ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্ছেদ করলেও ফুটপাথ ফের চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৬ মে ২০১৭

উচ্ছেদ করলেও ফুটপাথ ফের চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে

আরাফাত মুন্না ॥ একদিকে হকার উচ্ছেদ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, পেছনেই দোকানের পসরা সাজিয়ে বসে যাচ্ছেন হকাররা। একবার বসেন আবার উঠেন, রাজধানীতে সিটি কর্পোরেশন ও হকারদের মধ্যে এভাবেই চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। গত দুই মাসে গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ গেট, জিপিও, দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা দিয়ে হকার উচ্ছেদ করলেও আবারও ফুটপাথ হকারদের দখলে চলে যায়। গত দুই বছরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) বেশ কয়েকবার ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। হকার উচ্ছেদে মাঠেও নেমেছিল সংস্থা দুটি। কয়েকবার তাদের উচ্ছেদ করার পরও স্থায়ী ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি ঘোষণা অনুযায়ী, ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদে নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। টানা কয়েকদিন ফুটপাথে থাকা হকারদের দোকানগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়েও দেয়া হয়েছিল। ওইসময় পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে হকারদের কয়েকবার সংঘর্ষ বাধে। প্রথমদিকে মাস খানেক পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিএসসিসির কর্মীরা মাঠে খুব তৎপর ছিল। এরপর এই কার্যক্রমে পুলিশকে আর দেখা যায়নি। পরে উচ্ছেদ কার্যক্রমকে নিয়মিত রাখতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়োগ দেয় ডিএসসিসি। ফুটপাথ থেকে হকার সরাতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীটিকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা গ্রুপে ১০ থেকে ১৫ সদস্য রয়েছে। এই গ্রুপগুলো প্রতিদিনই হকার উচ্ছেদ অভিযানে নামে। তবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী যখনই রাস্তায় নামে হকাররা তখনই মার্কেটের ভেতর চলে যায়। আবার চোখের আড়াল হলেই ফুটপাথ দখল করে বসে তারা। তবে আগে দোকান সাজাতে হকাররা কাঠের চৌকি ব্যবহার করলেও এখন কাপড়ের বিছানা ও ঝুড়িতে দোকান সাজায় তারা। ফলে যখনই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী আসে তখনই দোকান গুটিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ পায় হকাররা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বায়তুল মোকররমের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ গেট এলাকা পুরনো রূপে ফিরে এসেছে। গত সোমবার বেলা ১১টায় এসব এলাকায় দেখা যায় কয়েকশ’ দোকান। হকাররা ভরা মনে শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি, কসমেটিকস, বইয়ের দোকানসহ কয়েকশ’ সাড়ি সাড়ি দোকানে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। গুলিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, আপেল, আঙ্গুর ও কমলা ব্যবসায়ীরা মনের আনন্দে দোকানের পসরা সাজিয়ে বসে গেছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কাপড়, বই বিক্রেতাসহ অসংখ্য দোকানি। শুধু এই দুই জায়গায় নয়, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ থেকে গুলিস্তান হকার্স মার্কেট এলাকার রাস্তার দুই ধারের একই অবস্থা। আবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে জিপিও হয়ে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ফুটপাথের অনেকাংশ চলে গেছে হকারদের দখলে। রাজউকের উত্তর পাশ থেকে শুরু করে দিলকুশা রোড পর্যন্ত ভ্যান দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন কাপড় বিক্রি করতে দেখা গেছে। কোথাও পলিথিন বিছিয়ে, আবার কোথাও ঝুড়িতে দোকান সাজিয়ে বসেছে হকাররা। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের ফুটপাথের ব্যবসায়ী সুজন রায় বলেন, পাঁচ বছর ধরে দোকান করছি। পুনর্বাসন না করে মেয়র আমাদের উচ্ছেদ করেছেন। আমরা এখন কি করে খাব? পেটের টানে দোকান নিয়ে বসেছি। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে ধাওয়া দেয়, তখন দোকান গুটিয়ে মার্কেটের ভেতরে চলে যাই। দোকান না বসালে তো আর খাবার জুটবে না, বলেন তিনি। গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের ফুটপাথে ফল বিক্রি করেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এই দোকানের আয় দিয়ে দুটি পরিবার চলে। দোকান বন্ধ থাকলে ছেলেমেয়ে না খেয়ে থাকবে, পাশাপাশি বাসা ভাড়া ও স্কুলের খরচ দিতে পারব না। সিটি কর্পোরেশন থেকে উচ্ছেদ করা হবে জেনেও দোকান নিয়ে বসেছি। এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর এক সদস্য বলেন, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রতিদিনই আমরা হকার উচ্ছেদ কার্যক্রমে অংশ নেই। নিয়মিতই তাদের ফুটপাথ থেকে সরিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু তাদের সরানোর কিছুক্ষণ পর আবার তারা বসে যায়। আমরা আর কি করব। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, যে কোন সফলতা হঠাৎ করেই পাওয়া যায় না, অপেক্ষা করতে হয়। তবে বলব, সিটি কর্পোরেশন এ ক্ষেত্রে অনেকটাই সফল। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, হকাররা রাস্তায় বেশি সময় অবস্থান করতে পারে না। কিছু সময় বসলেও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী উঠিয়ে দেয়। সিটি কর্পোরেশন এই বিষয়ে খুব তৎপর। উল্লেখ্য, হকারদের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি নগর ভবনের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও হকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ১৫ জানুয়ারি থেকে কর্মদিবসে গুলিস্তান, মতিঝিল ও আশপাশের এলাকায় ফুটপাথে দিনের বেলা হকার বসতে দেয়া হবে না।
×