ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্লাস্ট রোগ এড়াতে ব্রি-২৮ চাষ না করার পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১০ মে ২০১৭

ব্লাস্ট রোগ এড়াতে  ব্রি-২৮ চাষ না  করার পরামর্শ

বশিরুল ইসলাম ॥ দেশে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক আক্রমণের ধরন থেকে তারা ধারণা করছে, ব্রি-২৮ ধান কয়েক বছর যাবত ব্যাপক হারে চাষ করায় এ ঘটনা ঘটতে পারে। এ জাতটি ব্লাস্ট রোগের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ায় আগামী দিনে ব্রি-২৮ ধান চাষ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রোগটি প্রতিরোধে ধান কাটার পর নাড়া-খড়কুটো জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা, আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ এবং অতিরিক্ত পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার না করে জমিতে সবসময় পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। প্রতিবছর আমন ও বোরো মৌসুমে কমবেশি এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলেও এ বছর রোগটির ব্যাপক আক্রমণে দিশেহারা কৃষক। মার্চ মাসের শুরুর দিকে রোগটি দেখা দেয় বরিশাল, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায়। পরবর্তী সময়ে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহে ছড়িয়ে পড়ে। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে রোগটি গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, নওগাঁ, গাইবন্ধা, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট অঞ্চলে প্রকট আক্রমণের করে। একদিকে হাওড়াঞ্চলে আগাম বন্যাজনিত কারণে ফলন বিপর্যয়, অন্যদিকে সারাদেশে রোগবালাইয়ের কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে রোগের প্রকৃতি, জীবাণুর ধরন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণের জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ গবেষক দল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের আক্রান্ত জেলাসমূহ খুলনা, যশোর, ঝিনাহদহ, মেহেরপুর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা পরিদর্শন করেন। তারা এ রোগের জীবাণুর প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার জন্য প্রতিটি জেলার তিনটি উপজেলা থেকে আক্রান্ত ও সুস্থ গাছের নমুনা সংগ্রহ করেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মদ আক্রান্ত জেলাসমূহে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, হাউব্রিড ধানে ব্যাকটেরিয়জনিত পাতাপোড়া রোগের প্রকোপ বেশি থাকলেও উফশী জাতসমূহে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ ছিল ব্যাপক। এ রোগের আক্রমণ ব্রি-২৮ ধান বেশি ছিল। তবে উফশী জাতসমূহের মধ্যে ব্রি-৫৮ ধান, ব্রি-৬৭ ধান, ব্রি-৬৯ ধান এ ব্লাস্ট রোগটি দেখা যায়নি। পাতা ব্লাস্ট, গিঁট ব্লাস্ট এবং শীষ ব্লাস্টÑ এ তিন ধরনের ব্লাস্ট রোগের মধ্য নেক বা শীষ ব্লাস্ট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। পাইরিককুলারিয়া ওরাইজি নামক এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ বছরে ধানের ব্লাস্ট রোগের মহামারির জন্য বিশেষজ্ঞরা ওই ছত্রাকের অনুকূল আবহাওয়াকে দায়ী করেন। এ রোগের জীবাণুর ১৬৭টি রেস বা প্যাথোটাইপ রয়েছে বলে জানা যায়। আবু নোমান ফারুক জানান, লিফ ব্লাস্টের আক্রমণে পাতায় চোখের মতো দাগ দেখা যায় এবং আক্রমণের মাত্রা প্রকট হলে অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়। লিফ ব্লাস্টের কারণে পাতায় খাদ্য তৈরি ব্যাহত হয়। আবার নোড বা গিঁট ব্লাস্টের কারণে গাছের গিটসমূহে পচন ধরে, আক্রান্ত স্থানে গাছটি ভেঙ্গে যায় এবং গিঁটের ওপরের অংশ মারা যায়। নেক ব্লাস্টের আক্রমণ ধানের শীষ বের হওয়ার পর পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত শীষের গোড়ায় পচে যায়। ফলে খাবার ও পুষ্টি উপাদান ধানে যেতে পারে না এবং ধান চিটা হয়। এ রোগের আক্রমণে শতভাগ পর্যন্ত ফলন বির্পযয় হতে পারে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, প্রচ- গরম, আগাম বৃষ্টিপাত, অনুকূল আবহাওয়া কারণে এ রোগটি প্রকোপ বেড়েছে। ফসলকে অনাকাক্সিক্ষত রোগবালাই এর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এখনই ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে পরামর্শ দেন ড. কামাল।
×