ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদ সদস্যদের প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সজীব ওয়াজেদ জয়

সোশ্যাল মিডিয়ায় উন্নয়ন প্রচার ও অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ মে ২০১৭

সোশ্যাল মিডিয়ায় উন্নয়ন প্রচার ও অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, কাজ করলে মানুষ ভোট দেবে- এ কথা ভেবে এখন ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বাস্তব কথা, এখন প্রচারের যুগ। নিজেদের ভাল কাজের প্রচারের মাধ্যমে অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসরদের সরকারবিরোধী অপপ্রচার রুখতে এবং উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে তরুণদের কাছে টানতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রবিবার ধানম-িতে আওয়ামী লীগের নতুন নির্বাচনী কার্যালয়ে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ আয়োজিত এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পুরো কর্মশালায় সহযোগিতা দিচ্ছে আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (সিআরআই)। প্রথম দিনের কর্মশালায় আওয়ামী লীগ দলীয় ৬০ সংসদ সদস্য অংশ নেন। আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার দু’দিনের কর্মশালায় বাকি সংসদ সদস্যদের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। কর্মশালার উদ্বোধন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির ‘ভিশন-২০৩০’- ঘোষণার উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১-এর দেখাদেখি অন্যরাও (বিএনপি) নাকি ভিশন ঘোষণা করবে। এটা লোক দেখানো, জনগণের সঙ্গে ভাওতাবাজি। তাদের লক্ষ্য হাওয়া ভবনের মতো ‘খাওয়া ভবন’-এর আরেকটি ভিশন। কর্মশালী বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, পঁচাত্তরের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও এই অপ্রপচার দেখেছি। এত কাজ করার পরও সরকারকে অপপ্রচার সহ্য করতে হয়। সুতরাং কেবল কাজ করলে হবে না। এই অপপ্রচার মোকাবেলার জন্য আমাদেরও প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। মানুষের জন্য কী কাজ করা হয়েছে তার প্রচার করতে হবে। মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে আমরা তাদের জন্য কী কাজ করছি, আওয়ামী লীগ কী করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে তরুণ প্রজন্মকেও কাছে টানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল মানুষের কাছে শুনেই নয়, আমরা জরিপ করেও যেটা দেখি- আমাদের তরুণরা আর খবরের কাগজ খুব একটা পড়ে না। এটা অবশ্য একদিক দিয়ে আমাদের জন্য ভাল। কেননা খবরের কাগজে আমাদের ‘সুশীল বাবুদের’ মতামতই কেবল দেখা যায়। তো লাইকলি আমাদের তরুণরা ওসব পড়েই না, ওসব পাত্তা দেয় না। তরুণরা টিভি দেখে। তবে সবচেয়ে বেশি খবর তারা পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তারা বেশি অংশগ্রহণ করে। সেই কারণেই কিন্তু আমাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমরা দেশের জন্য কাজ তো করছি। এসব যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা তুলে ধরতে পারি, তাহলে কেবল আজকের ভোটাররা নয়, ভবিষ্যতের ভোটাররাও আওয়ামী লীগের ভোটার হয়ে থাকবে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে জয় বলেন, ‘সিনিয়ররা অনেকে নিজেদের প্রচার করতে চান না। সৎ মানুষ নিজেদের ঢোল কিংবা প্রচার করতে লজ্জা পান। তবে লজ্জা পেলে হবে না, প্রচার করতে হবে। প্রতিদিন সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে জয় বলেন, পারলে রোজ একটা করে পোস্ট দেবেন। দিনে দুই-তিনটা করেও দিতে পারেন। আমরা যেগুলো পোস্ট দেব, সেগুলো শেয়ার করেন। এগুলো কিন্তু ভাইরাল হয়ে যায়। আর একাউন্ট কীভাবে ভেরিফায়েড করাতে হয়- তা এমপিদের শিখিয়ে দেয়া হবে। তখন ওই এ্যাকাউন্ট তাদের অফিসিয়াল এ্যাকাউন্ট হয়ে যাবে। মানুষের কাছে আমাদের যা বলার, আমাদের পরিশ্রম এবং আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মোকাবেলা- এটা আমরা আরও মানুষের কাছে, আরও বেশি তরুণদের কাছে পৌঁছে দিতে পারব এভাবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জয় আরও বলেন, ‘জানি, টেকনোলজি ব্যবহার করাটা অনেকের জন্য মাঝে মধ্যে একটু কঠিন হয়। আপনারা চেষ্টা করবেন, আপনাদের যতটুকু সম্ভব আমরা সহযোগিতা করব। আর আপনারা যদি কমফোর্টেবল ফিল না করেন, যদি তাও সাহস না পান, আমি অনুরোধ করব, একজন পিএস নিয়ে নেন, যার কাজ থাকবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেয়া।’ তিনি বলেন, ‘যারা জুনিয়র, তারা কিন্তু এটাতে অভ্যস্ত। আমার চেয়েও বেশি ওস্তাদ। পলকের (তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে তো পারিই না। ও দিনে যে পরিমাণ ফেসবুকে পোস্ট দেয়, ওর সঙ্গে কেউ কুলিয়ে উঠতে পারে না।’ চলমান পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞ দেখতে যাবেন জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, কেবল কাজ করলে হবে না, মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে- আমরা তাদের জন্য কী করছি। বিদ্যুতকেন্দ্র নিজে নিজে নির্মিত হয় না, পদ্মা সেতুও এমনিতেই তৈরি হয়ে যায় না। এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তে হচ্ছে। আমরা এর টাকা যোগাড় করে দিয়েছি। আমাদের সেতুমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে একটু আগে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘তুমি একদিন পদ্মা সেতুর কাজ দেখতে আস।’ যাব, অবশ্যই যাব। কর্মশালার উদ্বোধন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ কিছু করলেই তার দেখাদেখি তাদেরও কিছু করতে হবে। এটি রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি করে সক্রিয় হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। তাকে ঘিরে আমাদের হাওয়া ভবন, খাওয়া ভবন কিংবা খোয়াব ভবন নেই। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বিএনপি সজীব ওয়াজেদ জয়কে ভয় পায়। ‘নেতাদের এখনই নির্বাচনমুখী হতে হবে’ পরে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। দলীয় নেতাদের এখন থেকেই নির্বাচনমুখী ও আগামী নির্বাচনে দলের জয় সুনিশ্চিত করতে কাজে নেমে পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন দল ও দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ নেতাদের এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য কাজে নেমে পড়তে হবে। দলীয় সংসদ সদস্যদের এলাকায় গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে আর কোন অবস্থায়ই অনির্বাচিত কোন সরকারের ক্ষমতায় আসার কোন সম্ভাবনা নেই। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ এক থাকলে তাদের কেউ হারাতে পারবে না। দেশে যে উন্নয়ন চলছে, তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে জনগণের মন জয় করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হবে। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় একটি দলই দীর্ঘদিন সরকারে থাকায়, এসব দেশের বিপুল উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আর সেজন্য বাংলাদেশে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। জয় বলেন, বিএনপি কখনও গণতন্ত্রের রাজনীতি করেনি। তারা ফের ক্ষমতায় এলে অতীতের মতো গুম খুন, ধর্ষণ ও জঙ্গীবাদ আবারও ফিরে আসবে। সেজন্যই নৌকার বিজয়, আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দিয়ে জয় বলেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ বন্ধ হবে। কেউ ব্যালট ছিনতাই ও কারচুপি করতে পারবে না। সার্বিকভাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা আসবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ইভিএম পদ্ধতির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি। আগামী ২০ মে জেলা নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকার জন্য ওবায়দুল কাদেরের আহ্বানের জবাবে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তিনি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। দলের কর্মী হিসেবেই কাজ করবেন তিনি। তরুণ ও নারী ভোটারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে টানতে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান সজীব ওয়াজেদ জয়। বৈঠকে সংসদ সদস্যদের জন্য আয়োজিত কর্মশালা দলের নেতাকর্মীদের জন্যও আয়োজনের পরামর্শ দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। এছাড়া দলের পক্ষে নেয়া নেতাকর্মীদের ডাটাবেইজ কার্যক্রম শেষ করা এবং এজন্য জেলা নেতাদের রেজিস্ট্রেশন ও ই-মেইল আইডি তৈরিসহ অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সম্পাদকম-লীর সদস্য ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আবদুস সাত্তার, দেলোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সদস্য এসএম কামাল হোসেন ও গোলাম রাব্বানী চিনু, আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
×