ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সম্প্রীতির বন্ধনে শুরু হলো এশিয়ান থিয়েটার সামিট

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ মে ২০১৭

সম্প্রীতির বন্ধনে শুরু হলো এশিয়ান থিয়েটার সামিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রীতির বন্ধনে শুরু হলো দুই দিনের এশিয়ান থিয়েটার সামিট। আয়োজনের সূচনা সমীর বাউল ও তার দলের শিল্পীদের গাওয়া গানের সুরে। সম্মিলিত কণ্ঠে গীত হয় ‘সাধের লাউ, বানাইলো মোরে বৈরাগী’ ও ‘মিলন হবে কতদিনে’ শিরোনামের দু’টি গান। আর এই গানের সুরে বিদেশী নাট্যকর্মীদের সঙ্গে নাচে-গানে মেতে উঠলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, লিয়াকত আলী লাকী, অধ্যাপক আবদুস সেলিম। এমন সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যময় পরিবেশে শুক্রবার থেকে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু এশিয়ার নাট্যকর্মীদের এই সম্মেলন। এশীয় অঞ্চলের মঞ্চদল, শিল্পী ও গবেষকদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল এ্যামেচার থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)-এর এশিয়ান রিজিওনাল সেন্টারের উদ্যোগে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন আয়োজন করছে শিল্পকলা একাডেমি ও পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন। যার পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সকালে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ব আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, সিঙ্গাপুরের চাইনিজ অপেরা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চুয়া সু পং, বিশ্ব আইটিআই- বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, নাট্যকার আবদুস সেলিম এবং নাট্যজন এস এম মহসীন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় সভাপতিত্ব করেন আইএটিএ’র এশীয় অঞ্চলের সভাপতি ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলিকা চন্দ্র, ভারতের ডোংরে ইয়োৎসোনা সোহাস, নেপালের প্রেম পাওডেল, লাওসের পাংনা ফ্রানখোনে। উদ্বোধনের আগে নৃত্য পরিবেশন করেন সাতটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নৃত্যশিল্পীরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর উগ্রবাদিতার বিপরীতে মঞ্চনাটক একটি শক্তিশালী অস্ত্র। অবিবেচকদের অমানবিক কর্মকা-ের বিপরীতে মঞ্চনাটককে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে আমাদের। সময়ের প্রেক্ষাপটে এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নাট্যদলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ সেভাবে স্থাপিত হয়নি। আমাদের এই ক্ষেত্রটিতে আরও বেশি আলোচনা করতে হবে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, মঞ্চনাটক মূলত সংলাপনির্ভর। এই সংলাপের মাধ্যমেই আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারি। চুয়া সু পং বলেন, এশীয় দেশগুলোর জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে। যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমরা সেই কঠিন চ্যালেঞ্জকেও জয় করতে পারি। উদ্বোধন শেষে চা চক্রের সঙ্গে ছিল সমীর বাউল ও তার দলের পরিবেশনা। এরপর ‘এশিয়ান থিয়েটার : ট্র্যাডিশন এ্যান্ড ট্রেন্ড’ বিষয়ে অধ্যাপক আবদুস সেলিম, ‘ইরানিয়ান ফিল্ম এ্যান্ড থিয়েটার’ বিষয়ে ইরান কালচারাল সেন্টারের কালচারাল কনস্যুলার সাঈদ মুসা হোসেইনি ও সিঙ্গাপুরের চুয়া সু পং ‘সাউথইস্ট এশিয়া এ্যান্ড ইস্ট এশিয়ান ট্র্যাডিশনাল থিয়েটার : ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন। এর সঙ্গে ছিল মুক্ত আলোচনা। এর পর্বটি সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার। এর পর জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় লোকনাট্যদলের ‘রথযাত্রা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। মধাহ্নভোজের পর ‘থিয়েটার অব দ্য মিডল ইস্ট : এ্যান ওভারভিউ’ বিষয়ে মফিদুল হক ও ‘এশিয়ান পাপেট থিয়েটার’ বিষয়ে থাইল্যান্ডের স্টেফেন হাওয়ার্ড থমাশ প্রবন্ধ পাঠ করেন। মুক্ত আলোচনাসহ এ পর্বটি সভাপতিত্ব করেন লিয়াকত আলী লাকী। এর পর ‘ফর্ম এ্যান্ড কনটেন্ট ইন ট্র্যাডিশনাল বাংলা থিয়েটার’ বিষয়ে ড. আফসার আহমেদ ও ‘এক্সপেরিমেনশন উইথ ট্র্যাডিশনাল আর্ট ফরমস ইন কনটেম্পরারি আরবান থিয়েটার : পেটেনসিয়ালস এ্যান্ড চ্যালেঞ্জড’ বিষয়ে সাংবাদিক এরশাদ কমল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন আতাউর রহমান। প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্যে নাট্যশালার ৩ নম্বর মহড়া কক্ষে ‘অবহেলায় মৃত্যু আর নয়’ শীর্ষক পরিশেনায় অংশ নেয় পিএলটির শিল্পীরা। এর পর স্টুডিও থিয়েটার হলে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল সঙ্গীতানুষ্ঠান. কুড়িগ্রামের কুশান যাত্রা, কিশোরগঞ্জের রং জারি এবং নড়াইলের অস্টক যাত্রা পরিবেশিত হয়। এর সঙ্গে লাওসের পাংনা ফ্রানখোনের পরিচালনায় লাও রামায়ানা দি ভিয়েনতিয়েন পরিবেশন করে ক্ল্যাসিকাল নৃত্য। এছাড়াও থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার শিল্পীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনায় অংশ নেয়। সব শেষে জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে লোকনাট্যদলের ‘সোনাই মাধব’র শততম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এটির নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। আজ শনিবার আয়োজনের দ্বিতীয় দিন সকালে বিদেশ থেকে আগত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা তাদের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরবেন। পাশাপাশি তারা অংশ নেবেন সংস্কৃতিবিষয়ক এক তুলনামূলক আলোচনায়। এদিন ‘ইন্ডিজেনাস থিয়েটার অব দ্য সার্ক রিজিওন: নিউ ডিরেকশনস’ শিরোনামে আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নাট্যব্যক্তিত্ব অংশুমান ভৌমিক। এশিয়ার নৃত্য নিয়ে মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করবেন লুবনা মরিয়ম। মার্গ নাট্যের প্রায়োগিক কলাকৌশল আলোকপাত করবেন ভারত থেকে আগত পিয়াল ভট্টাচার্য। সবশেষে এ সম্মেলন শেষে থিয়েটার বিশেষজ্ঞদের প্রবন্ধ নিয়ে ‘থিয়েটার অব এশিয়া’ বিষয়ক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে।
×