ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ আনসার আল ইসলামের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ প্রধান গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ মে ২০১৭

নিষিদ্ধ আনসার আল ইসলামের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ প্রধান গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান আশফাক-উর-রহমান অয়নকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। গ্রেফতারকৃত এই জঙ্গী ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত মেজর জিয়ার সরাসরি শিষ্য। ব্লগারদের ই-মেইল আইডি হেকড করে তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করত। সেই তথ্য মোতাবেক হত্যা করা হতো তাদের। মঙ্গলবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, সোমবার রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে আশফাক-উর-রহমান অয়ন ওরফে আরিফ ওরফে অনিককে গ্রেফতার করা হয়। অয়ন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য ও আইটি বিশেষজ্ঞ। তার হেফাজত থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল সেট, আল আকসা মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত ওসামা বিন লাদেন রচিত জিহাদী প্রবন্ধ, আনোয়ার আল আওলাকির জিহাদী বক্তব্য সংবলিত একটি লেখা ও ব্লগার হত্যাকা- সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ রুটিন উদ্ধার হয়েছে। ২০১৪ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে পড়াকালীন এবিটির সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হয়। ২০১৫ সালে সে আনসার-আল-ইসলাম (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম)-এর সামরিক বিভাগে যোগদান করে। এবিটির বহুল আলোচিত মেজর জিয়ার অধীনে ও পরিচালনায় রাজধানীর উত্তরায় ও পল্লবীর কালাপানি এলাকায় ব্লগারদের হত্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেয় অয়ন। পরবর্তীতে সে আনসার-আল-ইসলামের সামরিক বিভাগের আইটি শাখার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়। মনিরুল ইসলাম জানান, এবিটির তিনটি বিভাগ হলো: দাওয়া বিভাগ, আশকারী (সামরিক) বিভাগ ও মিডিয়া শাখা। সে সামরিকভাবে প্রশিক্ষিত হলেও অয়ন আইটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ। সে এই জঙ্গী সংগঠনের প্রকাশনা ও প্রচারণার দায়িত্বে ছিল। এবিটির যেসব লেখক-ব্লগারকে টার্গেট করত অয়ন তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে তাদের ব্যাপারে দরকারী সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করত। এসব তথ্য সে সামরিক শাখায় দিত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মনিরুল ইসলাম বলছেন, মুসলিমদের রক্তের পবিত্রতা, স্পেন বিজয়ে তারিক বিন জিয়াদের বক্তব্য, আমেরিকার জুলুমসহ ধর্মীয় উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধকরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখনী বাংলায় অনুবাদ করে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করত সে। সে ব্লগারদের আইডি হ্যাকিংসহ তাদের সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে টার্গেট চিহ্নিতকরণের কাজে জড়িত ছিল। মেজর জিয়ার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘দাওয়া ইল্লাহ’ ওয়েব পেজে ধর্মীয় উগ্রবাদ বক্তব্য সংবলিত বিভিন্ন আর্টিকেল সে নিয়মিতভাবে আপলোড করত। অয়নের কাছ থেকে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের উগ্রবাদ সম্পর্কিত জিহাদী প্রবন্ধ ও শেখ আনোয়ার আওলাকির জিহাদী বক্তব্য সম্পর্কিত লেখাও উদ্ধার হয়েছে। সে নিজেও অনুবাদ করত। এর পর সে তা প্রচার করত। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তাদের তথ্যমতে আনোয়ার আওলাকি আরব উপদ্বীপে আল কায়দার সক্রিয় নেতা ছিল। সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত জঙ্গী নেতা মেজর জিয়ার সঙ্গে কয়েক মাস আগে ঢাকার বাইরে তার দেখা হয়েছিল। দু’মাস আগে তাদের ফের যোগাযোগ হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের বিষয়ে অয়ন এখনও কিছু জানায়নি। সে সিলেট থেকে ঢাকায় আসছিল একজনের সঙ্গে দেখা করতে। এসময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এবিটি বর্তমানে সদস্য সংগ্রহ ও সংগঠন গোছানোর কাজে ব্যস্ত। সংগঠনের অনেকের ছবি ও তথ্য পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জঙ্গী সংগঠনটির সামরিক কমান্ডার কারা তা জানতে অয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অতীতের কোন হত্যাকা-ের সঙ্গে সে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি অয়ন কোন হত্যাকা-ে জড়িত থাকে, তবে সেই হত্যাকা-ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, অয়নকে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করে ভাটারা থানায় দায়েরকৃত মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয় পুলিশের তরফ থেকে। আদালতে অয়নের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। রিমান্ড আবেদনে অয়নের দুটি স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটি নরোত্তমপুর, চৌমুহনী নোয়াখালী এবং অপরটি মুন্সীপাড়া, বন্দর থানা, চট্টগ্রামে। ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমার হুই আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
×