ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভর্তি সমস্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৯ মে ২০১৭

ভর্তি সমস্যা

এসএসসিতে কাক্সিক্ষত ফল লাভের পর যারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলেন তারাই এখন কাক্সিক্ষত বিদ্যাপিঠে ভর্তি হতে পারবে কি পারবে না সে চিন্তায় উদ্বিগ্ন। সারাদেশে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র ২০০টি আর যদি উচ্চ মাধ্যমিক পাঠদান করে এমন সব সরকারী কলেজও বিবেচনায় নেয়া হয় তাহলেও এ সংখ্যা দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩০০টি। এসব কলেজের আসন সংখ্যা সর্বোচ্চ দেড় লাখ অথচ দেখা যাচ্ছে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাই ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। অন্যদিকে জিপিএ-৪-এর বেশি পাওয়া শিক্ষার্থী ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। এর বিপরীতে মাদ্রাসা এবং কারিগরি বোর্ড থেকে দাখিল ও এসএসসি পাস করেছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৪ শিক্ষার্থী তাদেরও ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রত্যাশা তো থাকছেই। আমরা যদি শুধু বিজ্ঞান-বাণিজ্য-মানবিক এসব বিষয় নিয়ে এইচএসসি ভর্তির ব্যাপারটি সর্বাগ্রে বিবেচনা করি, তাহলে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩০৬ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা মাত্র দেড় লাখ! মানসম্মত কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ মেধাবীদের স্বাভাবিক ও সঙ্গত অভিলাষ। কারণ নিজেদের ভবিষ্যত সুন্দরভাবে গড়তে তাদের স্বপ্ন পূরণে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্য কোন বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন আজও মানসম্মত ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত গড়ে উঠেনি? রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মানুষের অভ্যন্তরের মানুষটিকে পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টাই শিক্ষা, শিক্ষা হলো বাইরের প্রকৃতি ও অন্তঃপ্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন। পাসের হার বাড়া যে সব সময় মান বাড়া নয় এ কথা তো শিক্ষাবিদরা বলছেন, তারা পাসের হারের দিকে নয় মানের দিকে গুরুত্ব দিতে বলছেন। সেটা যদি সম্ভব হয় তা হলে সত্যিকার মেধাবীর ভর্তি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমবে। যারা আজ শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে তাদের অনেকেই তো শিক্ষক হবেন তাদের প্রস্তুতিটা, শিক্ষাটা তাই হতে হবে সম্পূর্ণ এবং সঠিক। তাহলে তাদের দ্বারাই মানসম্মত শিক্ষাদান সম্ভব। প্রতিষ্ঠানের মাননির্ভর করে শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতা এবং শিক্ষকদের পাঠদানের ও উচ্চ নৈতিকতার চর্চার ওপর। ভাল শিক্ষক ভাল শিক্ষার্থী তৈরির আবশ্যিক শর্ত। এ কথা বলা অত্যুক্তি নয় যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অনলাইনে এসএমএসের মাধ্যমেও এখন ভর্তির আবেদন করা যায়, এ ব্যবস্থা দুশ্চিন্তা কমাতে শিক্ষার্থী অভিভাকদের সহায়তা করছে। এছাড়া বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তিচ্ছুদের জন্য আলাদা কার্যক্রম চালু করেছে বিশেষ করে হলিক্রস, নটর ডেম এবং সেন্ট জোসেফের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরে তো বটেই জেলা শহরেও মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। আমরা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশের কথা শুনেছি। ৯ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চলবে। ফল বের হবে ৫ জুন, ভর্তি কার্যক্রম শেষ হবে ২৯ জুন। শিক্ষাবান্ধব নীতিমালা যেন সত্যিই গ্রহণযোগ্য হয়, এই প্রত্যাশা। আসন সঙ্কট নেই, সঙ্কট মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, একথা উচ্চারিত হচ্ছে প্রতিবছর ফল প্রকাশের পর। পরিস্থিতির পরিবর্তন কাম্য। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ দূরীকরণের দায়িত্ব আমাদের সকলের।
×