ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই ॥ পদ্মা সেতুর নদী শাসন

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৮ মে ২০১৭

শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই ॥ পদ্মা সেতুর নদী শাসন

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর কাজ প্রতিটি ধাপেই দ্রুত এগোচ্ছে। মাওয়ার উজানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১ কিমি দীর্ঘ প্রতিরক্ষামূলক নদীশাসন শেষ হচ্ছে চলতি মাসে। এদিকে বেয়ারিং পরীক্ষা দেখে বিশেষঞ্জরা চীন থেকে ফিরেছেন। এছাড়া শনিবার পদ্মা সেতুর বিষয়ে দুই ধাপে গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূল সেতু দৃশ্যমান এখন সময়ের ব্যাপার। চলতি মাসে ৩৭ নম্বর পিলারের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া ৩৮ নম্বর পিলারের কাজও বেশ এগিয়েছে। এ দু’পিলারে ওপরই বসবে প্রথম স্প্যানটি। এদিকে নদীতে, তীরে এবং সংযোগ সেতুতে সবখানেই হরদম পাইল স্থাপন হচ্ছে। পাইল স্থাপনের এ বিশেষ শব্দ ছন্দে ছন্দে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। ধুম ধুম শব্দ এখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে খুব পরিচিত। পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞের বিশেষ শব্দে ঘুম ভাঙ্গে, এ শব্দের ছন্দে ঘুমাতে যায় এখানকার মানুষ। এ যেন এক গর্বে আত্মমর্যার শব্দ। যে শব্দ এখন নতুন বীরত্বগাথা পদ্মা সেতু বুননের কাজ চলছে। দুই ধাপে শনিবার সেতুটির মাসিক অগ্রগতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ প্যানেল এবং প্রকল্প পরিচালক ও পরামর্শকসহ কয়েকজন এরই মধ্যে চীনে সেতুর বেয়ারিং পরীক্ষা প্রত্যক্ষ করেছেন। এ সভায় এসব বিষয়সহ সেতুর সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে নদীশাসনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। জজিরা প্রান্তে ১২৫ কেজি এবং ৮শ’ কেজি ওজনের বস্তা প্রায় ৩শ’ মিটার স্থানে ফেলা শেষ। এখন দশমিক ৯ মিটার থিকনের পাথর ফেলা হচ্ছে। বেজ ব্লকের আড়াইশ’ মিটার জায়গার মধ্যে সিসি বক্ল বিছানো হয়েছে। আর ফ্লন্ট স্লপ ব্লক পেছানোর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পানির নিচে জিও টেক্সটাইল ফিল্টারের (কম্বলের মতো) ইট বিছিয়ে এরপর ওপর সিসি ব্লক বিছানো হবে। কারণ সিসি ব্লকে কম্বল ছিঁড়ে যেতে পারে। জাজিরা প্রান্তের ড্রেজিং ডিসপোজাল ফেলার জন্য প্রায় ১২শ’ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সেতুর রেল চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তি না হওয়ায় এখনও শুরু করা যায়নি পদ্মা বহুমুখী সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ। চলতি মাসেই স¤পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে দুদেশের মধ্যে এ চুক্তি। সেতু উদ্বোধনের দিনই রেল চলাচল শুরু করার যে পরিকল্পনা ছিল, যথাসময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় তা এখন অনেকটাই কঠিন হবে। নানা প্রাকৃতিক ও কারিগরি চ্যালেঞ্জ জয় করে নদীতে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। ২০১৫ সালের শেষদিকে শুরু হয় আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা। নক্সা অনুযায়ী, সেতুর নিচের অংশে রেল এবং ওপরের অংশে চলবে অন্য যানবাহন। ফলে একই সময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলকেও রেল সংযোগের আওতায় আনা হবে। প্রথম পর্যায়ে রেলপথ নির্মাণের জন্য ৩৬১ হেক্টর জমি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে শরীয়তপুর এবং মাদারীপুরে জমি অধিগ্রহণ স¤পন্ন হলেও অন্য জেলাগুলোতে অধিগ্রহণের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নিয়মিত সমন্বয় হচ্ছে মূল পদ্মা সেতুর কাজের সঙ্গেও। এ রেল প্রকল্পের ফলে শুধু যশোর পর্যন্ত রেললাইনই যোগ হবে না, একই সঙ্গে ঢাকার সঙ্গে মংলা এবং পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের রেল যোগাযোগের প্রাথমিক দুয়ার খুলবে। অগ্রগতি সভা পদ্মা সেতুর মাসিক অগ্রগতি সভা হয়েছে। শনিবার মাওয়ার পার্শ্ববর্তী দোগাছি সার্ভিস এরিয়ার সভা কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এ সভা হয়। দু’ধাপে অনুষ্ঠিত এ সভায় নির্মাণাধীন দেশের বৃহত্তর সেতুটির খুঁটিনাটি নানা বিষয় উঠে আসে। সকালের পর্বে মূল সেতু নিয়ে সভা হয় এবং বিকেলের পর্বে নদীশাসন নিয়ে সভা হয়। দু’পর্বেই সভাপতিত্ব করেন পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম। সভায় দেয়া তথ্যানুযায়ী মূল সেতুর অগ্রগতি প্রায় ৪২ শতাংশ। তবে এ সভায় এ অগ্রগতি থাকার কথা ছিল ৪৮ শতাংশ। নানা চ্যালেঞ্জের কারণে কিছু পিছিয়ে থাকলেও তা ওভারকাম করার লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ চলছে বলে সভায় আলোচনা হয়। এ সভায় প্রায় ৪০ জন সংশ্লিষ্ট পরামর্শক অংশ নেন। এছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ জন প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ অংশ নেন এ সভায়। সভায় চীনে পরীক্ষা করা বেয়ারিং সম্পর্কেও আলোচনা হয়। এছাড়াও মাওয়ায় ৭টি স্প্যান জোড়া লাগানোর কাজ এবং চীনে তৈরি হওয়া ১৩টি স্প্যান ছাড়াও আরও ৮টি স্প্যান তৈরির কাজ শুরু বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী নদীতে ৫৮টি পাইল স্থাপন হয়েছে। এবং একেবারে তীরের সর্বশেষ ৪২ নম্বর ট্রানজিশন পিলারে ১৬টির মধ্যে ১৫টি পাইলই স্থাপন হয়ে গেছে। এ নিয়ে মূল সেতুর পাইল স্থাপন হলোÑ ৭৩টি। এছাড়া জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সেতুর ৯০টি পাইল স্থাপন হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের ট্রানজিশন পিলারের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রথম পিলার মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর ট্রানজিশন পিলারের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। তবে এ পিলারটির চূড়ান্ত ডিজাইন এখনও অনুমোদন হয়নি। এটি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এছাড়া পদ্মা সেতুর নদীশাসনের অগ্রগতি প্রায় ৩০ শতাংশ। সভায় নদীশাসনেরও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট পরামর্শক, ঠিকদারিপ্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীগণ এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদীশাসনের নির্বাহী প্রকৌশলী অংশ নেন। সভায় জানানো হয় এ সময়ে নদীশাসন প্রায় ৪২ শতাংশ থাকার কথা ছিল। কিন্তু চ্যালেঞ্জের কারণে তা সম্ভব না হলেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। সভায় উপস্থিত এক দায়িত্বশীল জানান, নদীর তলদেশে পানির নিচে স্লোভ রেডি করতে বিলম্ব হচ্ছে। বড় ড্রেজারে মাটি কাটলে বেশি কাটা হয়ে যাচ্ছে। আর ছোট ড্রেজারে এত গভীরে মাটি কাটতে পারছে না। তাই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে ক্রমেই কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
×