করব।
×