ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে শাহীন শিক্ষা পরিবারের আবাসিক শিক্ষার্থীকে গরম রডের ছ্যাঁকা, শিক্ষক চাকরিচ্যুত

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৮ মে ২০১৭

টাঙ্গাইলে শাহীন শিক্ষা  পরিবারের আবাসিক  শিক্ষার্থীকে গরম  রডের ছ্যাঁকা, শিক্ষক চাকরিচ্যুত

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৭ মে ॥ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলে শাহীন শিক্ষা পরিবারের আবাসিক শিক্ষার্থীদের উপরে শিক্ষকের হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। নির্যাতনের প্রতিবাদ ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের অবহিত করার শাস্তি হিসেবে শুক্রবার বিকেলে ছাত্রদের দেয়া হয় পৈচাশিক কায়দায় গরম লোহার রডের ছ্যাঁকা। এমনি পৈচাশিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয় প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ আবাসিক ছাত্র। বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। তারপর থেকেই অভিভাবক মহলে তোলপাড় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শনিবার বিকেলে আহতদের চিকিৎসা দিয়েই জোর করে আবাসিক ভবনে ফিরিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এদিকে এ ঘটনায় শাহীন শিক্ষা পরিবার কর্তৃপক্ষ, রবিবার সকালে অভিযুক্ত শিক্ষক বাবুল হোসেনকে চাকরিচ্যুত করেছে। তবে এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি। আহত শিক্ষার্থীরা জানায়, শুক্রবার বিকেলে নবম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বাগ্বিত-া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টির আবাসিক ভবন পরিচালক বাবুল হোসেনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরিচালক বাবুল হোসেন তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে দশম শ্রেণীর ১০-১২ শিক্ষার্থীকে ভবনের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ও কক্ষ বন্ধ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় লাঠি দিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত অবস্থায় রুমে আটকে রাখে। এ সময় মারধরের প্রতিবাদ করায় বগুড়া জেলার তালোরা এলাকার সামাদ মিয়ার ছেলে প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণীর ছাত্র রিজভীকে ক্ষিপ্ত হয়ে পৈশাচিক কায়দায় লোহার রড আগুনে পুড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয়ার ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় একজন গুরুতর আহত অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা রিজভীসহ আহতদের উদ্ধার করে। পরে আহত ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বাকি আহত ৫-৬ জন শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের ভয়ে আবাসিক ভবন থেকে পালিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, প্রতিনিয়তই এ বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়ে আসছেন অভিযুক্ত এই শিক্ষক। এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহীন শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসাধীন ওই শিক্ষার্থীদের পাঁচ জনকে শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিদ্যালয় ভবনে ফিরিয়ে আনা হয়। এ বিষয়ে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, তাদের হাতে মাস শেষে হাজার হাজার টাকা তুলে দেয়া হয় ছেলে মারার জন্য নয়। মাসের টাকা দিতে একদিন দেরি হলেই প্রতিষ্ঠান থেকে বারবার ফোন করে তাগাদা দেয়া হয়। ছাত্রদের খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও তারা আমাদের অবহিত করেনি। ঘটনা শুনে আমরা তাদের কাছে ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেনি। আমরা এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। এ ব্যাপারে আবাসিক ভবনের একাধিক শিক্ষক বলেন, ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। তবে এত বড় ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের শাসন করতেই পারেন। তিনি ছাত্রদের সামান্য শাসন করেছেন মাত্র। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল শাহীন শিক্ষা পরিবারের পরিচালক আনোয়ার হোসেন আসলাম নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
×