ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩শ’ থেকে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে

নেপাল থেকে জলবিদ্যুত আমদানির বিষয় চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ মে ২০১৭

নেপাল থেকে জলবিদ্যুত আমদানির বিষয় চূড়ান্ত

রশিদ মামুন ॥ নেপাল থেকে জলবিদ্যুত আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত করছে সরকার। ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর নেপালের আপার করনালী বেসিনে ৯০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। সেখান থেকে বাংলাদেশ ৩০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত আমদানি করবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমদানি করা বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরে আলোচনার পর ভারতীয় এনটিপিসি বিদ্যুত ভেপার নিগাম লিমিটেডের (এনভিভিএন) সঙ্গে গত ১০ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এমওইউ অনুযায়ী পিডিবির সঙ্গে এনভিভিএনের সঙ্গে বিদ্যুত বিক্রয় চুক্তি (পিএসএ) সই হবে। পিএসএর ভিত্তিতে আপার করনালী হাইড্রোপাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে এনভিভিএনের মধ্যে একটি বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি করবে। জলবিদ্যুত আমদানির ঘটনা বাংলাদেশের জন্য নতুন বিষয়। এক্ষেত্রে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণের বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করলেও তা মিশ্র জ্বালানিতে উৎপাদিত। সঙ্গত কারণে বিদ্যুত আমদানির পরামর্শক হিসেবে জি থমাস (টম) ওয়েস্টকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। পিডিবি প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়োগ প্রদানের জন্য বিদ্যুত বিভাগে সুপারিশ পাঠিয়েছে। এতে বলা হচ্ছে পিডিবি এবং এনভিভিএনের মধ্যে পাওয়ার সেল এগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত করার পাশাপাশি মূল্য নির্ধারণ চূড়ান্ত করবে। দরকষাকষিতে পরামর্শক হিসেবে তারা পিডিবিকে সহায়তা করবে। এছাড়া তারা ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশের আইন, নীতি এবং গাইডলাইন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অবস্থান সম্পর্কে পিডিবিকে পরামর্শ প্রদান করবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দিকে নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী জনার্দন শর্মা ঢাকা সফরে আসেন। ওই বৈঠকে নেপাল-বাংলাদেশ জলবিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। দেশের বাইরে নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুত উৎপাদনে সরকার এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুত বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। জলবিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হওয়ায় এক্ষেত্রে ঋণ প্রাপ্তিও সহজ। সরকার এক বিলিয়ন ডলার নিজেদের মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করলে অন্তত সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, এর বাইরে নেপালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা হবে। কেন্দ্রে নেপাল এবং বাংলাদেশ সরকারের মালিকানা থাকবে। বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে একই পদ্ধতি নেপালের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা হবে। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু নেপালের জ্বালানিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছিলেন, এর মধ্য দিয়ে আমরা নেপালে জলবিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও বিদ্যুত আমদানির চেষ্টা করছে। নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এসব দেশে জলবিদ্যুত উৎপাদনের বিশাল সুযোগ রয়েছে। এজন্য ভারতেও সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ দেশটির ওপর দিয়েই বিদ্যুত আনতে হবে। ভারত এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে রাজি আছে বলে জানান তিনি। নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন নেপাল এবং ভুটানের উদ্যোগের সঙ্গে মিয়ানমারকে যুক্ত করতে পারলে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশটিতে আরও ৪০ হাজার মেগাওয়াটের জলবিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার এরই মধ্যে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছে। যারা এসব বিষয়ে আগে থেকে পারদর্শী। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। তবে চীনা কোম্পানিগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েকটি চুক্তি করেছে। প্রসঙ্গত নেপাল এবং ভুটানে বিনিয়োগ করতে নতুন একটি বিদ্যুত কোম্পানি করতে যাচ্ছে সরকার। নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্র করা হবে প্রয়োজনে তৃতীয় কোন অভিজ্ঞ কোম্পানি থাকবে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে। বিদ্যুতের একটি অংশ বাংলাদেশ পাবে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনাতেও ছয় হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত আমদানির লক্ষ্য রয়েছে।
×